বিজ্ঞাপন

উত্তরা-আগারগাঁওয়ে মেট্রোরেল চলতে লাগবে ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

December 27, 2022 | 9:11 am

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আর মাত্র একদিন পরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। আগামীকাল বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বপ্নযাত্রার উদ্বোধন করবেন এবং তিনিই হবেন মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী। উদ্বোধনের পরের দিন থেকে যাত্রী পরিবহন করবে মেট্রোরেল। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের গণপরিবহনে যুক্ত হবে কোনো বৈদ্যুতিক পরিবহন। এজন্য মেট্রো পথের দুই প্রান্তে দুইটি সাব-স্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচলে প্রয়োজন হবে ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে দরকার হবে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যা সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হবে। পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তত্ত্ববধায়নে ডেসকো, ডিপিডিসি মেট্রোর জন্য যৌথভাবে বিদ্যুত সরবরাহ করবে।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্রমতে, এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় রাজধানীর উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণ হবে মেট্রোর উড়ালপথ। এটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তিন ভাগে। প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার। এরপর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল তারপর কমলাপুর পর্যন্ত। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মেট্রোরেলে জ্বালানির পরিবর্তে চলবে বিদ্যুতে। সেজন্য দু’টি আলাদা সাবস্টেশন নির্মাণ করেছে পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি)। পিজিসিবির তত্বাবধায়নে মেট্রোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ডিপিডিসি ও ডেসকো।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে মেট্রোরেলের উত্তরা ডিপো ও মতিঝিল এলাকায় দুইটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাবস্টেশনে পিজিসিবি মানিকনগর গ্রিড সাব স্টেশন থেকে ১৩২ কেভির দু’টি আলাদা সার্কিট, উত্তরা রিসিভিং সাব স্টেশনে পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির একটি সার্কিট এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। উভয় রিসিভিং সাব- স্টেশনে ব্যকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফরমার থাকবে। এছাড়া পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত ডেসকোর ৩৩ কেভি সাব- স্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই ব্যবস্থার ফলে মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা নেই।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কাওসার আমীর আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ডিএমটিসিএল ৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে। পরে আস্তে আস্তে এটা বাড়বে। আমাদের এখানে ১৩২ কেভিতে সাপ্লাই হবে। সাবস্টেশন এবং এখানে দুইভাবে ফিড হবে। ডেসকোর তরফ থেকে যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিলো আমরা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

গত দশ বছরে দুই বার জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। দুইবারই ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা দেশ অন্ধকারে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। মেট্রো যেহেতু বিদ্যুতে চলবে সেহেতু ভবিষ্যতে গ্রিডে এমন ঘটনা ঘটলে ব্যাকআপ হিসেবে বিশেষ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (ইএসএস) ব্যবস্থা রয়েছে। এটা মূলত ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম। যা মেট্রোরেলের রিজেনারেটিভ ব্রাকিং এনার্জি দ্বারা নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে। যদি কখনো গ্রিড বিদ্যুতে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ইএসএস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মেট্রোরেলকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে।

ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেল পরিচালনায় ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মানকাজ প্যাকেজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ শেষ। এই প্যাকেজের আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের রেললাইন, ওভারহেড ক্যাটানারি সিস্টেম, সিগন্যালিং সিস্টেম, অটোমেটিক ফেয়ার কালেকশন ইকুইপমেন্ট স্থাপন করে টেস্টিং শেষ হয়েছে। এছাড়া এএফসি সার্ভারের সঙ্গে ডিটিসিএ’র ক্লিয়ারিং হাউজ সার্ভারের ইন্টিগ্রেশন টেস্টও শেষের দিকে। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে রিসিভিং সাব- স্টেশন ভবনের নির্মান কাজ শেষ করা হয়েছে। এখানে ১৩২ কেভি ক্যাবল লেইং স্থাপন করা হয়েছে।

১৯.৮৯ কিলোমিটার ওভারহেড ক্যাটানারি সিস্টেমের ওয়্যারিংয়ের মধ্যে ১৩.৭৩ কিলোমিটারের ওয়্যারিং শেষ হয়েছে। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য যতটুকু বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে আমরা সেটা প্রস্তুত রেখেছি। আমরা মেট্রোর জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাবো সেখানে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয় তাহলে মেট্রোর নিজস্ব এনার্জি থেকে সাময়িক সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর পর্যন্ত যুক্ত হওয়ায় এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে আর সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

মেট্রোরেল সংক্রান্ত আরও সংবাদ:

সারাবাংলা/জেআর/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন