বিজ্ঞাপন

টুটুলের শেষ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে স্ত্রীর আকুল কান্না

December 8, 2021 | 10:16 pm

আহমেদ জামান শিমুল

সাইদুল আনাম টুটুল ২০১৮ সালে শুরু করেছিলেন ‘কালবেলা’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিটির শুটিং শেষ করে ঢাকায় ফিরেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ সম্পাদক ও বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরা দেশে চলে যান তিনি। তখন ছবিটি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। কিন্তু সকল আশঙ্কা কাটিয়ে ছবিটি ১০ ডিসেম্বরে মুক্তি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ছবিটি মুক্তি উপলক্ষে উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের, মানবধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। সেখানে তৈরি হয় এক আবেগগণ পরিবেশ।

উদ্বোধনী প্রদর্শনী শেষে আগত অতিথিরা ছবিটির প্রশংসা করেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের ছবিতে এক ধরনের স্থুলতা থাকে, কতগুলো তথাকথিত ব্যাপার থাকে। ওই বিভৎস জিনিসগুলো থাকে। সেগুলো না দেখিয়ে একটি মেয়ের জীবনে এ যুদ্ধ কতটা প্রভাব ফেলেছিলো, কীভাবে সে সংগ্রাম করেছিলো তা শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এক কথায় এ মেয়ে যেন আমাদের একাত্তরের বাংলাদেশ।’

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, টুটুল আমার বন্ধু সেই ১৯৬৮ সাল থেকে। আমরা এক সঙ্গে অনেকটা পথ হেঁটেছি। ছবিতে যেমনটা দেখানো হয়েছে, একদল মানুষ পায়ে হেঁটে ভারত চলে গিয়েছিল। তেমনি আমরাও ভারতে গিয়েছিলাম, যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। বারবারই আমার সে সব স্মৃতি মনে পড়ছিলো। আমার মনে হয় আমাদের তরুণদের ছবিটা দেখা উচিত। তাদের জানা উচিত কী রকম নিরন্তন যাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম সে সময়ে।

বিজ্ঞাপন

সাইদুল আনাম টুটুলের মৃত্যুর পর ২০১৯-এ চলচ্চিত্রটির প্রযােজক ও তার সহধর্মিনী অধ্যাপক মােবাশ্বেরা খানমের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘কালবেলা’র অসমাপ্ত কাজ। তারা ২০২০-এ এসে ছবিটির সকল কাজ শেষ করেন। তখন দেশে করোনা মহামারী দেখা দিলে ছবিটির মুক্তি আটকে যায়।

উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মোবাশ্বেরা খানম। কান্না চেপে রেখে তিনি বলেন, আমি টুটুলের মতো করে বানাতে পারিনি৷ সেটা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধের পাকিস্তানের প্রভাব এই দেশে পড়েছে তা দেখানো হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে সরকারি অনুদান পায় ‘কালকেলা’। শুটিং শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। পুরো অক্টোবর-নভেম্বর মাস শুটিং হয় খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

বিজ্ঞাপন

‘কালবেলা’ ১৯৭-এ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে একজন নারীর সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে নির্মিত। এই চলচ্চিত্রে উঠে আসবে যুদ্ধকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের আশ্রয়ের সন্ধানে অনিশ্চিত যাত্রা, অবরুদ্ধ শহরে কর্মজীবীদের বিপন্নতা, বিহারি ও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নৃশংসতা এবং যুদ্ধকালীন সামাজিক অস্থিরতা।

ছবিটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ এবং শিশির আহমেদ। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন মাসুম বাশার, মিলি বাশার, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, লুৎফর রহমান জর্জ, শেখ মাহবুবুর রহমান, সায়কা আহমেদ, জুলফিকার চঞ্চল, কোহিনূর আলম, তানভীর মাসুদ প্রমুখ। চিত্রগ্রহণ করেছেন রিপন রহমান খান। সম্পাদনা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সামির আহমেদ। ছবিটির সংগীত পরিচালনা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ফরিদ আহমেদ। যিনি করােনা আক্রান্ত হয়ে এ বছরের ১৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

সারাবাংলা/এজেডএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন