বিজ্ঞাপন

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের বাজারে ঢোকাই দায়

March 5, 2022 | 10:54 am

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নিম্ন ও মধ‍্যবিত্তদের জন্য বাজারও বিলাসি জায়গায় পরিণত হচ্ছে। অল্প টাকায় যাদের মাস চলতে হয়, তাদের যেন বাজারে ঢুকাই দায়। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যেটির দাম এখনো বাড়েনি। কম হোক, বেশি হোক সব পণ্যেই আগের দিনের থেকে বেশি দাম হাকাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। এতে বাজার থেকে ক্রেতারা ফিরছেন হতাশ হয়ে।

বিজ্ঞাপন

এ বছরের বাজারের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনাটি হলো শীত মৌসুমে সবজির ফলন ভালো হলেও বাজারে কোনো সবজির দামই কমেনি। এই ঘটানটি স্মরণকালের সবচেয়ে অভাবনীয় ঘটনা। কারণ সারাবছর সবজির দাম উর্ধ্বমূখী থাকলেও শীতে এবারই প্রথম কোনো সবজির দাম কমেনি। ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, পাইকার আর খুচরা বিক্রেতারা মিলে সিন্ডিকেট করে এই অবস্থা তৈরি করেছিল। এখনো তারাই বাজারকে অস্থির করে তুলছে।

এই সপ্তাহেও রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, কড়লা, সিম বরবটিসহ সব ধরনের সবজির দাম। চালের মজুদ থাকার পরেও চালের কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা দাম বেড়েছে। পেয়াঁজের দামও বেড়েছে। তেল মজুদ করে রাখার কারণে খুচরা বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে, দাম বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

বাড়তির দিনে প্রথমে মাছের বাজারের চিত্রটাই তুলে ধরি। নিউমার্কেট, বউ বাজারসহ পুরনো ঢাকার প্রায় সব বাজারে সব ধরনের মাছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা টাকা পযর্ন্ত দাম বেড়েছে। এমনকি সবচেয়ে সস্তার পাঙ্গাস মাছের দামও এখন ২০০ টাকা প্রায়। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের যারা হোস্টেলে বা মেসে থাকেন, তাদের বেশিরভাগেরই আমিষ আর স্নেহের চাহিদা পূরণ হয় এই মাছটিতে। কিন্তু তারা বলছে এই মাছটিও কিনতেও এখন তাদেরকে ‘পিতার কাছে বেশি টাকা চেয়ে পত্র’ লিখতে হচ্ছে। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের আলাপ না হয় বাদই দিলাম, কারণ তাদের চিঠি লেখারও জায়গা নেই।

বিজ্ঞাপন

বাজারে অন্য মাছের মধ্যে আকার ভেদে রুই, কাতল ও মৃগেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। একটু বেশি বড় আকারের হলেই দাম উঠে যাচ্ছে ৫০০ টাকায়। চাষের তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, আকারে একটু বড় হলে ২২০ টাকা। চিংড়ি মাছ আকার ভেদে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শোল পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, কই ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। পাবদা মাছ পাওয়া যাচ্ছে ২৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দামে।
ইলিশ আকারে এক কেজির বেশি হলেই ২ হাজার, সবচেয়ে ছোটটা ৬৫০ টাকা।

আমিষের চাহিদায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আরেক আশ্রয় ব্রয়লার মুরগি। এই মুরগির দাম এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। এ নিয়ে অনেকেই তর্কে জড়াচ্ছেন বিক্রেতার সঙ্গে, মুরগি না কিনেই ছড়ছেন বাজার। কারণ কক কিংবা দেশি, আর কোনো মুরগিরই দাম জিজ্ঞেস করারই সুযোগ নেই। কক বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ওজনে বেশি হলে ৫৫০ কম হলে ৪৫০ টাকা।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

গরুর মাংসের বাজারে এখন আর দামাদামি নেই। ব্যবসায়িরা তর্ক এড়াতে ৬৪০ টাকা কেজি দাম লিখে টাঙিয়ে দিয়েছেন। এক মাসের ব্যবধানে এই মাংসের দাম ৯০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়েনি কেল খাসির মাংসে, এটি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

বিজ্ঞাপন

রায়হান জামাল নামের এক ক্রেতা সারাবাংলার কাছে রসিকতা করে বলেছেন, ‘দাম করলেই মাথা ঘুড়ায়, ঝিমঝিম করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাজার মনিটরিং করার কোনো সিস্টেম আছে কি না আমার জানা নেই। থাকলে বলতাম- আমাদের সঙ্গে রসিকতা করবেন না প্রিজ। এই রকমের আকাশছোঁয়া দামে বাজার করে চলার মতো আয় আমাদের হচ্ছে না।’

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে পাকা টমেটো ৫০ টাকা, শিম ৭০, মাঝারি আকারের ফুলকপি ৩৫, বড় আকারের ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, করলা ৭০, চিচিঙ্গা ৫০, কচুর মুখি ৫০, বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও পেঁপে ৩০, গাজর ৪০, মুলা ৪০ টাকা, আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, ঝিঙে ৬০ এবং কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

রান্নার তেলের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি ১৮০ টাকা রাখা হচ্ছে। এর নির্ধারিত দাম যদিও ১৬৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৪ টাকা দরে। পাম তেল ১৬০ টাকায় কিনছে ক্রেতারা। সব তেলেই সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখছে দোকানিরা। সরিষার খোলা তেল উঠেছে ২৮০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও এই তেলের দাম ছিল ২২০ টাকা। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভের দাম ৭০০ থেকে হাজার টাকা লিটার। আর পোমেস অলিভ পাওয়া যাচ্ছে আরেকটু কমে, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লিটার।

এদিকে বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়, চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকা। বেশি ব্যাবহৃত চালের মধ্যে ৬৫ টাকার মিনিকেট চাল এখন কেজিপ্রতি ৬৮ টাকা। এছাড়া নাজিরশাইল চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। পোলাওয়ের চালের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।

বিজ্ঞাপন
ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

এছাড়াও খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্যাকেটজাত বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা এবং প্যাকেটজাত বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৮ টাকা কেজি।

ডিমের মধ্যে এখন লাল ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। আর সোনালী কক মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

সারাবাংলা/টিএস/এনএস

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন