বিজ্ঞাপন

ভাঙনে বদলে যাচ্ছে লোহাগড়ার দুটি ইউনিয়নের মানচিত্র

September 15, 2021 | 8:50 am

মির্জা মাহামুদ হোসেন রন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নড়াইল: মধুমতি নদীর ভাঙনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দুটি ইউনিয়ন শালনগর ও জয়পুরের মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই শালনগরের ৬টি ও জয়পুর ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম নদীগর্ভে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। নদী মরণকামড় দিতে পারে আরও ১০টি গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এসব গ্রামের লোকজন মধুমতির ওপারে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ও বুড়াইচ ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নড়াইল সদর ও লোহাগড়ায় শহরেও গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকাঘুরে দেখা গেছে, নদী তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর, শিয়েরবর, চর আজমপুর, মণ্ডলবাগ, চর গোপালপুর খেয়াঘাট, চাকশী, নওখোলা মিয়াপাড়া, চরশালনগর, কাশিপুর, মাকড়াইল, চর মাকড়াইল ও রামচন্দ্রপুর এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও পাঁকা রাস্তা।

বিজ্ঞাপন

দেখা যায়, গ্রামবাসী নদী ভাঙনের মুখে বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। মাকড়াইল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ নদীতে ভেঙে গেছে। ওই গ্রামে অবস্থিত একটি মোবাইল টাওয়ার অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার গ্রোথ সেন্টার হিসাবে পরিচিত শিয়েরবরের হাট রক্ষার জন্য নদীতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সম্প্রতি নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হাটটি। যেকোনো সময় হাটের একটি বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একই রকম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নওখোলার আল-হেরা দাখিল মাদ্রাসা, চাকশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদসহ শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি।

জয়পুর ইউনিয়নের আস্তাইল ও আমডাঙ্গা গ্রামের অন্তত ৮৫টি বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়েছে। একের পর এক নদীতে যাচ্ছে ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁকা সড়ক, মসজিদসহ নানা সামাজিক স্থাপনা।

বিজ্ঞাপন

ওই এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, একসময়ে ঐতিহ্যবাহী জনপদ ছিল আমডাঙ্গা, আস্তাইল ও চরআড়িয়ারা গ্রাম। গত তিন দশকে ওই তিন গ্রামের ৯৫ ভাগ পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। অধিকাংশ পরিবার কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসতি গড়েছেন। অসচ্ছলতার কারণে যারা শহরে বা অন্যত্র যেতে পারেননি, তারা একবার এপাড়ে, আরেকবার অন্যপাড়ে বসতি গড়ছেন। কিন্তু এ ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কার্যকরি পদক্ষেপ।

শালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর যাবৎ মধুমতি নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নের কাতলাশুর, চরগোপালপুর, চাকশী, চরখড়কদিয়া, চরশালনগর, চরমাকড়াইল গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জমিজমা নদীর ওপার চলে যাওয়ায় তারা সেখানে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। অন্য ইউনিয়নে বসবাস করায় তারা সেখানকার ভোটার হয়ে গেছে। এভাবে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের ফলে ইউনিয়নের পুরানো মানচিত্র পাল্টে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নড়াইলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, ওই অংশের বড় এলাকা ভাঙনের শিকার। এবার বস্তা ফেলার জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। এখনো তার বরাদ্দ হয়নি। ভাঙনরোধে এখানে স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। এ জন্য ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন