বিজ্ঞাপন

৫০ বছরেও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেল না জাতি

December 14, 2021 | 9:54 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বীর বাঙালির সাহস ও মেধার কাছে যখন একে একে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প, আস্তানা নিশ্চিহ্ন হতে লাগল, শত্রুবাহিনী একে একে পরাস্ত হয়ে যখন আত্মসমর্পণ করতে লাগল, যখন বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত- ঠিক তার আগ মুহূর্তে জাতিকে মেধাশূন্য করতে পাকজান্তারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নির্দেশ দেয়। পাকিস্তানি হানাদাররা তখন এদেশের রাজাকার-আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্রকার, কবি-সাহিত্যিকদের হত্যা করে। বাঙালির বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে অনেককে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়, যারা পরবর্তী সময়ে আর ফিরে আসেননি। এমনটি তাদের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ জন্মের পর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা তৈরির কথা ছিল। কিন্তু বিজয়ের ৫০ বছর পরও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারেনি সরকার। কয়েকজনের নামের তালিকা ২০২০ সালে প্রকাশ করা হলেও এখন সেই কাজে ধীরগতি।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় এসে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্তের পাশাপাশি শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে একটি কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গত ১৩ ডিসেম্বর ১ হাজার ২২২ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা তৈরি করে। পরের বছরের অর্থাৎ ২০২১ সালে স্বাধীনতা দিবসে এই তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ওই কমিটির সদস্য এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই কাজটা ছিল সবচেয়ে সহজ। কারণ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তারা পরিচিত ব্যক্তি। তাদের সবাই চিনতেন। সেজন্য তালিকা তৈরি সহজ ছিল। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত করা গেল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি পূর্ণাঙ্গ তালিক নয়। তারপরে এ উদ্যোগ নেওয়ার কোনো পরিস্থিতিই ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘এখন স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে আবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা ইতিবাচক। তবে করোনাসহ নানা কারণে আপাতত এ উদ্যোগ থেমে রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক শহিদ হযেছেন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের কারও কারও নামে ভবন, কক্ষ, গবেষণাকেন্দ্র থাকলেও অনেকের শুধুমাত্র নাম ফলক টুকুই চিহ্ন হয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশকে মেধাশূন্য করতেই তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের আত্মদান আমরা কোনোভাবেই পেছনে ফেলে রাখতে পারি না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের মেধাবী সন্তান ছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। তারা বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, দেখিয়েছিলেন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তবে যা করেছে তাও যথেষ্ট নয়। দেরি হলেও শুরুটা যখন হয়েছে তখন এটি দ্রুত শেষ করা উচিত।’

জানা গেছে, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ এখন ঢিমেতালে চলছে। নাম প্রণয়ন কমিটির সদস্য শাহরিয়ার কবীর জানিয়েছেন, করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ ও গেজেটভুক্ত করার কাজ ধীর গতিতে চলছে। গত সাত/আট মাস ধরে কমিটির মিটিংও হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কত দিনে কাজ শেষ করা যাবে তা বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলক হক খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাজ থেমে নেই, চলছে। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ সরকার দ্রুত শেষ করতে চায়। ইতোমধ্যে কয়েকজনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। বাকিদের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। সেসব হাতে এলেই বাকিদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকলেও বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন