বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের আরেকটা লাল বলের চ্যালেঞ্জ

July 6, 2021 | 8:50 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

সাকিব আল হাসান ফিরে এসেছেন। আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ডাকা হয়েছে টেস্ট স্কোয়াডে। এদিকে তামিম ইকবালকে নিয়ে আবার বড় শঙ্কা। জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনও ভয় দেখাচ্ছে। এসব স্বস্তি, অস্বস্তি নিয়ে আরেকটা লাল বলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে নামছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

বিজ্ঞাপন

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটা খেলতে নামবে মুমিনুল হক সৌরভের দল। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায়।

প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, লাল বলের ক্রিকেট বাংলাদেশের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। এই কথার পক্ষে সাক্ষী দিচ্ছে পরিসংখ্যানও। সর্বশেষ ১২ টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র একটি! একমাত্র জয়টা করোনার আগে ঘরের মাঠে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। হেরেছে ৯টিতেই। নিউজিল্যান্ড থেকে বিধ্বস্ত হয়ে আসার পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। তারপর ভারত, পাকিস্তানে গিয়ে স্রেফ উড়ে গেছে মুমিনুল হকের দল। দেশের মাটিতে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

শ্রীলংকায় সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ হেরেছে একটিতে, অন্যটিতে ড্র করতে পেরেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় আর শ্রীলংকার বিপক্ষে ড্র’টায় বলার মতো সাফল্য। গত কয়েক বছর ধরে সাদা পোশাক গায়ে জড়ালেই কি যেন হয় বাংলাদেশের! খর্ব শক্তির আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ, চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতা ম্যাচ হেরেছে, ভারতে গিয়ে নূন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীতাও করতে পারেনি টাইগাররা। এসবের জন্যই প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হলেও বাংলাদেশের জন্য তা চ্যালেঞ্জিংই, কারণ ফরম্যাটটা টেস্ট।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে নামছেও অনেকদিন পর। শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট শেষ হয়েছে গত এপ্রিলের শুরুতে। তারপর ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তামিম, মুশফিক, সাকিব, মুমিনুলরা। অবশ্য আগেভাগে জিম্বাবুয়ে গিয়ে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে দল। অনেকটা যে পেরেছেও সেটা আন্দাজ করা গেল দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে।

দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটে-বলে দুই বিভাগেই বেশ দারুণ পারফর্ম করেছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মুমিনুলক হককেও আত্মবিশ্বাসী করছে বিষয়টি। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট অধিানয়ক বলছিলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো হয়েছে। দুদিনের প্রস্তুতিতে ব্যাটসম্যান-বোলাররা সবাই ভালো করেছে। তাই আমরা টেস্ট ম্যাচেও ভালো কিছু আশা করছি। আর শুধু জিম্বাবুয়েতে না, যে কোন দেশেই অ্যাওয়ে ম্যাচ চ্যালেঞ্জিং হয়। তবে প্রস্তুতির দিক থেকে আমি আশাবাদি যে ৫ দিন ভালো ক্রিকেট খেললে অবশ্যই ফল আমাদের দিকে আসবে।’

বিজ্ঞাপন

জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনও বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এমনিতে দুদলের মুখোমুখি টেস্ট লড়াইয়ে জয়-পরাজয় সমান হলেও ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে এককভাবে এগিয়ে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের জয় ৭টিতে, জিম্বাবুয়েরও ৭টিতে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৭ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। যাতে টাইগারদের জয় মাত্র একটিতে! পাঁচটি ম্যাচই জিতেছে জিম্বাবুয়ে, অন্য ম্যাচটি ড্র। তার বড় কারণ কন্ডিশন।

আফ্রিকান দেশটির কন্ডিশন বরাবরই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। দেশে স্পিনবান্ধব উইকেট হলেও জিম্বাবুয়ের উইকেটগুলো বেশ গতিময়। পেসাররা বরাবরই ছড়ি ঘুড়ায়। এবার অবশ্য বেশ শক্ত একটা পেস আক্রমণ নিয়েই জিম্বাবুয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ দলে ফিরে দারুণ পারফর্ম করছেন। ছন্দে আছেন ইবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহিরাও। তাছাড়া সম্প্রতি সময়ে জিম্বাবুয়ের উইকেট থেকে স্পিনাররাও কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে।

মুমিনুল আত্মবিশ্বাস খুঁজছেন সেসব থেকেও, ‘সাত-আট বছর আগে দেখেছিলাম পেসাররা খুব ডমিনেট করেছে এই উইকেটে। শেষ দু-একটা সিরিজে জিম্বাবুয়ের এই উইকেটে পেসার-স্পিনাররা সবাই ডমিনেট করেছে বা সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু এখন উইকেট না দেখে কিছু বলাটা কঠিন।’

বিজ্ঞাপন

কাল ম্যাচ, অথচ আজও উইকেট দেখতে পারেনি বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তা নিয়ে হালকা আক্ষেপও ঝড়ল মুমিনুলের কণ্ঠে। আক্ষেপ করেছেন তামিম ইকবালকে নিয়েও।

সাদা পোশাকে গত কয়েকটা ইনিংস দুর্দান্ত খেলেছেন তামিম। শ্রীলংকা সফরে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েছিলেন তিন বার। শুরুতেই প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণকে এলমেলো করে দেওয়ার মতো ব্যাটিং করছিলেন তামিম। হাঁটুর পুরনো চোট মাথাচাড়া দেওয়ায় সেই তামিমকে নিয়ে শঙ্কা। তামিম না খেললে ওপেনিংয়ে সাদমান ইসলাম অনিকের সঙ্গে নামবেন হয়তো তরুণ সাইফ হাসান।

ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা মুশফিকুর রহিমের খেলা অনেকটা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ে সাদমান, সাইফ, সাকিব, মুমিনুল, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, লিটনদের ওপর ভরসা করবে হয়েতো টিম ম্যানেজমেন্ট। বোলিংয়ে সাকিবের সঙ্গী হিসেবে ফর্মে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ হয়তো থাকবেন একমাত্র স্পিনার হিসেবে। পেস ডিপার্টমেন্টে তাসকিনের সঙ্গে আবু জায়েদ রাহি, শরিফুল ইসলাম অথবা ইবাদত হোসেন।

এদিকে, ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই ভালো খেলা জিম্বাবুয়ে ম্যাচের আগে বড় এক দুঃসংবাদ পেয়েছে। করোনা আক্রান্ত স্বজনকে দেখতে যাওয়ার কারণে আইসোলেশনে বন্দি হয়েছেন অধিনায়ক শন উইলিয়ামস ও অভিজ্ঞ ক্রেইগ আরভিন। কাল থেকে খেলতে পারছেন না দুজন। উইলিয়ামসের অনুপস্থিতিতে জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দিবেন ব্রেন্ডন টেলর।

এই টেলর বাংলাদেশের জন্য বরাবরই ভয়ঙ্কর। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে দাঁড়িয়ে থাকা জিম্বাবুয়ান তারকা নিশ্চয় চাইবেন বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ কিছু করতে। জিম্বাবুয়ে দলে বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার রয়েছেন। বাংলাদেশ অনেকদিন সাদা পোশাকের ক্রিকেটের বাইরে থাকলেও জিম্বাবুয়ান ক্রিকেটাররা কদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে সাদা পোশাকে ম্যাচ খেলেছে। ফলে প্রস্তুতিতেও এগিয়ে থাকবেন স্বাগতিকরা।

দেখা যাক, কাল থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে কারা আলো ছড়াতে পারেন।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন