বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে টোল নিয়ে আপ্লুত ঝুমুর

October 28, 2023 | 1:04 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে টোল গ্রহণ করে আবেগে আপ্লুত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল আদায়কারী ঝুমুর আক্তার। তিনি বলেছেন, টানেলের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজেরও একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বেলা ১২টা ২ মিনিটে টানেলের টোলপ্লাজায় গিয়ে থামে। চালকের পাশের আসনে বসা প্রধানমন্ত্রী নিজেই টোল তুলে দেন ঝুমুরের হাতে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে ওই কর্মীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বলভাবে কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায়। টোল পরিশোধের পর স্লিপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেটি আবার নিরাপত্তা কর্মীদের দেখান।

এরপর মাত্র তিন মিনিটে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেল পাড়ি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হন দক্ষিণ প্রান্তে কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়।

প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর টানেল অতিক্রমের পর টোল আদায়কারী ঝুমুর আক্তারের কাছে সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চান। এ সময় তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি, টানেলের সঙ্গে আমার নিজেরও একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী টানেলের প্রথম টোল প্রদানকারী এবং তার কাছ থেকে টোল নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ এক নতুন অধ্যায়, গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করেছে বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম আমরা। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’

বিজ্ঞাপন

সকাল পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমিতে আসে। প্রধানমন্ত্রী পতেঙ্গায় উদ্বোধনস্থলে পৌঁছালে মন্ত্রীপরিষদের কয়েকজন সদস্য, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা স্বাগত জানান। এসময় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক আয়োজন উপেভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। ফোটানো হয় আতশবাজি। এরপর টানেলের উদ্বোধন করে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

টানেল উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

টানেলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও ৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও দুটি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ভবন, রাঙ্গুনিয়া জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স ভবন, পতেঙ্গা এয়ারপোর্ট রোডের মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সড়ক’ এবং পটিয়ার শিকলবাহা খালের উপর ৩৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার ব্রিজ।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর চট্টগ্রাম’ এবং নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে ‘সীম্যান্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।

টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’ মডেলে দৃশ্যমান হবে। এই টানেল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তি, চট্টগ্রাম শহরের যানজট হ্রাস, আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যামান ও গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চল এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশসহ চট্টগ্রাম বন্দর ও প্রস্তাবিত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। টানেলটি চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রায় শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।’

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম সড়ক টানেল। দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও অকুণ্ঠ সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর দুইতীরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন, এর মধ্য দিয়েই মূল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।

টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

নির্মাণ কাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই সুড়ঙ্গপথের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

টানেল দিয়ে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন