বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা ২০২৩: অনেক অর্জনের বছরে বিশ্বকাপ ব্যর্থতা

December 31, 2023 | 11:56 pm

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট

ঘড়ির কাঁটা ১২টা পেরুতেই শুরু হবে নতুন আর একটা বছর। ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে ২০২৩ পেরিয়ে চলে আসবে ২০২৪। নতুন সূর্যদয় হবে ২০২৪ এর। নতুন বছর শুরুর আগে চলছে পুরনো বছরে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব। ২০২৩ সালটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ছিল ঘটনাবহুল বছর। মাঠের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি জয় মিলেছে এই বছরেই। কিন্তু বিশ্বকাপ ব্যর্থতার চাদরে সেসব অর্জন ডেকে পরেছে পুরোপুরি। মাঠের বাইরের বিতর্কও ছিল চরম। সব মিলিয়ে বছর শেষে ফিরে দেখা যাক তেইশের বাংলাদেশ ক্রিকেট।

বিজ্ঞাপন

অর্জনের কথা দিয়েই শুরু করা যাক। চলতি বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৪৯ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, তাতে জয় ২৪টি। এক বছরে সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড এটা। পেরিয়ে গেছে ২০১৮ সালে ৪৪ ম্যাচে ২১ জয়ের রেকর্ড। এবছর ১০ টি-টোয়েন্টি খেলে ৮টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। আর ৪ টেস্ট খেলে জয় মিলেছে ৩টিতেই। তবুও বিশ্বকাপ ভরাডুবিতে এসব কী আর মনে পরে! ওয়ানডে বিশ্বকাপে চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসা, তামিমের অবসর কাণ্ড ও বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়া নিয়ে মাঠের বাইরের ক্রিকেটে তুলকালাম বেঁধেছিল। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। তবে বড় টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার বছরে বাংলাদেশ নারী দল ও যুব দল সাফল্য এনে দিয়েছে। বছর শেষে যুবাদের হাত ধরে মিলেছে এশিয়া চ্যাম্পিয়নের ট্রফি। প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। বছরের শেষ ভাগে জাতীয় দলের সেরা প্রাপ্তি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে খুঁজে পাওয়া।

বিশ্বকাপ এবং ওয়ানডে ফরম্যাটে ভরাডুবি: সম্প্রতি অনেক বছর ধরেই ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশের পরফরম্যান্স দুর্দান্ত। ফলে এবছরের বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ নিয়ে ছিল বড় স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন রীতিমতো ধুলোয় মিশে গেছে! ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের। তারপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজ জিতলেও দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। স্বপ্নের এশিয়া কাপটা হতাশার কেটেছে টাইগারদের। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুই ম্যাচ। বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘরের মাটিতে দ্বিতীয় সারির নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত ভরাডুবিটা হয়েছে বিশ্বকাপে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেশি দেশ ভারতে বিশ্বকাপ। ওয়ানডে ফরম্যাটে অনেকদিন যাবত দুর্দান্তও খেলছে বাংলাদেশ। তাছাড়া সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের জন্য ছিল সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে বড় স্বপ্নই ছিল বিশ্বকাপকে ঘিরে। সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখা হচ্ছিল। সেই স্বপ্ন রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়। বিশ্বকাপে নয় ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ। হারতে হয়েছে নেদারল্যান্ডসের মতো দলের বিপক্ষে। বিশ্বকাপের আগে এবং চলাকালে মাঠের বাইরের বিতর্কও ছিল চরমে। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপটা বাংলাদেশের জন্য গেছে দুঃস্বপ্নের মতো।

সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে: সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল একটা সময় দুজন ছিলেন দুজনের প্রিয় বন্ধু। সেই বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরেছে অনেক আগেই। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপনের এক বক্তব্যে প্রকাশ্যে আসে বিষয়টি। দুজনের মধ্যে যে কথা বলাও বন্ধ সেটা প্রথমে প্রকাশ্যে এনেছিলেন পাপনই। পরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার বন্যা বইয়ে গেছে। বছর দুই আড়াই ধরে দারুণভাবে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব করা তামিম ইকবাল হুট করেই নেতৃত্ব ছাড়ার সময় সাকিব আল হাসানের দিকে খবরদারির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। পরে তামিমের জায়গায় সাকিব নেতৃত্ব পাওয়ার পর বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে এক সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবালকে নিয়ে নানান বিতর্কিত মন্তব্য করেন সাকিব। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই তারকার দ্বন্দ্ব পরে ভালোই প্রভাব ফেলে ক্রিকেট দলে।

বিজ্ঞাপন

তামিমের হঠাৎ অবসর কাণ্ড: বছর আড়াই ধরে দারুণভাবে গুছিয়ে তামিম ইকবালই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিবেন এমনই ছিল আলোচনা। কিন্তু ‘খবরদারি’র অভিযোগ তুলে আফগানিস্তান সিরিজের মাঝখানে হঠাৎ-ই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল। বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পরে যায় সারা দেশে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে এক দিনের মধ্যেই অবশ্য অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তামিম। তবে নেতৃত্ব তিনি ছেড়ে দেন।

এশিয়া কাপ খেলেননি তামিম। অনেকদিন পর ক্রিকেটে ফিরেছিলেন বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজে। সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচটা খেলে তামিম বার্তা দিয়েছিলেন ‘সব ঠিকঠাক’। কিন্তু এরপর নানান নাটকীয়তায় তামিমকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করা হয়। এতে সাকিবের বড় ভূমিকা ছিল বলে আলোচনা উঠে। তামিমের জায়গায় তরুণ তানজিদ হাসান বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে ভালো করতে না পারাতে এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে  তুলকালাম উঠে ক্রিকেটপাড়ায়।

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির জয়জয়কার: ওয়ানডে ফরম্যাটে ভরাডুবির বছরে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বছরটি কেটেছে দুর্দান্ত। এবছর মোট ৪টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে জয় মিলেছে ৩টিতেই। আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানকে হারানোর পর কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

এবছর ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৮টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ বৃষ্টিত পরিত্যক্ত হয়েছে। অর্থাৎ হারতে হয়েছে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তারপর আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে মিলল প্রথম জয়।

নারী ক্রিকেটে উত্থান: বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটারদের জন্য এই বছরটা ছিল স্মরণীয়। এশিয়ান গেমস থেকে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ নারী দল। বছরের শুরুতেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় ও ওয়ানডে সিরিজ ড্র করার গৌরব বয়ে আনে নারী দল। তারপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই সংস্করণেই সিরিজ জেতেন নারীরা। শ্রীলংকায় গিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে নারী দল। এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রথমবার ওয়ানডে,  টি-টোয়েন্টিতে জয় তুলে নিয়েছেন নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।

যুব ক্রিকেটারদের হাত ধরে শিরোপা জয়: কাগজে কলমে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা অর্জন ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জয়। সেবার যুব দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন আকবর আলীর দল। এবার যুব এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ যুব দল।

শ্রীলংকা, ভারতের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে।

সারাবাংলা/এসএইচএস

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন