বিজ্ঞাপন

দুইপক্ষের দ্বন্দ্বে ৭ মাস ধরে অচল কুবি শিক্ষক সমিতি

July 25, 2023 | 9:45 pm

মোহাম্মদ রাজীব, কুবি করেসপন্ডেন্ট

কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত মাস ধরে নেই শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করলেও শিক্ষকদেরই একটি পক্ষ কর্তৃক কেন্দ্র দখলের মুখে ভেস্তে যায় নির্বাচন। এরপর আর নির্বাচনের মুখ দেখেনি সংগঠনটি। এতে অচল হয়ে পড়েছে শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠন। কবে নাগাদ নতুন কমিটি গঠন হবে, সে সম্পর্কেও জানে না কেউ। এর ফলে শিক্ষকদের ওপর বিভিন্ন অন্যায্য আদেশ চাপিয়ে দেওয়া সহজ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রসূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন সম্ভব না হলে ১৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সে অনুযায়ী ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২৩ এর নির্বাচন আয়োজন করে তৎকালীন পরিষদ। তবে নির্বাচনের দিন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা ভোট কেন্দ্র দখল করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেননি। সময়মতো ভোটগ্রহণ করতে না পারায় নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুইটি পক্ষ রয়েছে। উভয়ে নিজেদেরকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ বলে দাবি করে। একটি অংশের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. কাজী কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আমান মাহবুব। সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির ১৫টি পদেই নেতৃত্ব দিয়েছে তাঁদের পক্ষ। আরেকটি অংশের দায়িত্বে রয়েছেন সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান। দ্বিতীয় অংশের শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে উপাচার্যপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তাঁদের নেতা ওমর সিদ্দিকী আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

২০২৩ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও কমিশন গঠনে শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করা হয়নি দাবি করে নির্বাচনে প্রাথী দেয়নি উপাচার্যপন্থি এ অংশটি। এরপর ভোটগ্রহণের নির্ধারিত দিনে নিরাপত্তার কথা বলে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোটগ্রহণে বাধা দেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও তার অনুসারীরা। নির্বাচন কমিশন তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ভোটগ্রহণের সুযোগ করে দিতে একাধিকবার অনুরোধ করলেও কেন্দ্র ছাড়েননি তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বেলা ২টায় ভোটগ্রহণের সময় শেষ হলে কেন্দ্র ত্যাগ করেন তারা।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘােষণার পর অনাস্থা প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বর চিঠি দেয় তারা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনাস্থা প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ সভা ডাকার কথা। তবে এ সময়ের মধ্যে সাধারণ সভা আহ্বান করা হলেও যোগ দেয়নি উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা। ফলে সভার কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় সে সময় বাধ্য হয়ে সভা মূলতবি করে তৎকালীন কমিটি।

এরপর থেকে অচল শিক্ষক সমিতি। তবে কমিটি না থাকায় শিক্ষকরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করছেন উভয়পক্ষের নেতারা। কামাল-আমান সমর্থিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি মোহাম্মদ মাকসুদুল করিম বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের দিন শিক্ষকদের একটি পক্ষ বিভিন্ন ইস্যু তুলে নির্বাচন হতে দেয়নি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি না থাকলে শিক্ষকরা তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করতে পারে না। শিক্ষকের স্বার্থেই কমিটি গঠন প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

ওমর-জাহিদ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থিত নেতা এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কমিটির দায়িত্বে যারা ছিল তারা দূরভিসন্ধিমূলকভাবে কোনো প্রক্রিয়া না মেনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার কথা চিন্তা করে তফসিল ঘোষণা করায় আমরা নির্বাচনে যাইনি। তবে শিক্ষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্যই সমিতি থাকা জরুরি।

একে অপরের ওপর দোষ চাপালেও উভয় পক্ষই এখন সমিতি গঠনের পক্ষে বলে দাবি করছেন তারা। তবে উদ্যোগের অভাবে গঠন হচ্ছে না নতুন কমিটি।

কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২২ এর সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজন করেছি। সাধারণ সভাও ডেকেছি। তারা নির্বাচন হতে দেয়নি, আবার সাধারণ সভায়ও আসেনি। শিক্ষক সমিতি না থাকার পুরো দায় তাদের। এখন নির্বাচন দিতে হলে দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’

উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের নেতা কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেটার জন্য আমরা উভয়পক্ষই দায়ী। সর্বশেষ যারা সমিতির দায়িত্বে ছিল তারা এবারও চতুরতার সঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। সে জন্য আমরা নির্বাচন বাধা দিয়ছি। কিন্তু এখন আমরা চাই নির্বাচন হোক। শিক্ষক সমিতি থাকুক।’

বিজ্ঞাপন

উভয়পক্ষ চাইলেও কমিটি কেন গঠন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখন কাউকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা উদ্যোগ নেব। তারাও যদি উদ্যোগ নেয়, আমরা সাড়া দেব।’

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন