বিজ্ঞাপন

কর্মসূচি-কর্মশালায় জয়ের সংশ্লিষ্টতা চান ছাত্রলীগ নেতারা

October 5, 2021 | 11:15 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সংগঠনের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের আইকন এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ চায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন কর্মসূচিতে সজীব ওয়াজেদ জয় সরাসরি যুক্ত থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠনের জনপ্রিয়তা বাড়বে, ভাবমূর্তিও আরও উজ্জ্বল হবে। সজীব ওয়াজেদ জয় যেন ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকেন, সে বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন ছাত্রলীগের অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। সেখানেই আলাপচারিতায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের সংশ্লিষ্টতা কামনা করেন নেতারা।

গণভবনে উপস্থিত একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, ছাত্রলীগ নেতাদের এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, তোমরা জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করো, আমিও বলে দেবো। আগামী ডিসেম্বর মাসে সে বাংলাদেশে আসছে। আমি তখন তোমাদের কথা বলব। তোমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখো।

আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, তার পেছনে রয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ মিয়ার জয় একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তরুণদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আগ্রহ বেশি থাকার কারণেই ছাত্রলীগের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে জয়ের উপস্থিতি চাইছেন নেতারা।

বিজ্ঞাপন

গণভবনে উপস্থিত সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বরং জয়-লেখকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বলেন, তোমরা ভালো কাজ করছ। কাজ করতে থাকো। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতেও নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি কেউ যেন গুজব-অপপ্রচার ছড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ফায়দা হাসিল করতে না পারে, সে বিষয়েও ছাত্রলীগকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। আমরা শিক্ষাঙ্গন খুলে দিচ্ছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা যেন সবাই ভ্যাকসিন পেতে পারে, সে কারণে ফাইজার ও মডার্নার টিকা আনা হচ্ছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তোমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তাদের পাশে থাকতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য

শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের আরও বলেন, ক্যাম্পাসে বিরোধীপক্ষ থাকবে। বিরোধীপক্ষকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ পায়, সে বিষয়েও নজর রাখতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্যের কারিগর, আপনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইকে যদি আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে ছাত্রলীগের হয়ে এনগেজড করানো যায়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম ছাত্রলীগের দিকে আরও উৎসাহিত হবে।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরাও যোগাযোগ করো, আমিও বলে দেবো। সে আগামী ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আসছে। আমি তখন তোমাদের কথা বলব। তোমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করতে পার।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর পর্যন্ত বাড়ানো নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা চান তারা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থীর ২৫ বছর পূর্বে যে মেধা ও স্মরণশক্তি থাকে, তা ৩১/৩২ বছরে গিয়ে থাকে না। আমি বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি, ২৫ বছরের বেশি বয়সী যারা বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তাদের পাসের হার খুবই কম থাকে। আর যারা মেধাবী, তারা অল্প বয়সে অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো করে এবং সরকারি চাকরিতে অংশ নেয়। তাই সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।

ছাত্রলীগ নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ছাত্রলীগের সদস্যদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় তাদের মূল্যায়ন না করায় তাদের চাকরি হয় না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করে নিজ নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেতে হবে। এখানে ছাত্রলীগ করে বলে আলাদা করে কাউকে চাকরির ব্যাপারে প্রাধান্য দেওয়া হবে না। আমরা তো বিএনপির খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের মতো হতে পারি না। তারা তালিকা করে করে ছাত্রদলের ছেলেমেয়েদের বা নিজেদের লোকদের চাকরি দিয়েছে। সে স্টাইলে আমরা আমাদের সংগঠনের কাউকে সরকারি চাকরিতে সুযোগ-সুবিধা করে দিতে চাই না। সবাইকে নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি অর্জন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনার উপস্থিতি নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন সনজিৎ চন্দ্র দাস। শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে তাদের বলেন, আমার বয়স তো ৭৫ বছর। তোমাদের দাদী-নানীর মতো বয়স হয়েছে। আমাকে নিয়ে এই সময় আর টানাটানি করার দরকার নাই। আমার এখন এত সময়ও হয় না।

জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ হয়েছিল। তবে সময় না মেলায় তখন সে সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি। অবশেষে সোমবার সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করেন, তার আগেই ছাত্রলীগ নেতাদের গণভবনে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের সময় ছাত্রলীগ নেতারাও গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মুখর হন শেখ হাসিনা।

গণভবনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান হৃদয় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

গণভবন সূত্র জানায়, শুরুতেই উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাদের কথা বলার সুযোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এসময় তাদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে করণীয় কী হবে, এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চান। শেখ হাসিনা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার নির্দেশনা দেন। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বি এম মোজাম্মেল হক ও বাহাউদ্দিন নাছিমের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি।

ত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, অনেক দিন পর সংগঠনের অভিভাবকের সান্নিধ্য পেয়ে আমরা খুব আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী সকালে মন্ত্রিসভা ও বিকেলে সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিন অতিক্রম করেছেন। তারপরও তিনি প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে আজ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। নেত্রী আমাদের কর্মকাণ্ডে সন্তোষ জানিয়েছেন এবং প্রশংসাও করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা ভালো কাজ করছ। তোমরা সবাইকে নিয়ে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাও।

ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইব্রাহীম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তরুণ প্রজন্মের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের আইকন। তাই আমরা তাকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে এংগেজড করানোর ব্যাপারে আপার (শেখ হাসিনা) কাছে নির্দেশনা চেয়েছি।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন