বিজ্ঞাপন

আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবানের হামলা, লড়াই চলছে

July 7, 2021 | 8:51 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বুধবার (৭ জুলাই) আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় বাদঘিস প্রদেশের রাজধানী ক্বালা-ই-নাও শহরে হামলা চালিয়েছে উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবান। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রথম কোনো প্রদেশের রাজধানীতে হামলা চালালো তালেবান।

বিজ্ঞাপন

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ মোহাম্মদি জানিয়েছেন, তালেবান ওই শহরে প্রাদেশিক পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা কার্যালয়ের দখল নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ ক্রমে বাড়ছে। ওই শহরে তালেবানের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনী খুবই নাজুক সামরিক পরিস্থিতিতে ছিল।’

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তালেবান শহরে ঢুকে কালা-ই-নাভির কারাগারেরও দখল নিয়েছে। সেখান থেকে তারা ৪০০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে তালেবানের ১০০ জঙ্গিও রয়েছে। ওই কারাগারে আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী যেসব সদস্য পাহারায় ছিল তারা বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পন করে বলেও খবর প্রকাশ হয়।

বাদঘিস প্রদেশের গভর্নর হিশামুদ্দিন শামস সাংবাদিকদের এক খুদে বার্তার মাধ্যমে বলেন, ‘শত্রুরা শহরে প্রবেশ করেছে। তারা শহরের কেন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। সরকারি বাহিনীর সেনা সদস্যরা শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ইতিমধ্যে প্রদেশের জেলাগুলোর পতন হয়েছে। গোয়েন্দা দফতরে তালেবানরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে গভর্নর শামস জানান, তালেবান মিলিশিয়ারা শহরটিকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করে। তবে তিনি ওই শহরের পতন হয়েছে বলে স্বীকার করেননি। তার দাবি, শহর রক্ষা করতে তালেবানদের বিরুদ্ধে সরকারি বাহিনী জোর লড়াই করছে।

অপর এক ভিডিও বার্তায় গভর্নর শামস শহরের বাসিন্দাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। ওই ভিডিওতে তার পাশেই গুলাগুলি ও অস্ত্রধারীদের দেখা যাচ্ছিল। ভিডিও বার্তায় শহরের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার বার্তাটি হলো, দয়া করে আপনার শান্ত থাকুন। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, আমরা, আমরা প্রত্যেকে একসঙ্গে শহরটিকে রক্ষা করব।’

বাদঘিস প্রদেশের কাউন্সিল প্রধান আবদুল আজিজ বেক সাংবাদিকদের বলেন, প্রাদেশিক রাজধানীতে তালেবান হামলা করেছে। কিছু কর্মকর্তা তালেবানের কাছে আত্মসমর্পন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বাদঘিস প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য জিয়া গুল হাবিবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাদেশিক কাউন্সিলের সকল কর্মকর্তাদের শহরের এক সামরিক ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরে লড়াই চলছে।’

বুধবার যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে জানায়, আফগানিস্তান থেকে ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই হামলা চালিয়েছে তালেবান।

এছাড়া বুধবার প্রতিবেশী ইরানের রাজধানী তেহরানে তালেবানের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছে আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ। ইরানের মধ্যস্থতায় যখন ওই বৈঠক চলছে, তখন এমন হামলা চালিয়েছে সংগঠনটি।

চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট। গত বছর সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে আফগানিস্তানে উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানের সহিংসতা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আফগানিস্তানের কোনো না কোনো অঞ্চল দখল করে নিতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার কাবুলে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক বৈঠকে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইতিমধ্যে ৮০টি জেলা দখল করে নিয়েছে তালেবান। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ৮০টি জেলার নিয়ন্ত্রণ তালেবানের দখলে চলে গেছে। কিছু জেলায় তালেবান লড়াই করে দখল করে নিয়েছে, আবার কিছু জেলা থেকে কৌশলগত কারণে সরকারি সেনা সরিয়ে আনা হয়েছে।

এদিকে তালেবান দাবি করছে, তারা আফগানিস্তানের প্রায় দেড়শটি জেলার দখল নিয়েছে। তবে আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলছে, তালেবানের কবল থেকে কয়েক ডজন জেলার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানিয়েছেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠী তালেবানের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই। তালেবান যদি মনে করে আমরা আত্মসমর্পণ করব, তাহলে তাদের এই আশা আগামী ১০০ বছরেও পূরণ হবে না।

প্রেসিডেন্ট গনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, এখন আমাদের জাতীয় সংহতি, শক্তি ও প্রত্যয় প্রদর্শনের সময় এসেছে।

আরও পড়ুন

সারাবাংলা/আইই

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন