বিজ্ঞাপন

ছেলে হত্যার রক্তের বিনিময়ে রক্ত চাইলেন মুক্তিযোদ্ধা বাবা

December 2, 2021 | 8:56 am

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: যারা আমার ছেলেকে মারেছে তাদের সকলের ফাঁসি চাই। রক্তের বিনিময়ে রক্ত চাই। আর অন্য কোনো কথা নেই বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র নিহত টিপু সুলতানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ।

বিজ্ঞাপন

সাভারের আমিন বাজারে শবে বরাতের রাতে ছয় কলেজ ছাত্রকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহানের আদালত এই রায় ঘোষণা করবেন।

টিপু সুলতানের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বলেন, যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের সকলের ফাঁসি চাই। রক্তের বিনিময়ে রক্ত। আর অন্য কোনো কথা নেই ওখানে। আমি একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা থানা কমান্ডার এবং সরকারি অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। আমার ছেলে ওইদিন বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য ওখানে যায়। পর্বত সিনেমা হলের ওখানে বিরিয়ানি পাইনি। এরপর তারা গাবতলীর পুরাতন ব্রিজের নিচে যায়। ওই সময় ওদের কাছ থেকে ঘড়ি টাকা সব কিছু কেড়ে নেয়। ওরা বাধা দিলে ওদের পিটিয়ে হত্যা করে। ওদের কেবলার চড়ে নিতে চাইলে সাংবাদিকদের জন্য আর যেতে পারিনি। কেবলার চড়ে নিয়ে গুম করতে চাইছিল কিন্তু সেটা আর করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, ওরা বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য টাকা জমাতো। সেই টাকা, ব্যবহারের মোবাইল ও ঘড়িসহ সব কিছু নিয়ে নেয় আসামিরা। অভিযুক্তদের ফাঁসির প্রত্যাশা করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নিহত ছাত্র টিপু সুলতানের মা কাজী নাজমা সুলতানা বলেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে সকলের ফাঁসি চাই। আর কিছু চাই না। ওদের ফাঁসি চাই। যারা আমার নির্দোষ ছেলেটাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের সকলের ফাঁসি হক। আমার ছেলের জন্য আমার কাছে প্রতিটা দিনই মৃত্যুর দিন। যার ছেলে হারায় সে জানে তার দিনগুলো কেমন কাটে। তদন্তে যারা ফাঁসির উপযুক্ত তাদের সকলের ফাঁসি চাই।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সাভারের আমিন বাজারে শবে বরাতের রাতে ছয় কলেজ ছাত্রকে ডাকাত সাজিয়ে পিটিয়ে হত্যার মামলায় সকল আসামির সর্বোচ্চ সাজা (মৃতদণ্ড) প্রত্যাশা করি। মামলায় ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৬ জন সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। সাক্ষীদের জবানবন্দি, অন্যান্য আলামত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে। সকল প্রমাণ আসামিদের বিরুদ্ধে গেছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করি।

তিনি আরও বলেন, ছয় কলেজ ছাত্র আসামিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। দুঃখজনক বিষয় আসামিদের সেই সময় মন গলেনি। তারা তাদের পুলিশে দিতে পারত। আইন কেন হাতে তুলে নিবে? শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বেঁচে যাওয়ায় তাকে ডাকাতির মামলায় আসামি করা হয়। সেই মামলা থেকে ওই ছাত্র অব্যাহতি পাই। মোট ৬০ জন আসামির মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৫৭ জন। সকল আসামির জামিন বাতিল রয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) প্রথম ঘন্টায় রায় ঘোষণার সম্ভবনা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, পুলিশ মামলাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। পরে র‌্যাবের তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে। ছয় জন মেধাবী ছাত্রে মাইকিং করে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বিষয়টি খুব মর্মান্তিক? সকল আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করি।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিউলি বলেন, আসামিদের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি আসামিরা ন্যায় বিচার পাবে। সকল আসামিরাও খালাস পাবেন বলে আশা করেন।

নিহত ছয় ছাত্ররা হলেন- ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব ও বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান। তাদের সঙ্গে থাকা বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।

ওই ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি ডাকাতির মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।

বিজ্ঞাপন

২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। একই বছরে ৬০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল-আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন অব্যাহতিও দেওয়া হয়।

মামলার চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে। পরবর্তীকালে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়।

হত্যা মামলার মোট আসামি ৬০ জন। তাদের মধ্যে নয় জন পলাতক, একজন মারা গেছেন আর বাকি ৫০ জন জামিনে আছে। এদের মধ্যে ওয়াসিম নামে এক আসামি জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। এ মামলায় ১৪ আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৫৭ জন।

সারাবাংলা/এআই/এনএস

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন