বিজ্ঞাপন

৮ মেগা প্রকল্পে ব্যয় ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা 

June 25, 2023 | 3:27 pm

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত আট মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে সবসময় নজর রাখছে সরকার। শুরু থেকে গত মে মাস পর্যন্ত এসব প্রকল্পের আওতায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর গড় ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেল (আংশিক) উদ্বোধন হলেও প্রকল্প শেষ হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। এরই মধ্যে বেড়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয়। সম্প্রতি তৈরি করা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

প্রকল্পগুলো হলো— পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

পদ্মা সেতু: গত বছরের ২৫ জুন উদ্বাধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি।  গত মে পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৭৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে মোট ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রী সভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

মেট্রোরেল: বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত সময়ে জনগণের চলাচলের জন্য খুলে গেছে এ অংশটি। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশ খুলে দেওয়া হতে পারে। শুরু থেকে মে পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ৮৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার  ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শুরু থেকে মে পর্যন্ত প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কোভিড মহামারিতে সঞ্চালন লাইনের কাজ দেরি হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন পিছিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে। সেই সঙ্গে বর্তমান ঋণ পরিশোধের জটিলতাও এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ: আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে গত মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৫১২ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৭৭ শতাংশ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত কার্যক্রম: মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ( ১২টি প্রকল্পযুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে  ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৬১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৩০ শতাংশে।

বিজ্ঞাপন

রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প: এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। গত মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: এ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত  মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৬২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৮৪ শতাংশে।

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেল পথ নির্মাণ: দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু মেগা প্রকল্প এরইমধ্যে বাস্তবায়ন পর্যায়ে আছে। কিছু শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। কিছু প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। বড় প্রকল্পের প্রতি জনগণের আগ্রহ আছে। সরকারেও বিশেষ নজর আছে। এ সব প্রকল্পে অগ্রগতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে এসব প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্বও দেওয়া হয়েছে। সবসময় আমরা চেষ্টা করি, কোনোভাবেই যেন এসব মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়।’

সারাবাংলা/জেজে/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন