বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল আসছে,দেশের শীর্ষস্থানীয়রা বিদেশে

April 27, 2018 | 7:59 am

।। এম কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যদের একটি দল আগামী শনিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রতিনিধি দলটির বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রোহিঙ্গা নির্যাতনের সার্বিক বিষয় সম্পর্কে সরাসরি জানা। বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং সামনের বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা কী হবে তা নিরুপণ করা।

প্রতিনিধি দলটির পরিদর্শন শেষে ফিরে গিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে রেজুলেশন পাস করার কথা রয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতাধর কয়েকটি রাষ্ট্রের কারণে তা সম্ভব হবে কি-না এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।

এদিকে, রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো ইস্যুতে জাতিসংঘের এমন বৃহৎ ও ক্ষমতাশালী দল এর আগে কখনো বাংলাদেশ সফরে আসেনি। ঠিক যে মুহুর্তে জাতিসংঘের দলটি সফরে আসছেন, ঠিক সেই মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকবেন। বৈশ্বিক সর্বোচ্চ সংস্থার এমন বৃহৎ দলের সফরের সময় রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সকলেই দেশের বাইরে সফরে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে কূটনৈতিক অঙ্গণে।

বিজ্ঞাপন

পশ্চিমা দেশের একজন কূটনৈতিক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এতো বড় একটা দল যখন বাংলাদেশ সফর করছে, তখন বাংলাদেশের উচিত বৈশ্বিক এই সংস্থা থেকে তাদের সর্বোচ্চ অধিকার আদায় করে নেওয়া।

তিনি আরও বলেন, এখানে দর কষাকষির (নেগোশিয়েসন) বিষয় রয়েছে। আর এই দর কষাকষি করবেন মূলত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিরা। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব এরা কেউই সফরের সময় দেশে থাকছেন না।

প্রাচ্য দেশের একজন কূটনৈতিক বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশ সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিবের দেশে না থাকাটা হতাশাজনক।

বিজ্ঞাপন

১৫ সদস্যদের দলে জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছে। এ ছাড়া এই দলে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীনের সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং চীন এই দেশগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য।

এ ছাড়া ১৫ সদস্যের দলে নেদারল্যান্ডস, কুয়েত, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাখাস্তান, পেরু, পোলান্ড, সুইডেন এবং আইভরি কোস্টের প্রতিনিধিরা রয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যদের দলটি সরাসরি কক্সবাজারে যাবেন বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রতিনিধি দলকে কক্সবাজারে স্বাগত জানাবেন। আগামী রোববার (২৯ এপ্রিল) ঢাকার অভিজাত হোটেল রেডিসন ব্লু’তে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটির উদ্দেশ্যে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আগামী সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিনিধি দলটির সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর শেষে একই ইস্যুতে আগামী ৩০ এপ্রিল দুইদিনের সফরে মিয়ানমার যাবেন। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের মূল স্থান রাখাইন অঞ্চলে প্রতিনিধি দলটিকে পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে কি-না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

জাতিসংঘের এই প্রতিনিধি দলটির সহ-নেতৃত্বে ব্রিটেনের একজন প্রতিনিধি থাকবেন বলে ব্রিটেনের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড গত ১৬ এপ্রিল দেশটির জাতীয় সংসদে জানান।

ব্রিটেনের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড গত ১৬ এপ্রিল দেশটির জাতীয় সংসদে বলেন, ‘চলমান রোহিঙ্গা বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। নিরাপদে এবং পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এই সঙ্কট সমাধানের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল এপ্রিলের শেষে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে প্রতিনিধি দলটি নিজের চোখে রোহিঙ্গা সঙ্কট দেখে আসার পর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া সহজ হবে।’

ব্রিটেনের জাতীয় সংসদে এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, ব্রিটেন অনেক আগেই বলেছে যে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটেছে। এখন এই ঘটনার পূঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত করতে হবে, জাতিগত নিধন বা গণহত্যার পরিমাণ নিরুপন করতে হবে, যাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাই হোক, গণহত্যার বিষয়টি আদালতের বিষয়, এটা কোনো রাজনীতিক বা অন্য কেউ বললে হবে না। কিন্তু মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ‘রোম সদনে’ স্বাক্ষর করেনি। তাই মিয়ানমারকে নিজের থেকেই আইসিসির দারস্থ হওয়া উচিত অথবা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমারকে আইসিসিতে পাঠানো।’

ব্রিটেন অনেক আগেই মিয়ানমারকে আইসিসির দারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল বলে উল্লেখ করে মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘এই অমানবিক অপরাধের বিচার যাতে আইসিসিতে হয় এ জন্য ব্রিটেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যতোবার প্রয়োজন এই বিষয়ে কথা বলবে। ব্রিটেন এই ঘটনার সুচিবার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না। একজন প্রসিকিউটর এই বিষয়ে আইসিসির কাছে সুবিচার চেয়ে আবেদন করেছে। আইসিসি এই বিষয়ে কী বলে তা দেখার জন্য প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আইসিসি যদি মনে করে যে রাখাইনে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং এই বিষয়ে সংস্থাটির সহায়তা প্রয়োজন, তবে ব্রিটেন আইসিসিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

গত বছরের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে কক্সবাজারসহ দেশের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন