বিজ্ঞাপন

স্বাভাবিক হচ্ছে শ্রমবাজার, ২০২১ সালে ৬ লাখেরও বেশি কর্মী প্রবাসে

January 5, 2022 | 11:00 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রবাসী আয় নিম্নমুখী থাকলেও গতি ফিরেছে জনশক্তি রফতানিতে। গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বলছে, বিদায়ী বছরে ছয় লাখেরও বেশি কর্মী গেছেন বিভিন্ন দেশে। নতুন করে শ্রমবাজার না খুললেও পুরনো বাজার থেকেই চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া খুলতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও। সব মিলিয়ে নতুন বছরে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে গেছেন ৩৫ হাজার ২৩২ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪৯ হাজার ৫১০ জন, মার্চে ৬১ হাজার ৬৫৩ জন, এপ্রিলে করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ার পর গতি কমে যায়। তারপরও এপ্রিল মাসে ৩৪ হাজার ১৪৫ জন কর্মী গেছেন, মে মাসে গেছেন ১৪ হাজার ২০০ জন, জুন মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমন কমে আসতে থাকলে আবার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

জুন মাসে গেছে ৪৮ হাজার ৫৬৭ জন, জুলাই মাসে ১২ হাজার ৩৮০ জন, আগস্ট মাসে ১৯ হাজার ৬০৪ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৪২ হাজার ৮ জন গেছেন, অক্টোবরে ৬৫ হাজার ২৩৩ জন, নভেম্বরে ১ লাখ ২ হাজার ৮৬১ জন এবং ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি কর্মী কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। এই মাসে গেছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১৬ জন কর্মী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি ছিলো বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ কর্মীর গমন। এর আগে, ২০১৭ সালের মার্চে ১ লাখের কিছু বেশি কর্মী বিভিন্ন দেশে পাঠানো গিয়েছিলো।

বিজ্ঞাপন

বিএমইটি’র তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে যে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে সাড়ে চার লাখই গেছেন সৌদি আরবে। তথ্য অনুযায়ী গেল বছর সৌদি আরবে গেছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ২২৭ জন কর্মী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ২৯ হাজার ২০২ জন, কুয়েতে ১ হাজার ৮৪৮ জন, ওমানে ৫৫ হাজার ৯ জন, কাতারে ১১ হাজার ১৫৮ জন, বাহরাইনে মাত্র ১১ জন, লেবাননে ২৩৫ জন, জর্ডানে ১৩ হাজার ১১৬ জন, লিবিয়ায় ৩ জন, সুদানে ৩৯ জন, মালয়েশিয়ায় ২৮ জন, সিঙ্গাপুরে ২৭ হাজার ৮৭৫ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০৮ জন, ইউকে ১২৩ জন, ইতালিতে ৬৫৩ জন, জাপানে ৩ জন, ব্রুনাইয়ে ১২ জন, মরিশাসে ২১৫ জন, ইরাকে ৫ জন।

এছাড়া অন্য কিছু দেশে ৭ হাজার ৭১১ জন কর্মী গেছেন। জনশক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যে কারণে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

এদিকে নারী জনশক্তি রফতানিও আগের বছরগুলোর চেয়ে বেড়েছে। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৫৭৯ জন নারী কর্মী কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। জানুয়ারিতে গেছেন ৪ হাজার ৬৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ হাজার ৩৮২ জন, মার্চে ৮ হাজার ২৯৭ জন, এপ্রিলে ৫ হাজার ২৩৯ জন, মে মাসে ৪ হাজার ২৩৮ জন, জুনে ৬ হাজার ৯০১ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৬৯১ জন, আগস্ট মাসে ৩ হাজার ৬৫৯ জন, সেপ্টেম্বরে ৮ হাজার ৫৩ জন, অক্টোবরে ৮ হাজার ৪৮৮ জন এবং নভেম্বর মাসে ১০ হাজার ৯৬২ জন নারী কর্মী কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যান।

বিজ্ঞাপন

নারী কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে গেছেন ৪৬ হাজার ৩৬১ জন। এর পরে জর্ডানে ১১ হাজার ৬৯৭ জন, আর ওমানে গেছেন ৭ হাজার ৬৪৫ জন নারী কর্মী। গত বছর এই তিন দেশেই সবচেয়ে বেশী নারী কর্মী পাঠানো গেছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা দিতে পারলে আরও অধিক সংখ্যক কর্মী শ্রমবাজারে পাঠানো সম্ভব।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালে সরকার একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি সই করে। সেখানে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিলো, তা যদি পালন করা হতো তবে আরও বেশী নারী কর্মী শ্রম বাজারে প্রবেশ করতে পারতেন। শুধু সৌদি আরবেই নয় যেসব দেশে আমরা নারী কর্মী পাঠাচ্ছি সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের উচিত এমন সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি যেটা হোক একটা শর্তে পৌছানো। কারণ আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি যে হারে কর্মী বিদেশে গেছেন, সেখান থেকে নির্যাতন, অত্যাচার এবং হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে আসার চিত্রও কম নয়। সেজন্য এই চুক্তিতে পৌঁছানো দরকার।’

তথ্য মতে, ২০২১ সালে কর্মী গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী। ২০২০ সালে গেছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন। আর মহামারির আগের বছর ২০১৯ সালে কর্মী পাঠানো গেছে ৭ লাখ ১৫৯ জন।

বিজ্ঞাপন

বিএমইটি সূত্র বলছে, ২০১৯ সালে মহামারি করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মুখ থুবরে পরে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। ফলে জনশক্তি রফতানির গতি কমে আসে। আগের বছরের ৭ লাখ থেকে পরের বছর ২০২০ সালে ২ লাখে নেমে যায়। তবে ২০২১ সালে ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখতে শুরু করে জনশক্তি রফতানি। যা পুরো বছর জুড়েই গতিতে ছিলো। ফলে মহামারির আগের সময়ের গতিতে ফিরেছে। মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারটি খুলে দেওয়া নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমরা এবার কঠোরভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি মনিটর করবো। এরইমধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। এবার সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট মুক্ত রেখে কম অভিবাসন খরচে কর্মী পাঠানোর চেষ্টা করবো। চলতি মাসেই এর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ফলে চলতি বছরে জনশক্তি রফতানি আরও বাড়বে।’

বিএমইটির রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজে গেছেন। এই বিশাল সংখ্যক জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে শ্রমিকদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্স ইউনিটের (রামরু) তথ্য মতে, গত বছর যে সংখ্যক কর্মী বিদেশে গেছেন, তাদের ৭৪ শতাংশই অদক্ষ। আর ৩.৬ শতাংশ আধা দক্ষ। আর দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ছিলো ২৩.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৪৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের অন্য জনশক্তি রফতনিকারক দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগনি নিয়েছে।

এদিকে গত বছরের জুলাই থেকে প্রবাসী আয়ে গতি কমে যাওয়ায় শনিবার (১ ডিসেম্বর) নতুন বছরের প্রথম দিনেই রেমিট্যান্সের ওপর দেওয়া প্রণোদনা আগের ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ওই ঘোষণা দ্রুত কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন