বিজ্ঞাপন

‘জিয়া ছিলেন খন্দকার মোশতাকের শক্তির মূল উৎস’

August 26, 2021 | 4:58 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জিয়াউর রহমানকে খন্দকার মোশতাক দোসর হিসেবে পেয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানই ছিলেন খন্দকার মোশতাকের মূল শক্তির উৎস। কারণ, ক্ষমতা দখল করতে আর হত্যাকাণ্ড চালাতে নিশ্চয়ই সামরিক বাহিনীর কিছু সহযোগিতা দরকার ছিল। তাই মোশতাক-জিয়া মিলেই এই চক্রান্তটা করেছিল।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর) এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (দক্ষিণ) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ‍তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুভার্গ্যের বিষয় যে, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আমাদের দলের মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাকসহ যারা জড়িত ছিল, তাদের মূল শক্তি ছিল সেনাবাহিনীতে। সেনাবহিনীতে কিন্তু সেনাপ্রধান হয়, উপ-সেনাপ্রধান বলে কিছু হয় না। তবে জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধা যারাই ছিলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। কাজেই তার সংসারটা টিকিয়ে রাখার জন্যই তাকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকায় নিয়ে এসে উপ-সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু সে কখনও বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না। স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না। কারণ, পাকিস্তান থেকে যে সমস্ত অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল সোয়াত জাহাজে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একজন হিসেবে সেই জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গিয়েছিল। সেখানে পাবলিক তাকে ঘেরাও দেয় এবং ধরে নিয়ে আসে। যেহেতু ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ শুরু করে, সেহেতু আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল এবং একটা নির্দেশনাও ছিল যে, স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা ইপিআর’র ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রচার করে দেওয়া। পাকবাহিনী যখন আক্রমণ শুরু করে তার পর পরই স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ জাতির পিতা ঘোষণা দেওয়ার পরেও জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর সৈনিক হিসেবেই, তাদের একজন সামরিক অফিসার হিসেবে কাজ করছিল এবং চট্টগ্রামে আমাদের নেতাকর্মী যখন ব্যারিকেড দিচ্ছিল তার হাতে কিন্তু অনেকে নিহত হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের সে সব সময় বাধা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার সেই ঘোষণাটিই ২৬ তারিখ দুপুরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাহেব প্রথম পাঠ করেন। এর পর একে একে আমাদের যারা নেতা ছিলেন সবাই পাঠ করেন। সেই সময় নেতারা মনে করলেন, একজন সামরিক অফিসারকে দিয়ে যদি ঘোষণাটি পাঠ করানো যায় তাহলে একটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে- এমনটি মনে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেজর রফিককে প্রথম বলা হয়, তিনি তখন পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করছেন এবং অ্যাম্বুস করে বসে আছেন। তিনি বললেন, আমি যদি সরে যাই তাহলে এটা দখল করে নেবে। তখন জিয়াউর রহমানকে ধরে নিয়ে এসে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সমিশন অফিস থেকে ঘোষণাটি পাঠ করানো হলো। যদিও প্রথম দিকে তার আপত্তি ছিল। এভাবেই জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তবে একথাও সত্যি যে, জিয়াউর রহমান কোন ফিল্ডে কোথাও যুদ্ধ করেছে- এরকম ইতিহাস শোনা যায় না। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের সেরকম ধরনের কোনো ইতিহাস নেই। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের নেতাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের নেতারা এখনও আছেন। মোশাররফ সাহেব এমপি, তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা, সরাসরি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা কিন্তু জিয়াউর রহমানের নাম দিয়েছে মিস্টার রিট্রিড। ওনাদের কাছে গল্প শুনেছি, যেখানে যুদ্ধ লাগত তার অন্তত তিন মাইল দূরে যেয়ে জিয়াউর রহমান থাকত। সে কখনও অস্ত্র হাতে সামনা-সামনি যুদ্ধ করেনি। হ্যাঁ, নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল কিছু দিনের জন্য। এভাবেই জিয়াউর রহমানকেই পেয়েছিল খন্দকার মোশতাক।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মোশতাক জিয়ার উপর নির্ভর করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন থাকতে পারিনি। মীরজাফরও পারেনি। মীরজাফর সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে বেঈমানি করে নবাব হয়েছিল। কিন্তু সে তিন মাসও পূর্ণ করতে পারেনি। কারণ, বেঈমানদের সবাই ব্যবহার করে, কিন্তু তাদের বিশ্বাস করে না। ঠিক জিয়াউর রহমান সেই কাণ্ডই করেছিল। মোশতাক কিন্তু তিন মাসও পূর্ণ করতে পারেনি। তাকেও বিদায় নিতে হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেলখানায় যে হত্যাকাণ্ড হয় সেটাও কিন্তু জিয়াউর রহমানের নির্দেশে। কারণ, সে ছিল তখন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এবং মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়।’

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্বভার নিয়ে দেশে ফিরে অনেক বাধাসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছিল- সে কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই জন্য আমি বলতে পারি, আওয়ামী লীগই আমার পরিবার, বাংলাদেশই আমার পরিবার। আমি সেভাবেই বাংলাদেশের মানুষকে দেখি। আমি সেই চিন্তা করেই কাজ করি। এজন্য আমার কোনো মৃত্যু ভয়ও নেই, কোনো আকাঙ্ক্ষাও নেই।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার আদর্শগুলো ধ্বংস হয়ে যাক, সেটি করতে দেব না। যে নাম তারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল ২১ বছরে, এখন কেউ আর মুছতে পারবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম এখন আর মুছতে পারবে না। যে ইতিহাস তারা বিকৃত করেছিল, আজ সেই ইতিহাস মানুষের কাছে উদ্ভাসিত।’

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন