বিজ্ঞাপন

স্পর্ধিত বাংলাদেশ, স্বপ্নের দ্বার খুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

June 25, 2022 | 5:08 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রমত্তা পদ্মায় বহুল প্রতীক্ষিত সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বসভায় স্পর্ধিত বাংলাদেশের স্বপ্ন-সম্ভাবনা-সমৃদ্ধির নবযাত্রার দ্বার উন্মোচন করে দিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা পাড়ে কবির ভাষার অঙ্গীকারে প্রতিজ্ঞা শপথের অর্জনে শেখ হাসিনা বলে ওঠেন— ‘যতবারই হত্যা করো, জন্মাব আবার; দারুণ সূর্য হব, লিখব নতুন ইতিহাস।’ প্রধানমন্ত্রীর এমন দৃপ্ত শপথের হাত ধরেই আজ পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল-নীল-সবুজ আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়ায় পদ্মার তীরে উন্মোচিত হলো ফলক, বাতাসে উড়ল রঙিন আবীর, বর্ণিল উৎসবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বহুল প্রতীক্ষার অবসান হলো। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এ ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগব্যবস্থায় উন্মোচন হলো নতুন দিগন্ত।

আরও পড়ুন- পদ্মা সেতুর উদ্বোধন

এদিন সকালে হেলিকপ্টারে করে মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন শেখ হাসিনা। সেখানে বক্তব্য প্রদান শেষে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক ও ম্যুরাল-১ উদ্বোধন ঘোষণার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে ফলক ও ম্যুরাল-২ উদ্বোধন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী অর্জন-উৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই— এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

সুধী সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাক টিকিট, স্মারক ব্যাংক নোট, স্যুভেনির শিট, সিলমোহর ও উদ্বোধন খামের মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর প্রথম যাত্রী হিসেবে টোল পরিশোধ করে গাড়ি নিয়ে সেতু এলাকায় প্রবেশ করেন। সেখানে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করে তিনি উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। এসময় মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে তাকে সেলফিবন্দি হতেও দেখা যায়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতীক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজ পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল-নীল-সবুজ আলোর ঝলকানি। পদ্মা সেতুর ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি। তারুণ্যের কবি সুকান্তের ভাষায় তাই বলতে চাই— সাবাস বাংলাদেশ/ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।

‘আমরা মাথা নোয়াইনি। আমরা কখনো মাথা নোয়াব না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কখনো মাথা নোয়াননি। তিনি আমাদের মাথা নোয়াতে শেখান নাই। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন। বাংলার মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন, স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। তারই নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা তারই অনুসারী। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা পথ চলি। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে,’— বলেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের ষড়যন্ত্র জড়িতদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদর দুভার্গ্য হলো— আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। আমাদের কোনো এক স্বনামধন্য ব্যক্তি, তিনি একটি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। তার যে বয়স, এমডি পদে আইনিভাবে থাকতে পারেন ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। ৭০ বছর বয়স হয়ে গেছে, তখনো তিনি এমডি পদে বহাল। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে বলেছিল, আপনি তো এভাবে থাকতে পারেন না। আইনও সংশোধন হয় নাই। এরপর আমরা দেখলাম, বিশ্বব্যাংক আমাদের অর্থ বন্ধ করে দিলো দুর্নীতির অভিযোগ এনে।

তিনি বলেন, তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। আমাকে দেখাতে হবে অভিযোগ কী। যাই হোক, আমরা থেমে যাইনি। পদ্মা সেতুতে আমরা কোনো দুর্নীতি করতে পারি না। কাজেই অনেক পানি ঘোলা, অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করলাম। ওই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হলো আমাদের বাংলাদেশের অনেক স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ। তাদেরও নানারকম মত।

কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ। এ দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন। এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, কল্যাণ করা— এটাকে আমরা দায়িত্ব হিসাবে নিয়েছি। কাজেই যতই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করুক, সেগুলো আমরা প্রতিহত করব। ওটা আর আমি বলতে চাই না। আমি এইটুক বলব— যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়াল, আমি তখন সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলাম— পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করব, নিজস্ব অর্থায়নে করব।

আরও পড়ুন-

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঘোষণার পর আমার দেশবাসী, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। মানুষের শক্তিটাই হচ্ছে বড় শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করি। আজ আমি ধন্যবাদ জানাই, যে উপদেষ্টা কমিটি করেছিলাম জামিলুর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে, তারাও পিছু হঠেননি। তারাও বিশ্বাস রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আর্তর্জাতিক সংস্থা যারা আমাদের এখানে কাজ করেছেন, তারা তখন এগিয়ে এসেছিলেন। তারাও বিশ্বাস করেছিলেন, হ্যাঁ, আমরা পারি। আমরা করতে পারব এবং আমরা তা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের মতামত ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে আবার কীভাবে (পদ্মা সেতু) করব? ধারণা ছিল, বাংলাদেশ সারাজীবন পরনির্ভরশীল থাকবে। আর অন্যের দয়ায় চলতে হবে। কিন্তু জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে। বাংলাদেশকে আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই এই সিদ্ধান্তের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। সেদিন তারা শুধু আমার পাশে দাঁড়াননি, অনেকে অর্থ পর্যন্ত দিয়েছিলেন।

‘আমি বলেছিলাম, আমরা নিজেরা বাজেট থেকে করতে পারব। ওটাও তো জনগণের টাকা। আল্লাহর রহমতে আমরা সেটাই করেছি। আমি জানি না যারা যখন এই কথাগুলো বলেছিলেন— এই সেতু হবে না, নিজস্ব অর্থায়নে সম্ভব না, এটি একটি স্বপ্নমাত্র, এটা কখনো বাস্তব হওয়া সম্ভব না— আমার আজ আর কারও বিরেুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কারও বিরুদ্ধে কোনো অনুযোগ নেই। তাদের হয়তো চিন্তার দৈন্য আছে। আত্মবিশ্বাসের দৈন্য আছে। কিন্তু এটিও মনে করি, আজ থেকে তাদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে যে বাংলাদেশও পারে,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আত্মমর্যাদশীল বাংলাদেশ। আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণই হচ্ছে আমার সাহসের ঠিকানা। তার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট জানাই।

পদ্মা সেতু নির্মাণের জটিলতা ও এর গুণগত মান নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা কোনো সাধারণ নদী নয়, পদ্মা নদী অনমনীয়। তাই এর বাস্তবায়ন একটি কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের প্রকৌশলী কর্মী, বিদেশি পরামর্শক— সবাই মিলেই এই সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করেছেন। তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। জটিল হলেও পদ্মা সেতুর গুণগত মানে কোনো আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে মান বজায় রেখে। সর্বোচ্চ ১২০ মিটার পর্যন্ত এই সেতুর পাইল বসানো হয়েছে, যা বিশ্বের আর কোনো সেতুতে করা সম্ভব হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলোদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়, জেদ। সেই জেদের কারণে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণে সক্ষম হয়েছি। এই সেতু নির্মাণে যারা যুক্ত ছিলেন এবং যারা এ প্রকল্পের জন্য বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধামন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই জানেন, এ সেতু নির্মাণ করতে যখন আমরা যাই, অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মিথ্যা অপবাদ, দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে একেকটি মানুষ, একেকটি পরিবারকে যে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে… আমার ছোট বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার মেয়ে সায়মা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, আমার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলাম ড. মসিউর রহমানকে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া— যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। তাদের পরিবারসহ যে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, আমি তাদের প্রতি সহমর্মিমতা জানাই।

কেবল সহমর্মিতা জানানোর মধ্যেই অবশ্য সীমাবদ্ধ ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী। মাওয়া প্রান্তে যখন সুধী সমাবেশ শেষে টোল প্লাজার মঞ্চে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যান, ঠিক সেই সময় তিনি পাশে ডেকে নেন তার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনারা আমাকে বারবার সাহস দিয়েছেন। আমি মা-বাবা-ভাই সব হারিয়ে এ দেশের মানুষের ওপর ভরসা করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। পঁচাত্তরের পর ছয় বছর শরণার্থী (রিফিউজি) হিসেবে থাকতে হয়েছে। তারপর আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেছিল বলেই আমি দেশে ফিরে আসতে পেরেছিলাম। তখনো অনেক বাধা ছিল। কিন্তু এসেছিলাম একটি লক্ষ্যই সামনে নিয়ে— এই বাংলাদেশ যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে গেছেন, এই বাংলাদেশ এভাবে অবহেলিত থাকতে পারে না। এই বাংলাদেশকে আমাকেই কিছু করতে হবে। দেশের জনগণ সাহস দিয়েছে। আর সবসময় অনুভব করি— আমার মা, আমার বাবা সবসময় তাদের দোয়া আমার ওপর রেখেছেন। তাদের আশীর্বাদের হাত আমার মাথার ওপরে আছে। তা না হলে আমার মতো সাধারণ মানুষ, অতি সাধারণ বাঙালি মেয়ে— এত কাজ আমি করতে পারতাম না।

এসময় আবেগে বাষ্পারুদ্ধ হয়ে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ। তিনি বলেন, আমি আশা করি— এ সেতুর কাজ বন্ধ করতে যারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করেছে বা বাধা দিয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। দেশের মানুষের প্রতি তারা আরও দায়িত্ববান হবেন।

জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করার শপথ গ্রহণ করি— এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা গড়ে তুলব। আমরা বাঙালি জাতি বীরের জাতি, বাঙালির ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অর্জনের সঙ্গে রয়েছে অনেক ত্যাগ-তিতীক্ষা, অনেক রক্তধারা। বারবার আঘাত এসেছে। বাঙালি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাঙালি আবার এই আঘাতের পরও সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।

যতবারই হত্যা করো, জন্মাব আবার; দারুণ সূর্য হব, লিখবো নতুন ইতিহাস— এমন প্রতিজ্ঞা-অঙ্গীকারের প্রত্যয় ব্যক্ত করে ‘‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’’ বলে বক্তব্য শেষ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর এক পাশে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, অন্য পাশে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আর তার পাশে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

সুধী সমাবেশ প্রান্তে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিকসহ উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।

পদ্মা সেতুর থিম সং ‘মাথা নোয়াবার নয়, বাঙালি যেহেতু/ বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পরে সুধী সমাবেশ শেষে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর মাদারীপুর শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেন শেখ হাসিনা।

মাওয়া প্রান্ত থেকে জাজিরা প্রান্ত যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর তার গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতুর ওপরে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান নেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে বিমান বাহিনীর জেট বিমান, হেলিকপ্টার ও মিগ ২৯-এর নানা ধরনের কসরৎ ও ফ্লাই পাস্ট পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারগুলোর সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত পতাকা। জেট বিমানগুলো ফ্লাই পাস্টে বর্ণিল রঙে এসময় রাঙিয়ে তোলে আকাশ।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর জাজিরা প্রান্তের বিশাল জনসভায় পিতার আদর্শের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পিতার মতোই জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। বলেন, আমাদের অঙ্গীকার ছিল, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব। আমরা করেছি। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। মা-বাবা সবাইকে হারিয়ে আপনাদের পাশে পেয়েছি। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম। নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার একমাত্র শক্তি জনগণ। মা-বাবাসহ সবাইকে হারিয়েছিলাম। আপনারা পাশে ছিলেন। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ উন্নত করেছে। আজ রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ করেছি বলেই সবার জন্য যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে সেই পায়রা পর্যন্ত সেতু তৈরি করে দিয়েছি। পদ্মা সেতু করতে পেরেছি আপনাদের সাহসে। আজ আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে মা-বাবাকে, ভাই-বোনকে হারাতে হবে না।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২-এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মোনাজাতেও অংশ নেন। জাজিরা প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন