‘সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে ক্ষমতার গ্যারান্টি আদায় করা হয়েছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার গ্যারান্টিপত্র আদায় করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ‘দেশ এক ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকাল পার করছে। চার দিকে শুধু অধিকার বঞ্চিত মানুষের করুণ আর্তনাদ আর হাহাকার। ভয় আর শঙ্কা মানুষের পিছু নিয়েছে। এক ব্যক্তি, এক দলের দুঃশাসনে বাংলাদেশের মানুষ যেন বন্দি শিবিরে আটকে আছে। মানুষের মৌলিক অধিকার উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার গ্যারান্টিপত্র আদায় করা হয়েছে।’

‘আর সে জন্য জনগণের পছন্দে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক রীতিকে গুম করা হয়েছে। জনগণকে দমন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এখন সর্বগ্রাসী রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনকে চির বিদায় দিতে চলছে নানা সর্বনাশা আয়োজন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তোলা মাত্রই রক্ত ঝরানো হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষদের। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগোষ্ঠীই এখন শেখ হাসিনার বুলেটের টার্গেট। মূলত, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন মৃত। বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করাই আওয়ামী লীগের নিজস্ব শৈলী’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনের জন্য সব শক্তি নিয়োগ করেছে আওয়ামী সরকার। আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের শর্ত রক্ষা না করে শেখ হাসিনার ইচ্ছার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে। তফসিল ঘোষণার সাথে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল ভোট গ্রহণ দিনে হবে, না নিশিরাতে হবে।’

রিজভী বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ভোটারশূন্য একতরফা নির্বাচনে দারুণ উল্লসিত শেখ হাসিনা। কারণ, এই পদ্ধতিতে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকার বিকল্প নেই। বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে জনগণের লাখ লাখ কোটি টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়। নেতা-কর্মীদের ধনসম্পত্তি বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশের প্রতি ধূলিকণায় দুর্নীতিকে ব্যাপ্ত করেছেন শেখ হাসিনা।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ ধৈর্য সহকারে গণআন্দোলনে আছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় এখন একমাত্র লক্ষ্য।’

আওয়ামী লীগকে শনির দশায় পেয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘ওরা ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে শুরু করেছে রক্তাক্ত তাণ্ডব। বিএনপি নেতা-কর্মীরা পাইকারি হারে গ্রেফতারের শিকার। তাদের ধরতে না পারলে গ্রেফতার হচ্ছেন বাবা, শ্বশুর, ছোট ভাই এমনকি বাড়ির মেয়েরা। যেহেতু আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তরুণরা সামনের সারিতে সেহেতু তরুণদের ওপর চলছে সহিংসতা। সশস্ত্র আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিরোধীদের বাসার গেট ভেঙে, তালা ভেঙ্গে ও জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকছে।’

তিনি বলেন, ‘তল্লাশির নামে পুলিশ গ্রামের পর গ্রাম বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ির সব ঘর তছনছ করে দিচ্ছে। বাবার মৃত্যুতে জামিন মেলেনি কারাগারে আটক ছাত্রদল নেতার। ছাত্রদল নেতাকে না পেয়ে বাবাকে হত্যা করেছে আওয়ামী ক্যাডাররা।’

রিজভী বলেন, ‘বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে উসকানি দিচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগাররা। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ১ নং সাতলা ইউনিয়নসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা গণমাধ্যমে হরহামেশাই প্রকাশ হচ্ছে। সামাজিক বন্ধন, স্থিতি ও সৌহার্দ্য ভেঙে ফেলছেন শেখ হাসিনা। নিজের গোষ্ঠীস্বার্থে দেশকে চিরস্থায়ী বিভেদ-বিভাজন ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিজমে নতুন নতুন পথের সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। শেখ হাসিনা আওয়ামী ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার একটি ছক ও বিন্যাস ধরেই এগুচ্ছেন। এজন্যই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বন্দি করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি যে ফেরাউনের রাজত্ব কায়েম করেছেন তার পতন হবেই। একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে জনগণ প্রাণ হাতে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। জনগণের ক্ষমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন স্বৈরাচারীর জন্য হবে সতর্কবার্তা।’

রিজভী বলেন, ‘দেড় দশকের রাজনৈতিক সংকট এখন এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণই বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা। বৈশ্বিক গণতন্ত্রের যুগে এ লড়াই শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, এ লড়াই পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী সব মানুষের। এ লড়াই বাংলাদেশের মানুষের হারিয়ে যাওয়া, অজস্র মৃত্যু, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া জনগণের ভোটাধিকার অর্জনের লড়াই। বিশ্ব বিবেক আজ জগ্রত। বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্ঠুর একনায়ক শেখ হাসিনার শোষণ-অত্যাচারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামকে সমর্থন দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষ।’

সারাবাংলা/এজেড/একে