বিজ্ঞাপন

সময়টা এখন ‘সারাবাংলা’র

December 5, 2022 | 5:37 pm

মোস্তফা কামাল

সাংবাদিকতার ধরন এবং ধারনায় নতুন সংযোজন অনলাইন সাংবাদিকতা। ডিজিটালাইজেশন ও নতুন একটি ধারা তৈরির সুবাদে পাঠকদের কাছে এ সাংবাদিকতা বেশ জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। গণমাধ্যমটির এ শাখায় কর্মসংস্থানও বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে এর আরো প্রসারের আলামত স্পষ্ট। যেখানে ‘সারাবাংলা’র অবস্থান কেবল সুসংহতই নয়, বরং একটি মাইল ফলক রচনা করে এগিয়ে যাচ্ছে ঈর্ষনীয় গতিতে।

বিজ্ঞাপন

টাটকা সংবাদ দ্রুত দেয়ার প্রতিযোগিতায় এর কেবল চাহিদা ও আবেদন এখন বাড়বাড়ন্ত। পাঠকরা লুপে নিচ্ছেন নিজ গরজেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাংবাদিকতায় প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক-ব্রডকাস্ট ধরনের ভাগ করার দিন ফুরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে অনলাইন বা পোর্টালে উপরোক্ত ৩টি ফাংশনই বিদ্যমান। তারওপর সাংবাদিকতায় প্রকৌশল বা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও ৩ মাধ্যমের সবই কম-বেশি প্রয়োগ হচ্ছে অনলাইনে। এখানে পঠন, শ্রবন, দর্শন ৩ মাত্রাই চলমান। কারো কারো মতে এই সাংবাদিকতা চতুর্মাত্রিক। কারণ অনলাইন পত্রিকায় লেখা, ছবি, অডিও এবং ভিডিও ৪ মাত্রাই বিদ্যমান। আর টেরিভিশন হচ্ছে ত্রিমাত্রিক। এ বিবেচনায় অনলাইন মাধ্যমে পত্রিকা, রেডিও টিভির চেয়ে কর্মযজ্ঞ বেশি।

ডিজিটাল সাংবাদিকতা নামে ও সম্বোধন করা হয় অনলাইন সাংবাদিকতাকে। ডিজিটাল প্ল্যাটফরমও বলা হয়। খবর, ফিচারকে প্রাণবন্ত করতে এ মাধ্যমে অডিও-ভিডিও ও ইন্টারঅ্যাকটিভিটির ব্যাবহার ব্যাপক। নানা তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনলাইন সংবাদপত্রের গোড়া পত্তন ১৯৭৪ সালে ব্রুস পারেলউ ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ নিয়ে নানান গবেষণা ও যাচাইবাছাই চলে অনেকদিন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল নাগাদ ব্রাজিলে সরকারি মালিকানাধীনে সংবাদপত্র ‘জর্নালদোদিঅ্যা’ নামে একটি অনলাইন সংস্করণ সূচনা হয়। এর পর পর যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইন প্রকাশনার হিড়িক পড়ে যায়। ২০০৫-৬ সাল থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশেও এখন অনলাইন পোর্টালের সংখ্যা অগুনতি। তবে, পেশাদারিত্ব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া নিউজ পোর্টালের সংখ্যা এখনো হাতে গোনা। এদের বেশিরভাগই নানান জায়গার খবর কপি করে হুবহু বা কিঞ্চিত পরিবর্তন করে চালিয়ে দিচ্ছে। এ বদনামের দায় পড়ে পেশাদারিত্বসম্পন্ন অনলাইনগুলোর ওপরও। সাংবাদিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এরা যাচ্ছে তাই কনটেন্ট প্রকাশ করে। তা সর্বোপরি সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।

এ দায় টানার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পাঠক চাহিদা মেটানোর দুর্দান্ত প্রতিযোগিতা পেশাদার- প্রাতিষ্ঠানিক অনলাইন মাধ্যমগুলোর মধ্যে। যে প্রতিযোগিতায় অনেককে পেছনে ফেলে দ্রুততা, সাহসিকতা, নিরপেক্ষতাসহ নানান বিশেষত্বে দেশের অনলাইন মিডিয়ায় ভিন্ন উচ্তায় জায়গা করে নিয়েছে সারা বাংলা। ‘সারাবাংলা সারাক্ষণ’ কেবল স্লোগান নয়, তাদের স্বাতন্ত্রও। যে কোনো সময়ে যে কোনো খবর প্রকাশে ‘সারাবাংলা’র কৃতিত্ব পাঠক সমাজের পাশাপাশি সাংবাদিক মহলেও আলোচিত। যেখানে এখানে প্রতিটি স্পেস, সেকেন্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাৎক্ষণিকভাবে তারা জানতে পারেন, তাদের নিউজটি কতজন দেখেছেন? দেশ-বিদেশের কোত্থেকে কত পাঠক সেই মুহূর্তে ওই অনলাইনটি দেখছেন? কোন খবরটি পাঠক বেশি দেখছে বা পড়ছে? সেই চাহিদা দৃষ্টে খবর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

অনলাইন পত্রিকায় অডিয়েন্স সংবাদের বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। পাঠক ইচ্ছা করলে ওই সংবাদসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতে পারেন, ছবি, ভিডিও, অডিও শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া খবরের যে কোনো ভুলভ্রান্তি সহজেই শুধরানো বা সংশোধনের সুযোগ থাকে। প্রিন্টেড পত্রিকায় সংশোধন বা আপডেট দিতে আরেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। আর ব্রডকাস্ট মিডিয়ায় পরবর্তী বুলেটিন পর্যন্ত। যে কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে অনলাইন মিডিয়ার পাঠক বেড়ে চলছে। এর বিপরীতে অনলাইন পত্রিকা হিসেবে তারা কিছু সুবিধাও আছে। পত্রিকা ছাপা বা বিলি করার যন্ত্রণা নেই।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে এ দেশের দর্শক-শ্রোতা-পাঠকদের সংবাদমাধ্যম বলতে সংবাদপত্রের পাশাপাশি সরকারের নিয়ন্ত্রিত বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারই ছিল অন্যতম অবলম্বন। সরকারি পত্রিকা দৈনিক বাংলা-টাইমস এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া-বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হতো সরকারি উন্নয়ন বার্তা। এরশাদ শাসনামলের শেষ দিকে বিটিভি বাংলাদেশ বেতার আখ্যা পায় ‘সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স’ নামে। এ সুযোগে বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম বলতে অডিয়েন্সের ভরসার জায়গা করে নেয় বিবিসি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন পত্রিকা। এই পটভূমিতে ইলেক্ট্রক্ক মিডিয়া-তথা বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের একতরফা প্রচারে অতিষ্ঠ হয়ে বছরের পর বছর স্বায়ত্তশাসনের দাবি চলতে থাকে। বিগত শতকে নব্বইয়ের গণআন্দোলনে প্রধান তিন জোটের রূপরেখায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় গণমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসনের অঙ্গীকার। কিন্তু পরবর্তীকালে নির্বাচিত কোনো সরকারই এ ওয়াদা রাখেনি। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের সৃজনশীল কাজ ও সূচীন্তিত ভাবনাগুলোকে অন্যদের জ্ঞাপন করতে গিয়ে বক্তা বা যোগাযোগকারী, তথ্য বার্তার উৎস যুগে যুগে নানা বাধা-বিপত্তির মুখে পড়েছে। সংবাদমাধ্যমের ওপর আসা নানা চাপ সহ্য করেই গণমাধ্যম এগুতে হচ্ছে। তাপ-চাপ কুলাতে না পেরে সংবাদমাধ্যমের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা প্রায়ই পেশাদার ভূমিকা থেকে দুরে চলে যান। নানা দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান চাপের মুখে গণমাধ্যমে ‘সেলফ সেন্সরশিপ’ বা আত্ম-অবরোধের মধ্যে পড়ে যায়।

বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাটিতে এখন প্রযুক্তির লড়াই ব্যাপক। মোবাইল ফেনের যুগে এসে স্টিল ক্যামেরা হারিয়ে গেছে। ভিডিও ক্যামেরাকে টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। প্রচলিত গণমাধ্যমে-সাংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনকে লড়তে হচ্ছে নানা ফ্রন্টে। মোবাইল, ইন্টারনেট এবং সর্বশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে যে বিশাল চ্যালেঞ্জে ফেলেছে তা বৈশ্বিক ঘটনা। এটি সমস্যাও। সম্ভাবনাও। মানুষ কোন মাধ্যমে বা প্ল্যাটফর্মে গ্রহণ করবে সেটা যার যার বিষয়। মোবাইল ফোন এখন বিশ্বের এক নম্বর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। বিষয়টা আর শুধু লেখা বা বলা কিংবা দেখানোর সাধারণ সাংবাদিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, অনেক বেশি প্রযুক্তিগত বিষয় যোগ হয়ে চলছে। মূলধারার গণমাধ্যম এতদিন শুধু বার্তা দিয়ে গেছে। অন্যপক্ষ থেকে শোনার বা জানার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন একটি সংবাদ যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুবের মাধ্যমে আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

হাতে গোনা কয়েকটি বাদে পত্রিকাগুলোর অবস্থা সুখকর নয়। টেলিভিশন সাংবাদিকতার সম্ভাবনা পড়তির দিকে। টিভিগুলোকে অনেকে সরকারি প্রচারমাধ্যম বলে থাকেন। এক ধরনের আদিষ্ট হয়ে সংবাদ পরিবেশন ও সংবাদকর্মী নিয়োগ হওয়ায় এর বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। ব্যক্তি যোগাযোগ, ইমেজও এক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর। এর জেরে গত ১ দশকে অনেক গণমাধ্যমকর্মী পেশা ছেড়েছেন। কেউ বাধ্য হয়েছেন। পেশা ছাড়ার পর সাংবাদিকরা যোগ দিচ্ছেন, জনসংযোগ, এনজিও কর্মকর্তা বা অ্যাডভারটাইজিং বা শিক্ষকতা পেশায়। এ পরিস্থিতির বিকলপ ভাবনায় সমেয়র প্রয়োজনে বড় বড় পত্রিকা ও টিভিগুলো তাদের অনলাইন ভার্সন চালু করেছে। অনলাই সাংবাদিকতর এ বাতাবরণে যার কিছু নাই তারও অনলাইন নিউজ পোর্টাল খোলার শখ জাগছে। অনলাইন মিডিয়ার প্রাতিষ্ঠানিকতা প্রশ্নে এটি উদ্বেগের।

মানুষের কাছ যে মাধ্যম সবচেয়ে সহজলভ্য সেটিই আদরণীয়। পত্রিকার পাতা উল্টানোর ঝামেলা থেকে বাঁচতে মানুষ রিমোর্ট টিপে টিভি ঘুরিয়েছে এখন। টেলিভিশন চ্যানেলের শিডিউলের কাছে বন্দি না থেকে ঝুঁকছে ইউটিউব এবং ফেসবুকে। কারণ এখানে কোনো শিডিউল নেই, ধরাবাঁধা সময় নেই, এক বছর আগের তথ্যটিও তারা খুব সহজে ফেসবুক-ইউটিউব থেকে খুঁজে নিচ্ছেন। গণযোগাযোগের নতুন মাধ্যম আবিকৃত না হওয়া পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য করবে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দুটি।

কাগজের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল বিলুপ্তির এই সন্ধিক্ষণে নেটওয়ার্ল্ডে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ‘নিউজ এন্ড ভিউজ কনটেন্ট’। এ বাস্তবতায় এখন একজন সাংবাদিক বা রিপোর্টার হয়ে উঠছেন ‘নিউজ কনটেন্ট প্রোভাইডার’। এর সুবাদে সময়টা এখন অনলাইনের। ‘সারাবাংলার’ও।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন