বিজ্ঞাপন

‘প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না’

April 28, 2021 | 8:04 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, করোনা মহামারির রূঢ় বাস্তবতা আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা যতই অর্থ-সম্পদে বিত্তশালী হই না কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা যায় না। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপকরণগুলো আসে প্রকৃতি থেকে। আমরা বুঝতে পেরেছি প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডারকে ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৮ এপ্রিল) ধরিত্রী দিবস ২০২১ উপলক্ষে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত ‘রোড টু গ্লাসগো: আমাদের পৃথিবীর পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু সুরক্ষা’ শিরোনামের ভার্চুয়াল সংলাপে ঢাকার সরকারি বাসভবন থেকে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আজ আমরা যখন বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন করছি, তখন করোনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আরও বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূখণ্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন।’ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলেন, ‘সামাজিক বনায়নসহ বনায়ন কার্যক্রম ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের ফলে দেশে বর্তমানে মোট বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটিকে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার। দেশে বর্তমানে বনজ সম্পদের ঘাটতি পূরণ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বন অধিদফতর ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বনায়ন কার্যক্রম, উপকূলীয় বনায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, সামাজিক বনায়ন, বনায়ন কার্যক্রমে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।’

মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে, যা বিশ্ব দরবারের স্বীকৃতি পেয়েছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে বিশ্ববাসীকে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও গ্রিন হাউজ নির্গমন কমিয়ে আনতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষি বনায়ন, বসতবাড়ি বনায়ন, রাস্তার ধারে বনায়ন, জবরদখল করা জমিতে অংশগ্রহণমূলক বনায়ন, উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বনভূমির অবক্ষয় হ্রাস এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা এবং উত্তর-পুর্বাঞ্চলের হাওর এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে আমাদের দেশের ১৭ ভাগ ভুমি পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ তাদের আবাসন হারাতে পারে, হারাতে পারে তাদের আজন্মের পরিচিত গ্রাম ও অসংখ্য স্মৃতি। অথচ এই দরিদ্র ও নিরীহ মানুষগুলো নিজেরা কোনোভাবেই জলবায়ু-সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশগুলো। তাই এর দায় তাদের নিতে হবে। একা বাংলাদেশের পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। ধনী যেসব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য মূলত দায়ী, আমরা আশা করি সেসব দেশ বাংলাদেশ ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পাশে এসে দাঁড়াবে।’

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রশমন ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলনের একটি বিধান রাখা হয়েছিল। তবে এখনো এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় যোগদানের মধ্যে বিশ্ব নেতারা ‘জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে’ দৃঢ় ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ ব্যক্ত করায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে (জলবায়ু তহবিল সম্পর্কিত ১০০ বিলিয়ন ডলার) দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেখতে পেয়ে আশাবাদী।’

বিজ্ঞাপন

মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় অবদান রাখার পাশাপাশি বিশ্বজনীন আলোচনায় নিজের স্বার্থ সংরক্ষণে সদা সচেষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ। ঝড়ের তীব্রতা কমানোসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরির কাজ চলমান আছে। ইতোমেধ্যে ৬০ লাখ বাংলাদেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা হয়েছে। তারপরও আমরা ১ কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি, আর সেজন্য আমাদেরকে পরিবেশগত মূল্যও দিতে হচ্ছে।’

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য দক্ষতা ও সাফল্য প্রদর্শনের সুবাদে সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বাংলাদেশ। জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে অসহায় ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সবধরনের সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত ১০০ বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুমোদিত এবং গৃহীত হয়েছে। তাছাড়াও গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপটেশন’র আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপনের ফলে এ বিষয়ক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তার জিজ্ঞাসার জবাবে মন্ত্রী জানান, সুন্দরবনসহ দেশের বনভূমি সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সুরমাসহ দেশের নদনদী খননেও সরকার কাজ করছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের পুনর্বাসনের জন্যও কাজ করছে সরকার। এছাড়া উপকূলীয় এলাকা মিষ্টি পানির সুবিধার্থে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, জেন্ডার ও মানবাধিকার কর্মী শীপা হাফিজা, ক্লাইমেট ফিন্যান্স অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্ডিউসড মাইগ্রেশন প্রকাশ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইবিপি ম্যানেজার আবুল বাশার, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা প্রমুখ।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন