বিজ্ঞাপন

আ.লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ‘হচ্ছেন’ ড. সাদিক

August 8, 2023 | 11:54 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে বিরোধীদলকে মোকাবিলার পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর এবার নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সাবেক এক চৌকষ ও দক্ষ আমলাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। এই পদে নেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন সাবেক শিক্ষা সচিব, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক।

বিজ্ঞাপন

চলতি আগস্ট অথবা আসছে সেপ্টেম্বরে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মোহাম্মদ সাদিককে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যানির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্র সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ৬ আগস্ট গণভবনে বিশেষ বর্ধিত সভা করে সারাদেশের তৃণমূল প্রতিনিধিনের নির্বাচনী গাইডলাইন দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তৃণমূলের ৪৩ জন প্রতিনিধিকে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দিয়ে সারাদেশের দলীয় মাঠ পরিস্থিতির কথাও শুনেছেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক গতিশীলতার পাশাপাশি নির্বাচন সমন্বয় করার কাজটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে হিসাবে নির্বাচনের আর মাত্র চার মাস বাকি। এ লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভবনে অফিস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে সেখানে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জন্য রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, ড. মোহাম্মদ সাদিকসহ মহানগরের কয়েকজন নেতা ও ভবনসংশ্লিষ্ট স্থাপত্য প্রকৌশলীরা। রুম বরাদ্দের সময় সেখানে ড. মোহাম্মদ সাদিকের উপস্থিতি তাকে কো-চেয়ারম্যান করা নিয়ে অনেকের ধারণাকে পোক্ত করেছে। এর আগে, ৩ জুন রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত এইচ টি ইমামের কক্ষে বসা শুরু করেন সদ্য সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। এইচ টি ইমামের কক্ষে বসার পর কবির বিন আনোয়ার দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। গণমাধ্যমেও এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত। তবে এখন পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড কবির বিন আনোয়ারকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। প্রসঙ্গত, এইচটি ইমাম ২০২১ সালের ৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ওই সময় থেকে এই পদে আর কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, এখনই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ার চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। কারণ, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কো-চেয়ারম্যানের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি সারাদেশের নির্বাচনি প্রচারাভিযানসহ সাংগঠনিক বিষয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। দলীয় সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানামুখী ব্যবস্তায় সম্পৃক্ত থাকেন। তাই জাতীয় নির্বাচনকালীন সময় কো-চেয়ারম্যানের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যিনি সারাদেশে নির্বাচনের অবস্থান পর্যবেক্ষণ, তদারকি, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনাসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মুখোমুখি হওয়াসহ নানাবিধ কাজে জড়িত থাকেন।

১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানে পদটি আলোচনায় আসে। সেবার সাবেক সচিব ও কূটনীতিক শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ওই নির্বাচনে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। অবশ্য সেবার তিনি নিজেও প্রার্থী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়।

শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুর পর এইচ টি ইমামকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা পায়। ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে এইচ টি ইমাম দায়িত্ব পালন করেন। তবে তার মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত এই পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কাউকে দায়িত্ব দেননি। তবে নির্বাচনের যেহেতু আর কয়েকমাস বাকি তাই শিগগিরই এই পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’ আর এই পদে পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাসচিব ড. মোহাম্মদ সাদিকের নাম তালিকার সর্বাগ্রে রয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি ড. মোহাম্মদ সাদিকের কোনো মন্তব্যও জানা যায়নি।

ড. মোহাম্মদ সাদিক ১৯৫৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক, সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রথম সচিব ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অবসর পরবর্তী সময়ে সর্বশেষ তিনি পিএসসির চেয়াম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. মোহাম্মদ সাদিক আশির দশকের একজন স্বনামধন্য কবি ও গবেষক। তিনি কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারও অজর্ন করেছেন। এ ছাড়া ভারতের ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাগরী ভাষা ও লিপির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন