বিজ্ঞাপন

‘লাশ কাটা’র টাকা নিয়ে মারামারি, চমেক কর্মচারির মৃত্যু

November 6, 2023 | 7:57 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) দুই কর্মচারির মধ্যে মারামারিতে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মর্গে লাশ কাটা বাবদ সংগ্রহ করা ‘বকশিসের’ ভাগাভাগি নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে চমেক কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কর্মচারির মৃত্যু হয়েছে। এরপর অভিযুক্ত আরেক কর্মচারিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

মৃত মো. ইলিয়াছ (৪৭) চমেকের ফরেনসিক বিভাগে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়।

গ্রেফতার সমীরণ নাথ (৪৩) ফরেনসিক বিভাগের অধীন মর্গের পরিচ্ছন্ন কর্মী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর পাঁচলাইশ থানার প্রবর্তক মোড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সীমানার ভেতরেই ফরেনসিক বিভাগের মর্গ, যেটি সাধারণভাবে ‘লাশ কাটা ঘর’ হিসেবে পরিচিত।

চমেকের মর্গে দায়িত্বরত অস্থায়ী কর্মচারি কদম আলী সারাবাংলাকে জানান, রোববার বিকেলে মর্গের সীমানার বাইরে সামনের ফুটপাতে ইলিয়াস ও সমীরণের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুজন মারামারি শুরু করেন। সমীরণের ধাক্কায় ইলিয়াস ফুটপাত থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) ‍নুরুল আলম আশেক সারাবাংলাকে জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করে। সোমবার বিকেলে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাক্তার সাহেনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলিয়াস এবং সমীরণ উভয়ই আমাদের কলেজের স্থায়ী স্টাফ। আমরা শুনেছি, গতকাল (রোববার) বিকেলে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। একজন আরেকজনকে ঘুষি মেরেছে। আজ (সোমবার) একজন মারা গেছে। কী কারণে তারা মারামারি করল, সেটা আমরা জানতে পারিনি। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তাদের তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছি।’

চমেকের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার মো. শাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অধ্যক্ষ সাহেনা জানিয়েছেন।

মর্গসংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপঘাতে ‍মৃতদের অথবা মৃত্যুরহস্য উন্মোচনের জন্য আলামত সংগ্রহ করতে মর্গে যে লাশ কাটা হয়, তার জন্য সরকারিভাবে কোনো ‘ডোম’ নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফরেনসিক বিভাগের অফিস সহকারী ইলিয়াসসহ তিনজন কর্মচারি বিষয়গুলো দেখভাল করতেন।

লাশ কাটার জন্য অস্থায়ীভাবে ‘ডোম’সহ আরও কয়েকজন কর্মী তাদের তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। এজন্য সরকারিভাবে কোনো টাকা বরাদ্দ না থাকায় লাশের স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ‘বকশিস’ আদায় করা হয়ে থাকে। বকশিস বাবদ আদায় করা টাকা পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ হয়।

বিজ্ঞাপন

সেই টাকার ভাগ নিয়েই ইলিয়াস ও সমীরণের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা একপর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয় বলে মর্গসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে এসআই নুরুল আলম আশেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘মর্গে লাশ কাটা বাবদ তোলা টাকার ভাগ নিয়ে ঝগড়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। এটা যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে।’

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে একই অফিসের দুই কর্মচারির মধ্যে ঝগড়া হয়েছে বলে শুনেছি। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। গ্রেফতার সমীরণের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন