বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিভাগে ৪৮.৫ শতাংশ পথশিশু

April 10, 2023 | 5:52 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের মোট পথশিশুর (৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী) মধ্যে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থান ঢাকা বিভাগে। আবার এর ২২ দশমিক ৭ শতাংশের অবস্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। পথশিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশ ছেলে এবং ১৮ শতাংশ মেয়ে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পথশিশু জরিপ ২০২২-এর ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনায় সহায়তা করেছে ইউনিসেফ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে পথশিশু জরিপ ২০২২-এর ফলাফল প্রকাশনা করা হয়। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন- পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএস’র মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- বিবিএস’র উপমহাপরিচালক কাজী ইসলাম।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘উন্নয়নের পেছনে যে কিছু কান্না থাকে তারই প্রতিফলন উঠে এসেছে এই পথশিশু সার্ভেতে। তাদের অধিকার নিয়ে গভীর আলোচনা দাবি রাখে। পূর্ণ জরিপ হলে ভালো হতো। যেখানে আমরা জনশুমারি করতে পেরেছি সেখানে ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ হলেও এ জরিপ করা সম্ভব। পথ শিশুরা সম্পদের বড় অপচয়। এদের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া উচিত।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘পথ শিশুদের বিষয়ে হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত এখন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে।’

বিজ্ঞাপন

ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে তিনি এ ধরনের জরিপ পরিচালনার জন্য বিবিএস ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান এম এ মান্নান।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দীপংকর রায়। পথশিশু জরিপ প্রতিবেদন-২০২২ তুলে ধরেন ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং’র পরিচালক মো. মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘যথাযথ জরিপ পদ্ধতি অনুসরণ করে সারাদেশে প্রথম পর্যায় থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের উপর কুইক কাউন্ট পরিচালনার মাধ্যমে স্যাম্পলিং ফ্রেম প্রণয়ন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী পথশিশুদের উপর এই পথশিশু জরিপ পরিচালিত হয়।’

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজনে মেয়েদের তুলনায় ছেলে পথশিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। অর্থাৎ একজন মেয়ের বিপরীতে চার জন ছেলে শিশু রয়েছে। পথশিশুদের গড় বয়স ১২ দশমিক ৩ বছর। পথশিশুদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৪ শতাংশ চট্টগ্রাম বিভাগ এবং সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সিলেট বিভাগে। আর জেলাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বরিশাল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোলা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, কুমিল্লা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জ ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং কক্সবাজার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ পথশিশু প্রধানত দারিদ্রতার কারণে শহরে আসে। ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ আসে বাবা-মা শহরে আসার কারণে। ১২ দশমিক ১ শতাংশ কাজের সন্ধানে বাড়ি ছাড়ে। প্রতি পথশিশুর ৫ জনের ২ জনই একা একা শহরে এসেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১০ জন পথশিশুর মধ্যে তিন জন কখনোই স্কুলে ভর্তি হয়নি। পথশিশুদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে। খুব কম সংখ্যক পথশিশু নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করেছে।

পথ শিশুদের নেশার ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রায় চার ভাগের একভাগ পথশিশু ধূমপান করে। ১২ শতাংশ শিশু মাদকের নেশায় আসক্ত। পথ শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৬৪ শতাংশ পথশিশু তাদের পরিবারে ফিরে যেতে চায় না। বাবা-মা ফেরত নেন না ২১ দশমিক ৩ শতাংশ পথ শিশুকে। ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ শিশুর কোনো পরিবারই নেই। পরিবারে ফেরত যেতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে তাদের অধিকাংশই বলেছেন, ‘স্বাধীনতা নষ্ট হবে।’

পথ শিশুদের অসুস্থতার বিষয়ে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ জ্বরে আক্রান্ত হয়। সর্দিতে ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ, মাথা ব্যাথা ২২ দশমিক ৯, পানিবাহিত রোগে ১০ দশমিক ৯, চর্ম রোগে ৭ দশমিক ৩ এবং অভ্যন্তরীণ রোগে ভোগে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ পথশিশু।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পথশিশুদের মধ্যে কোনো না কোনো কাজে যুক্ত আছে ৯২ দশমিক ১ শতাংশ ছেলে এবং মেয়ে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এসব শিশুর মধ্যে ময়লা কুড়ায় সবচেয়ে বেশি ২০ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া ফুল বিক্রি করে ১৩ শতাংশ শিশু।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন