এবারও হচ্ছে না কর মেলা, রিটার্ন দিতে হবে কর অঞ্চলে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থাকায় এবারও কর মেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সাধারণত কর মেলায় এক ছাদের নিচে কর দাতারা সবধরনের সেবা পান। এমনকি রিটার্ন জমা, ফরম পূরণের মাধ্যমে কর পরিশোধ সব সেবাই মেলে কর মেলায়। তবে এবার কর অঞ্চলগুলোতে পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে সেবা পাবেন কর দাতারা।

গত ১০ বছর ধরে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা, বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ দেশজুড়ে কর মেলার আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর বিভাগ। কিন্তু করোনার কারণে গত বছরও হয়নি কর মেলা। তবে রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার পর্যায়ের কর অঞ্চলগুলোতে কর মেলার যাবতীয় সেবা মিলেছে।

কর মেলা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. আলমগীর হোসেন (আয়কর নীতি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণে এবারও আমরা আয়কর মেলা করছি না। তবে দেশের প্রতিটি কর অঞ্চলে মাসব্যাপী সেবা পাওয়া যাবে। যেহেতু করোনাভাইরাস এখনো রয়েছে, তাই এক জায়গাতে মেলা করলে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বড় ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমরা ঝুঁকি নিয়ে মেলা করছি না।’

তিনি বলেন, ‘কর অঞ্চলগুলোতে করমেলার সেবা দিতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সব অঞ্চলে জানিয়ে দিয়েছি। কর দাতারা মাসব্যাপী কর অঞ্চলে সব সেবা পাবেন। এমনকি স্বাস্থ্য সুরক্ষার যাবতীয় সামগ্রীও থাকবে সেখানে।’

এদিকে কর মেলা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

• করোনা পরিস্থিতিতে আয়কর মেলা আয়োজনের পরিবর্তে কর কমিশনার অঞ্চলগুলোতে গত বছরের মতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন গ্রহণের জন্য কর দাতাদের সেবা প্রদান করবে।
• প্রতিটি অফিসে উন্মুক্ত স্থান, কার পার্কিং এরিয়া প্রভৃতিতে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে রিটার্ন গ্রহণের পরিবেশকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে রিটার্ন দাখিলকারী করদাতাদেরকে তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের সঙ্গে রিটার্ন দাখিলের জন্য উৎসাহ প্রদানে উপহার সামগ্রী প্রদান করতে হবে। সব কর কমিশনার সেবা কেন্দ্রে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
• প্রতিটি কর অঞ্চলের নিজস্ব ওয়েবসাইট তথ্যসহ হালনাগাদ করতে হবে। ওই ওয়েবসাইটে আয়কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ফর্ম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকা, ভিডিও টিউটোরিয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ করতে হবে।
• কর অঞ্চল-৪ এর ব্যবস্থাপনায় সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের জন্য অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন গ্রহণ বুথ ও হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে নভেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ কর তথ্য সেবা প্রদান করা হবে।
• সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ২ নভেম্বর করদাতাদের রিটার্ন গ্রহণ ও কর তথ্য সেবা প্রদান করতে হবে।
• নভেম্বর মাসব্যাপী করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজীকরণ ও কর তথ্য সেবা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নভেম্বরের আগে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানানো হবে।
• সব কর অঞ্চলের কমিশনাররা তাদের নিজ নিজ কর অঞ্চলের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনাবলী অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
• নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল অথবা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় ট্যাক্স কার্ড ও ঢাকার কর অঞ্চলগুলোর সেরা করদাতাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
• ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের চারটি কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে ও অন্য সব কর অঞ্চল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যথাযথ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জেলা ও সিটি করপোরেশনভিত্তিক সেরা করদাতা সম্মাননা প্রদান করবে।
• আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস ২০১১ উদযাপন করা হবে। এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর কর মেলা আয়োজন করে আসছে এনবিআর। এরই মধ্যে এই কর মেলা সাধারণ করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এনবিআরের আওতাধীন সারাদেশে ৩১টি কর অঞ্চল রয়েছে।

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম