বিজ্ঞাপন

৫৭ বছর পর ১৭ যাত্রী নিয়ে ফিরল মিতালী এক্সপ্রেস

June 1, 2022 | 6:16 pm

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: উদ্বোধনের প্রায় ১৪ মাস পর বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে মিতালী এক্সপ্রেস। বুধবার (১ জুন) সকালে ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সবুজ পতাকা দেখিয়ে মিতালী যাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এবং ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার বৈষ্ণব। এরপর বেলা পৌনে ১২টায় পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে মাত্র ১৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে মিতালী। আর এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৫৭ বছর পর এই পথে ট্রেন চলা দেখল দুই বাংলার মানুষ।

বিজ্ঞাপন

অখণ্ডিত ভারতবর্ষে মানুষের পাশাপাশি সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মালামাল পরিবহনের জন্য বিভিন্ন স্থানে রেললাইন স্থাপন করে তৎকালীন বৃটিশ শাসক। সেসব লাইনের একটি সংযোগ ছিলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের নীলফামারির চিলাহাটিতে। কিন্তু ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রেলপথও বন্ধ হতে শুরু করে। তবে ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরও এ পথে রেল চলাচল চালু ছিল। জানা যায়, সেসময় এ পথে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করত। ১৯৬৫ সালে ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যা বর্তমান সরকার দীর্ঘ ৫৭ বছর পর চালু করল। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২৭ মার্চ দুই দেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মিতালী এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহামারি করোনার কারনে সেসময় যাত্রী পরিবহন শুরু করা যায়নি। এখন সংক্রমণ কমে যাওয়ায় উদ্বোধনের ১৪ মাস পর বুধবার (১ জুন) যাত্রী পরিবহন শুরু করল মিতালী।

মিতালী এক্সপ্রেসের যাত্রী চলাচলের উদ্বোধন করে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, এই অঞ্চলের মানুষের সহজ যাতায়াতের জন্য রেললাইন স্থাপন করেছিল বৃটিশ সরকার। যদিও পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার এই পথে ট্রেন চলাচলের দিকে কোনো নজরই দেয়নি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে রেলপথ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠন শুরু করে, তখনই তাকে হত্যা করা হয়। এরপরের সরকারগুলো কখনোই রেলখাতে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যে চলাচল করা রেলপথগুলো আর চালু করা হয়নি। যা বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের রেল ব্যবস্থা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার বৈষ্ণব বলেছেন, এই ট্রেন চলাচল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের রেল খাতে নেওয়া নানা উদ্যোগের প্রশংসা করে অশ্বিনী কুমার বলেন, রেলকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। আর এ কাজে প্রয়োজনে বাংলাদেশের পাশে দাড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবে ভারত।

এদিকে ৪৫৬ সিটের বিপরীতে মাত্র ১৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মিতালী এক্সপ্রেস। তবে দিন দিন এই পথে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে দুই মন্ত্রীই আশা প্রকাশ করেন।

ট্রেনের সময় সূচী অনুযায়ী, নিউ জলপাইগুড়ি থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশ্যে সকাল ১১.৪৫ মিনিটে ছাড়বে। আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এসে পৌঁছাবে রাত সাড়ে ১০টায়। প্রথম যাত্রায় মিতালী এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে ভারতের হলদিবাড়ি স্টেশনে দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দশ মিনিটের জন্য থামবে। এরপর রাত ১টা ৫ মিনিটে ছেড়ে বাংলাদেশ সময় ১টা ৫৫ মিনিটে চিলাহাটিতে চালক পরিবর্তনের জন্য থামানো হবে ৩০ মিনিট। এরপর ২টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে রাত সাড়ে ১০টায় এসে পৌঁছাবে। এর বাইরে কোনো বিরতি নেই।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, প্রথম যাত্রায় যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম। ভারতের দিক থেকে মঙ্গলবার (৩১ মে) পর্যন্ত ৪৫৬ আসনের মিতালী এক্সপ্রেসের মাত্র ১২টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫টি টিকিট। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, উদ্বোধনের দীর্ঘ দিন পরে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া মিতালীর প্রচার কম হওয়াও একটি কারণ। তবে ধীরে ধীরে এই প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হবে।

মিতালী এক্সপ্রেস সপ্তাহে দুই দিন চলাচল করবে। ভারত থেকে রোববার ও বুধবার আর বাংলাদেশ থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাবে। ঢাকা থেকে রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে গিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল সোয়া ৭টায়। রেলওয়ে সূত্র অনুযায়ী, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া পরবে ৫ হাজার ২৫৫ টাকা। এই ভাড়া এসি বার্থের যাত্রীদের জন্য। এসি সিটের ভাড়া পরবে ৩ হাজার ৪২০ টাকা আর এসি চেয়ারে যারা যাবেন তাদের খরচ হবে ২ হাজার ৭৮০ টাকা। এই ভাড়ার মধ্যে যোগ হবে ভ্রমণ কর, যে কারণে যাত্রীদের নতুন করে খরচ দিতে হবে না। অন্যদিকে পাঁচ বছরের কম বয়সী যাত্রীদের ভাড়া হবে টিকিট মূল্যের অর্ধেক। নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। অন্যদিকে কোলকাতার টার্মিনাল স্টেশন ও ফেয়ারলিপ্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে মিতালী এক্সপ্রেসের টিকিট পাওয়া যাবে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি, নিউজলপাইগুড়ি, সিকিম, দার্জিলিং পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণ সহজ হবে। আগে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য এসকল স্থানে ট্রেনে যেতে হলে প্রথমে কোলকাতা গিয়ে সেখান থেকে শিলিগুড়ির ট্রেন ব্যবহার করতে হতো। বিমানের ক্ষেত্রেও ঢাকা থেকে কোলকাতা, আবার কোলকাতা থেকে শিলিগুড়ির বাগডোগরা এয়ারপোর্টে যেতে হতো। তবে বাসের রুট থাকায় যারা বাসে ভ্রমণ করতে পারেন তাদের জন্য অসুবিধা ছিল না। মিতালী চালু হলে তাদের জন্যও ট্রেন ভ্রমন সাচ্ছন্দের হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ করোনা মহামারির মধ্যেই ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে উদ্বোধন করা হয় মিতালী এক্সপ্রেস। ঢাকা- নিউ জলপাইগুড়ি পথে চলাচলের জন্য চালু করা এই ট্রেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচল করা ট্রেনের মধ্যে তৃতীয়। এর আগে ২০০৮ সালে ঢাকা- কোলকাতা পথে মৈত্রী আর ২০১৭ সালে খুলনা- কোলকাতা পথে চলাচল শুরু করে বন্ধন এক্সপ্রেস।

সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন