বিজ্ঞাপন

কেইনের পেনাল্টি মিস, ইংলিশদের হারিয়ে সেমিতে ফ্রান্স

December 11, 2022 | 3:02 am

স্পোর্টস ডেস্ক

কোয়ার্টার ফাইনালের হ্যাভিওয়েট ম্যাচে লড়াই দুই দলই করেছে হাড্ডাহাড্ডি। তবে ফ্রান্সের কাছে ইংলিশদের এমন হারে পুরো দায়টা বর্তেছে অধিনায়ক হ্যারি কেইনের কাঁধে। ম্যাচের তখন ৮৪তম মিনিট, ইংল্যান্ড ২-১ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। এর আগে স্পটকিক থেকেই গোল করে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন কেইন। আর শেষ মুহূর্তে ইংল্যান্ড আবারও পিছিয়ে পড়লে আবারও কেইনের সামনে পেনাল্টি। এখান থেকে গোল করতে পারলে ম্যাচে আবারও সমতায় ফিরবে ইংলিশরা। তবে এবার স্পটকিক নিতে এসে গোলপোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন কেইন। আর তাতেই সমতায় ফেরা হয়নি ইংলিশদের। আর শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের হার নিয়ে বিদায় নিতে হয় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। অন্যদিকে ফ্রান্স দুর্দান্ত জয়ে টিকিট কাটে সেমিফাইনালের।

বিজ্ঞাপন

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টারেই ফাইনালের উত্তেজনা। বিশ্বকাপের দুই ফেভারিট ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের লড়াই। কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অরেলিয়েন চুয়ামেনির বুলেট শটের গোলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইংলিশদের সমতায় ফেরান হ্যারি কেইন। আর ৭৮তম মিনিটে অলিভিয়ের জিরুডের দুর্দান্ত হেডারে আবারও ফ্রান্স লিড নেয়।

ম্যাচের ১৭তম মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে শট নেওয়ার জায়গা খুঁজে না পেয়ে পেছনের দিকে চুয়ামেনিকে পাস দেন অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। ডি বক্স থেকে কিছুটা দূরে বল পেয়ে প্রথম স্পর্শে বল নিয়ন্ত্রণে এনে বুলেট শট নেন অরেলিয়েন চুয়ামেনি। আর তার বুলেট শট লাফিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। আর তাতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

বিজ্ঞাপন

বাঁ দিক থেকে এমবাপের উড়ন্ত গতি কিংবা ডান দিক দিয়ে ওসমান দেম্বেলের টর্নেডো গতি। ইংলিশ ডিফেন্ডাররা তা বেশ ভালোভাবেই রুখেছে ম্যাচের প্রথম থেকেই। অন্যদিকে ফরোয়ার্ডে হ্যারি কেইনের দুর্দান্ত খেলোয়াড়ি গুণ অথবা তার দুই পাশ থেকে ফিল ফোডেন কিংবা বুকায়ো সাকার দুর্দান্ত গতির আক্রমণ। ফ্রান্সের জমাট বাধা রক্ষণ সেটাকেও রুখেছে দৃঢ়তার সঙ্গেই।

ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দল গতির প্রদর্শন করেছে প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটই। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ইংল্যান্ডের একটি আক্রমণ এবং ফিল ফোডেনের জোরাল শট রক্ষণে প্রতিহত হয়। এরপরই শুরু হয় ফ্রান্সের একের পর এক আক্রমণ। কখনও বাঁ দিক থেকে আবার কখনও ডান দিক দিয়ে। কখনো কিলিয়ান এমবাপে আবার কখনো ওসমান দেম্বেলের পাশ দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

তবে এমবাপে-দেম্বেলেদের আটকে রেখেও ফ্রান্সকে রুখতে পারেনি ইংলিশরা। ম্যাচের ১৭তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে একজনকে কাটিয়ে ডান দিকে বল বাড়ান এমবাপে। সতীর্থের পা ঘুরে ডি বক্সের ভেতর বল পান অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান। তবে শট নেওয়ার জায়গা খুঁজে না পেয়ে পেছনের দিকে অরেলিয়েন চুয়ামেনিকে ব্যাক পাস দেন গ্রিজি। আর ডি বক্স থেকে একটু সামনে বল পেয়ে প্রথম স্পর্শে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পরের স্পর্শেই বুলেট শট নিয়ে বল জালে জড়িয়ে ফ্রান্সকে লিড এনে দেন চুয়ামেনি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে চুয়ামেনির এটি দ্বিতীয় গোল।

গোল হজম করার পর থেকে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ইংলিশরা। একের পর এক আক্রমণে ফ্রান্সের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখেন কেইন, সাকা আর ফোডেনরা। কখনো উইং দিয়ে আবার কখনো মাঝমাঠ দিয়ে সোজা এগিয়ে গিয়ে আক্রমণ হেনেছে ফ্রেঞ্চ দূর্গে। তবে ভাঙতে পারেনি ফ্রান্সের দৃঢ় রক্ষণভাগ।

অবশ্য ম্যাচের ২৬তম মিনিটে ডান দিক দিয়ে ডি বক্সে ঢোকার মুখে ফাউলের শিকার হন হ্যারি কেইন। তবে ভিএআর দেখে রেফারি ইংলিশদের পেনাল্টির আবেদন নাকোচ করে দেন। এর মিনিট তিনেক পরেই ডি বক্সের ভেতর থেকে দারুণ এক শট নেন কেইন। তবে সেই শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে ফ্রান্সের লিড ধরে রাখেন গোলরক্ষক হুগো লরিস।

বিজ্ঞাপন

এতেই ম্যাচের প্রথমার্ধের ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।

বিরতিতে থেকে ফিরে আক্রমণ করতে শুরু করে ইংল্যান্ড। সুযোগ আসে ৪৭তম মিনিটে। ফিল ফোডেনের নেওয়া কর্নার থেকে বল পেয়ে ভলিতে দারুণ শট নেন বেলিংহাম। তবে তার শট কোনো রকমে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান হুগো লরিস। তবে পরের কর্নার থেকে তেমন কিছুই করতে পারেনি ইংলিশরা। এর মিনিট পাঁচেক পরেই ডি বক্সের ভেতর বুকায়ো সাকা দারুণ এক পেনাল্টি জিতে নেন।

৫২তম মিনিটে ডি বক্সের ভেতর ফ্রান্সের প্রথম গোলরক্ষক অরেলিয়েন চুয়ামেনি সাকাকে ফাউল করলে রেফারি সরাসরি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পটকিক থেকে ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে হ্যারি কেইন গোল করে ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরান। পরের মিনিটেই কুন্দের বাড়ানো লম্বা বল ধরে আক্রমণে ওঠেন র‍্যাবিওট। ডি বক্সের ভেতর ঢুকে দারুণ শটও নেন তিনি তবে তা রুখে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড।

সমতায় ফেরার পর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। দারুণ সব আক্রমণে ফ্রান্সের সঙ্গে বেশ লড়াই করতে থাকে ইংলিশরা। ৬০তম মিনিটে বুকায়ো সাকা দারুণ এক আক্রমণে উঠে শট নেন তবে তার শট সহজেই রুখে দেন লরিস। দুই মিনিট পরে সাকার হাত ধরেই আবারও আক্রমণে ওঠে ইংল্যান্ড। ফ্রান্সের লেফট ব্যাক থিও হার্নান্দেজকে কাটিয়ে পাস দেন হ্যারি কেইনকে। তবে বল পেয়ে শট নিলেও কেইনের শট রুখে দেন লরিস।

দুই দলই এরপর একের পর আক্রমণ চালিয়ে যায়। ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে এসে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানের দুর্দান্ত এক লং বল আসে ডি বক্সে। ইংল্যান্ডের দুই ডিফেন্ডারের মধ্য থেকে লাফিয়ে উঠে বুলেট হেডারে লক্ষ্যভেদ করে ফ্রান্সকে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন অলিভিয়ের জিরুড।

ফ্রান্সের লিড নেওয়ার মিনিট তিনেক পরেই সমতায়ব ফেরার সহজ এক সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। ৮১তম মিনিটে মেসন মাউন্টকে ডি বক্সের ভেতর কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ফেন থিও হার্নান্দেজ। প্রথমে রেফারি পেনাল্টি না দিলেও পরবর্তীতে ইংলিশ খেলোয়াড়দের আবেদনে ভিএআর দেখে পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পটকিক নিতে আসেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই স্পটকিক থেকে গোল করেই ইংল্যান্ডকে সমতায় ফেরানো কেইন এবার বল গোলপোস্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। এতেই ইংল্যান্ডের সমতায় ফেরা হয়নি।

ম্যাচের বাকি সময় দুই দলই বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও আর কেউই গোলের দেখা পায়নি। আর তাতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফ্রান্সের ২-১ গোলের ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয়। তাতেই সেমিফাইনালের টিকিট কাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আগামী ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে লড়বে ফ্রান্স।

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন