বিজ্ঞাপন

দত্তকের নামে ৭০ হাজারে নবজাতককে বিক্রি, ৬০ হাজার নিল ২ পুলিশ

October 27, 2023 | 11:20 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: যশোরের চৌগাছায় এক নবজাতককে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিশুটির মা-বাবার বিরুদ্ধে। এদিকে সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার খবর পান পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই)। তারা ওই মা-বাবাকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৬০ হাজার টাকাই নিয়ে নেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এমন ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামে। এ ঘটনায় যে এসআইকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন— চৌগাছা থানার এসআই শামীম হোসেন ও এসআই আশিক হোসেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আন্দুলিয়া গ্রামের এক গৃহবধূ স্বামী দুই বছর ধরে কারাবন্দি। এ অবস্থায় একই গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ তরুণী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে ওই তরুণের পরিবার নবজাতককে তাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে মেনে নেয়নি। পরে নবজাতকটিকে তার মা-বাবা পাশের টেঙ্গুরপুর গ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দেওয়ার নাম করে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ খবর আবার এসআই শামীমকে জানিয়ে দেন পুলিশের এক সোর্স। পরে এসআই শামীম ওই মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মামলা করার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। এসআই আশিক হোসেন তার সঙ্গে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এসব ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে গত মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম ও এসআই শামীম ওই যুগলের বিয়ে দিয়ে দেন। একইসঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, আমার চার দিন বয়সী মেয়েকে দত্তক দিয়েছি। বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকা পেয়েছি। পুলিশ মামলার ভয় দেখিয়ে সেই টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে গ্রামের লোকও জড়িত। স্বামীর কাছে আর সামান্য কিছু টাকা আছে। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি আমার সন্তানকে মেনে নেয়, তাহলে আমি আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনব।

নবজাতকের জন্মদাতা বাবা বলেন, ‘পুলিশের চাপে পড়ে সন্তানকে বিক্রি করেছি। আমাদের বিয়ে না হলেও সন্তান হয়েছে, এ কথা শুনে এসআই শামীম ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রথম দফায় ৩০ হাজার টাকা ও পরে আরও ২৫ হাজার টাকা নেন তিনি। এ ছাড়া তাদের সোর্স আরও পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে।’ মঙ্গলবার স্থানীয় মেম্বারের উপস্থিতিতে এসআই শামীম তাদের বিয়ে দেন বলে জানান।

ওই তরুণের বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মাঠে কাজ করে সংসার চালাই। আমার একমাত্র ছেলে না হয় অন্যায় করেছে। সে তো বিয়ে করেছে। এরপরও পুলিশ আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি অনেক হাতে-পায়ে ধরে ২৫ হাজার টাকায় রাজি করাই। এরপর গ্রামের একজনের কাছ থেকে ধার করে ১৫ হাজার টাকা মেম্বার মহিদুল ইসলামের কাছে দিয়েছি। তাকে আরও ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে সে জানিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে ওই নবজাতককে যে দম্পতি দত্তক নিয়েছেন, তাদের বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। ওই দম্পতির পরিবারের সদস্যরা বলছেন, শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য যশোরে নেয়া হয়েছে। শিশুটিকে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে দত্তক নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা। বলেন, ঝামেলা হলে তারা শিশুটিকে ফিরিয়ে দেবেন।

জানতে চাইলে ইউপি মেম্বার মহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি ৭০ হাজার টাকায় বাচ্চাটি বিক্রি করা হয়েছে। এখন তারা যদি বাচ্চা ফেরত নিতে চায়, আমি সহায়তা করব।

অভিযুক্ত চৌগাছা থানার এসআই শামীম হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি মীমাংসার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মুকুল আদালত থেকে কাগজপত্র করে বাচ্চাটিকে কিনেছে।’ টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘শিশু বিক্রির বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই এসআইকে যশোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা এখন যশোরে আছে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন