বিজ্ঞাপন

চামড়া শিল্প হবে ব্র্যান্ড, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

October 12, 2023 | 11:30 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চামড়াজাত ও পাদুকা শিল্পকে বিশ্বে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড হিসাবে পরিচিত করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামড়া শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে করে দেওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। একইসঙ্গে ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাত খেকে সামগ্রিক রফতানি আয় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার আশাবাদ করেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চামড়া খাতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ বা ব্লিস-২০২৩র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চামড়াজাত পণ্য আর পাদুকা শিল্প গত এক দশকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। তবে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে আমরা যতবেশি সুযোগ দেই সেই সুযোগটা কিন্তু আমরা আসলে চামড়াজাত পণ্য বা পাদুকা শিল্পের জন্য দেই না। এমনকি পাটজাত পণ্যের জন্যও দেই না। সেইক্ষেত্রে আমরা যদি সম-সুযোগ দিতে পারি তাহলে আরও বেশি আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পাবে বলে বিশ্বাস করি।’

এই ক্ষেত্রে কি কি করণীয় আমরা অবশ্যই দেখবো। তা ছাড়া এটি তো একটি শ্রমঘন খাত। কারণ প্রত্যক্ষভাবে এখানে দুই লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরও দশ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ বিশ্বের ৮তম বৃহত্তম পাদুকা উৎপাদক ১১তম ভোক্তা ও ১৩তম রফতানিকারক দেশ বলে অবহিত করেন।

দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে দেশীয় বাজার সম্প্রসারিত করার দিকেও দৃষ্টি দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, অনেক দেশের অনেক পণ্য তারা এখান থেকে মূলটা তৈরি করে নিয়ে যায়। নিজেদের দেশে সেটিকে তারা ফিনিশিং দিয়ে নিজেদের নামে বাজারজাত করে। আমরা সেই ক্ষেত্রেও নিজেরা নিজস্ব কিছু কিছু ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারি কি না? বাংলাদেশ ব্র্যান্ড হিসেবে সেগুলো করতে পারি কি না আমার মনে হয় সে বিষয়ের দিকেও একটু নজর দিলে ভালো হবে।’

বিজ্ঞাপন

এই ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন। আমি চাই, আমাদের পণ্য আামদের নামে বাজারজাত হোক আমাদের দেশের নাম বাড়ুক। দেশের নাম সুন্দর হোক বৃদ্ধি পাক সেটিই চাই বলে আশাবাদ করেন সরকারপ্রধান।

টানা মেয়াদে সরকারে বিভিন্ন খাতে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পশুর চামড়া সংরক্ষণে সবাইকে সচেতন করারও আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘বেপজা কর্তৃক একটি বিশ্বমানের ইটিপি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে চামড়া শিল্প উন্নয়নের জন্য আমাদের চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করার ঘোষণা করছি। যা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আলাদা করে দেব। যেন ছোট ছোট সমস্যাগুলো যেন না হয়।’

চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ অঞ্চলভিত্তিক ট্যানারি শিল্প গড়ে তোলারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমাদের খুব একটা বড় শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে। এটি আমরা পর্যায়ক্রমিকভাবে করব। কারণ কোভিড-১৯ এর অতিমারি এবং মূল্যস্ফীতি তারপরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং সেখানে স্যাংশন কাউন্টার, স্যাংশন যার ফলে অর্থনৈতিকভাবে প্রায় প্রতিটি দেশেই কিন্তু এখন একটা সমস্যায় ভুগছে। সমস্যাটা তো আমাদেরও আছে। তার পরেও আমরা চালিয়ে যাচ্ছি আমাদের উন্নয়নের ধারাটাকে।’

বিজ্ঞাপন

চামড়া শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা’ ২০১৯ ও চামড়া খাতের রুপরেখা-২০২২ এরইমধ্যে প্রণয়ন করেছি। আমরা ক্রমবর্ধমান সরবরাহের পুরোটাই ফিনিশ প্রোডাক্ট তৈরি করে রফতানি করতে পারলে অনায়াসে ২০২৫ সালের মধ্যে চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত থেকে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জন সম্ভব হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাত খেকে সামগ্রিক রফতানি আয় যেন ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। আর এই বিষয়ে আমাদের সুর্নিদিষ্ট এবং কার‌্যকর কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এখানে উপস্থিত আছেন, তাকে অনুরোধ করব এই ব্যাপারে একটু উদ্যোগ নিতে। তার কারণ আমি এখন যার উপরে দায়িত্ব দেই তারাই বসে থাকবেন। এ-ওর কথা বলবেন। ও ওর কথা বলবেন, সেটি না বলে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

পাশাপাশি বাস্তবায়নযোগ্য সুর্নিদিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশে প্রচলিত লাল ফিতার ধারণার অবসান হলে ব্যবসা বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে আশাবাদ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটা মানসিকতা আছে, ওই যে বলে আমলতান্ত্রিক জটিলতা। ভাবে যে একটু আটকায় রাখতে পারলে একটু টাইট দিতে পারলে বোধহয় সব ভাল হবে। সব সময় সেটা ভালো হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন; এই নীতিতেই আমি বিশ্বাস করি।’

সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার আহ্বান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই কাজের ক্ষেত্রে এই লালফিতার দৌরাত্ম্য যেন আর না থাকে। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও বলব, যত দ্রুত আমরা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারি কিন্তু আবার সেখানে মাঝে মাঝে একটু আটকে পড়ে যায়। সেটি এমন কোনো ব্যাপার না। একটু আন্তরিক হলেই কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে যেন সিদ্ধান্তের পদক্ষেপটা বাস্তবায়ন হয়, সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। টাইম ইজ টু শর্ট। এটি মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু আমার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

সরকার আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজার খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দরটা হয়ে যাবে। আমরা কিন্তু সরাসরি আমাদের কার্গো পাঠাতে পারব। সেটি হচ্ছে সবথেকে বড় কথা। আমরা সেই ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছি।’

বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্যে সরকার সারাদেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বিনিয়োগ আকৃষ্টে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানামুখী সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির করার লক্ষ্যেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, হংকং, ভারত, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কম্বোডিয়াসহ ১৫টি দেশের ক্রেতা, ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ, ব্র্যান্ড প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন।

রফতানিকারদের সমিতি লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন