বিজ্ঞাপন

কালরাত: মশাল জ্বালিয়ে ভয়াল স্মৃতি স্মরণ

March 25, 2022 | 11:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো : আলোর মশাল জ্বেলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর বিভীষিকাময় গণহত্যায় শহীদদের স্মরণ করেছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন। নিরস্ত্র মানুষের ওপর যারা হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, নয় মাসের যুদ্ধে সেই হায়েনাদের পরাভূত করে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র যাতে আবার ফেরত আসে, এমন প্রত্যয় ছিল সবার কণ্ঠে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৫ মার্চ) ঘড়ির কাঁটায় রাত ৯টায় সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও পাকিস্তানিদের বাঙালি নিধনের সেই ভয়াল স্মৃতি স্মরণে এক মিনিটের জন্য আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নগরীর জামালখান মোড়ে সেই অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে ওঠে মশাল। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ৫২টি মশাল জ্বালিয়ে স্মরণ করে গণহত্যার মর্মন্তুদ স্মৃতি। এসময় মঞ্চে গান করছিলেন উদীচী চট্টগ্রামের শিল্পীরা, ‘মুক্তির মন্দিরে সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান’।

এরপর সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অলিদ চৌধুরী সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনূস, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, সংগঠনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক শওকত বাঙালি। কথামালার ফাঁকে আবৃত্তি পরিবেশন করেন রাশেদ হাসান ও মিলি চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যে রাজনীতি, সেই রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট ছিল ১৯৫২ থেকে ১৯৭২। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির মধ্যে স্বাধীনতার চেতনার স্ফূরণ ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় নানা আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি নিধনের টার্গেট নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী যে বর্বর গণহত্যা চালায়, তা ইতিহাসে নৃশংসতম। অনিবার্য হয়ে ওঠে যুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধের পর স্বাধীনতা পায় বাঙালি। সেই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা। সেই মূলমন্ত্রে আমাদের উজ্জীবীত হতে হবে। সেই চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে বাঙালির মুক্তি নেই।’

এদিকে বোধন আবৃত্তি পরিষদ শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগি চত্বরে ‘পঁচিশে মার্চ কালরাত্রি স্মরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান করে। আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রদীপ প্রজ্বালন, কথামালা, আবৃত্তি, কবিদের কবিতা পাঠ, গণসংগীত ও নৃত্য।

বিজ্ঞাপন

বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষের সভাপতিত্বে আবৃত্তিশিল্পী শিমুল নন্দী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও মো. ইউনুস, বোধনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুভাষ বরণ চক্রবর্তী, চসিক কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল ও সাংবাদিক বেলায়েত হোসেন বক্তব্য রাখেন।

এতে গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচী চট্টগ্রাম। কবিতা পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি সাথী দাশ, শাহীন মাহমুদ, বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ঋত্বিক নয়ন, সুমন দত্ত, রিমঝিম আহমেদ এবং মিনু মিত্র। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল্লাহ সাঈদ, শাহেদ উল ইসলাম, ফারুক তাহের, মুজাহিদুল ইসলাম, অনির্বাণ চৌধুরী, জুয়েল, ঐশী পাল, নাসরীন তমা, সেলিম ভূঁইয়া।

এ ছাড়া বোধনের শিল্পীরাও আবৃত্তি পরিবেশন করে। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে আমন্ত্রিত নৃত্য দল নৃত্য নিকেতন ও নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি।

বিজ্ঞাপন

নগরীর জামালখান চত্বরে বোধন আবৃত্তি পরিষদের আরেক অংশ পৃথক কর্মসূচি পালন করে। সন্ধ্যায় জাতীয় গণহত্যা দিবস ও ভয়াল কালরাত্রি স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। এরপর বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বোধনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম, শিক্ষাবিদ শামসুদ্দীন শিশির, চসিক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, অধ্যাপক হোসাইন কবির, অধ্যাপক মুজিব রহমান, আইনজীবী মুজিবুল হক, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সহ-সভাপতি সুনীল ধর, সাংবাদিক প্রণবেশ চক্রবর্তী, আবৃত্তিশিল্পী দিলরুবা খানম ও সেলিম রেজা সাগর।

ছবি তুলেছেন: সারাবাংলার ফটো করেসপন্ডেন্ট শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন