বিজ্ঞাপন

‘ঝুঁকির মুখেই থাকছে মত প্রকাশ ও স্বাধীন সাংবাদিকতা’

August 30, 2023 | 9:05 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ এর খসড়ায় নির্বতনমূলক ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর বিতর্কিত ধারাগুলোর সন্নিবেশ ঘটেছে। যদিও শাস্তি এবং আমলযোগ্য ধারার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়াটি আইনে পরিণত হলে, ডিজিটাল মাধ্যমে মত ও তথ্য প্রকাশ করলে ব্যক্তি আইনি হেনস্তার শিকার হবেন বলে মন্তব্য করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন বাস্তবতায় সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চর্চা, উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তুর আলোকে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩০ আগস্ট) টিআইবির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন: একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী ব্যবস্থাপক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম ও ডাটা প্রোটেকশন অফিসার ড. মো. তরিকুল ইসলাম তুলনামূলক পর্যালোচনাটি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে উপস্থাপনাটি তুলে ধরেন শেখ মন্জুর-ই-আলম।

এতে বলা হয়, প্রস্তাবিত আইনের ধারা ৮, ৯, ১০, ও ১১ অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ডাটা বা ইনফরমেশন দুটোই অপসারণ করার জন্য বিটিআরসিকে বলবেন এবং ৮(২) তে বলা হয়েছে- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করলে কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ কিংবা জনশৃঙ্খলা বিষয় ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ বা ঘৃণা সঞ্চার করে, তা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নিতে পারবে। এসব বিষয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এই আইনে নেই। তাই এখানে ব্যাখ্যা ও অপব্যাখ্যার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করতে হবে, যা খুবই বিপদজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ক্ষতিকর কন্টেন্ট অপসারণের প্রয়োজন আছে, তবে তা সীমিত পরিধির মধ্যে থাকতে হবে। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিকাল রাইটসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সর্বোপরি প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে মত প্রকাশ, কথা বলা, কিংবা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বাদ দিয়ে অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা সাংবিধানিক অধিকারকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই আইনে অপরাধ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে ঢালাও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধসংক্রান্ত কারিগরি জ্ঞান বা বিশেষায়িত সক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে কি-না সেটি পর্যালোচনা করা দরকার। একইসঙ্গে বিচারিক নজরদারির কথা বলা হয়নি। আমল অযোগ্য কিংবা জামিনযোগ্য ধারা হলেও আমাদের চিন্তার অনেক বিষয় আছে। কারণ, পুলিশের অ্যারেস্ট করার অনুমতি থেকেই যাচ্ছে। জামিন নিতে হবে উচ্চ আদালত থেকে। এক্ষেত্রে ধারার বিধান পরিবর্তন করলেও আমরা কিন্তু একই জায়গায় আছি, কারণ পুলিশ মনে করবে এবং অ্যারেস্ট করবে।

খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাস হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনে পরিণত হওয়ার এবং এর ফলে সংবিধানপ্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মৌলিক দুর্বলতা খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রয়ে গেছে। যা উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। খসড়া আইনে মানুষের মৌলিক অধিকার অর্থাৎ মত প্রকাশের অধিকার, বাক স্বাধীনতা, বিবেক, চিন্তা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করার মতো উপাদানগুলো বাস্তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অনুরূপ রয়ে গেছে। সুতরাং পূর্বসূরীর মতো এটিও যে একটি নির্বনমূলক আইনে পরিণত হতে চলেছে- এমন ধারণা হওয়া মোটেই অমূলক নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি, ডিজিটাল মাধ্যমে মত ও তথ্য প্রকাশ করলে ব্যক্তি ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন- এমন ধারণাও সাধারণের মধ্যে অধিকতর জোরালো হবে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, সংবিধানে স্পষ্টভাবে ঘোষিত মত প্রকাশ, বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অধিকারগুলো অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মতো পর্যায়ে আমরা চলে যাচ্ছি। তাই আইনটি যে পর্যায়ে আছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন