বিজ্ঞাপন

মহসীন খানের কথা আপনাদের মনে আছে?

February 22, 2024 | 2:53 pm

মীর আব্দুল আলীম

মহসীন খানের কথা আপনাদের মনে আছে? বেশিদিন আগের কথা নয়, আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে লাইভে এসে জলজ্যান্ত একজন মানুষ সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে, দোয়া-দুরুদ পড়ে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে নিজের জীবনের অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করার আগে সকল কষ্টের কথা, নিজের বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা এবং পরিবার নিয়ে হতাশার কথা জানান আবু মহসিন খান নামে ঐ ব্যক্তি। তিনি চলচ্চিত্র নায়ক রিয়াজের শশুর। এক সময় ব্যবসা, বাড়ি, গাড়ি, প্রতিপত্তি, সংসারে সুখ সবই ছিলো তার। প্রায় বার্ধক্যে এসে সব হারিয়েছেন, প্রতারিত হয়েছেন বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের কাছে। কষ্ট পেয়েছেন পরিবারের লোকদের কাছেও।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুক লাইভে কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার থেমে যান, আর কিছু বলতে পারছিলেন না। চোখ গড়িয়ে জল ঝরছিলো। কষ্টটা বোধ হয় অনেক বেশিই ছিলো তার। এক সময় কান্না চেপে বলতে শুরু করেন-‘আমার এক ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। আমি ক্যানসার আক্রান্ত। ফ্ল্যাটে একাই থাকি। আমার ভয় করে যে আমি বাসায় মরে পড়ে থাকলে, লাশ পচে গেলেও কেউ হয়তো খবর পাবে না। ঢাকার বাসায় একা থাকেন জানিয়ে মহসিন বলেন, ‘একা থাকা যে কি কষ্ট যারা একা থাকে তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝে। আমার আসলে এখন আর পৃথিবীর প্রতি, মানুষের প্রতি…।’
মহসিন খানের কষ্টের কথা, অবহেলার কথা খুব বুঝতে পারি আমরা। আসলে মহসিন খানের কষ্ট বোঝার কেউ ছিলো না। এমন হাজারো মহসিনের বাস বাংলাদেশে। এটা মহসিনের একার গল্প নয়, হাজারো বৃদ্ধের অবহেলা আর কষ্টের গল্প। এ গল্প এদেশের দেড় কোটি প্রবীনের গল্প। যারা মহসিনের মতো আত্মহত্যা করতে পারেন না। নিরবে চোখের জল ঝরান আর ওপরওয়ালার কাছে ফিরে যাবার দিন গোনেন। এমন কষ্টে কবরগত হয়েছেন কত না মহসিন।

তবে এটাও সত্যি আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। কেউ আত্মহত্যা করে ফেললে সেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকে না। এর বেদনাদায়ক প্রভাব শুধু একজন ব্যক্তির জীবননাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠজন, পরিবার ও সমাজে এক ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনে। তাই একমাত্র কার্যকর উপায় হলো আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা। কিন্তু এই প্রতিরোধে পরিবার বা সমাজের যে ভূমিকা হওয়া উচিত সেটা কতখানি আছে আমাদের?

মহসিন খান মৃত্যুর আগে কেবল নিজের কষ্ট নয় নিজের সদ্য প্রয়াত বৃদ্ধ দুই খালার পরিনতির কথাও জানিয়েছেন। আর এখানেই ছিলো তার বেশি হতাশা। নিজের খালার মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে জানান, ‘আমার বয়স ৫৮ বছর। আমার খালা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার একমাত্র ছেলে আমেরিকায় থাকে। কিন্তু সে খালাকে দেখতেও এল না। এর আগে আরও এক খালা মারা গেছেন, তার বেলায়ও এমন ঘটেছে।’ গোটা বিশ্বের অবহেলিত বৃদ্ধদের কথা যেন এখানে অর্ন্তনিহীত। এমন কষ্টে যাদের হৃদয় আছে তাদের চোখ গড়িয়ে জল আসেই।

বিজ্ঞাপন

অনেক কষ্ট তার বুকে চাপা ছিলো। তিনি লাইভে এসে বলেন- ‘আমরা ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী আমরা যাদেরকে নিয়েই যা কিছু করি; সবকিছুই ফ্যামিলির জন্য করি। আপনি যদি ১০০ টাকা আয় করেন তার মধ্যে আপনার ২০ শতাংশও আপনি আপনার নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি ২০ শতাংশও নিজের জন্য ব্যয় করেন এবং ৮০ শতাংশ পরিবারের পেছনে খরচ হয়। তার পরও কেন এমন হয়?’ এটা এক মহসিনের গল্প নয়, এ যেন এদেশের দেড় কোটি বৃদ্ধদের গল্প।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক হিসাবে দেখা গেছে বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান গড় আয়ু ৭১ বছর। এদেশে মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ বয়োজেষ্ঠ্য মানুষ রয়েছেন। এক গবেষণা রিপোটে জানা যায়, ২০৫০ সালে দেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লাখে পৌঁছবে, যা মোট জনসংখ্যার ২৫.৯০ শতাংশ হবে। এখানে বৃদ্ধ বলতে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যাকে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। প্রবীণ মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। সে হিসেবে বাংলাদেশে প্রবীণদের কল্যাণে তেমন কোন সুব্যবস্থা কি বাড়ছে? বাংলাদেশ সরকার দেশের প্রবীণ, দুস্থ ও স্বল্প উপার্জনক্ষম অথবা উপার্জনে অক্ষম বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে এবং পরিবার ও সমাজে মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি চালু করে। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ৪৯ লাখ বয়স্ক ব্যক্তির জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের বয়স্করা কিছু অর্থ পাচ্ছে এটাও কম কি? বর্তমানে পিতা-মাতা বিশেষ করে বৃদ্ধরা যেভাবে অবহেলিত তাতে রাষ্ট্রের এ বিষয়ে ভাবতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রবীণদের কল্যাণে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা, বৃদ্ধনিবাস, আর্থিক সমর্থন তৈরি, পুষ্টিকর খাদ্য, ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজনের। এ দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী ষাটোর্ধ্ব বয়স থেকে কর্মহীনতা, আর্থিক প্রবঞ্চনা, পুষ্টিহীনতা, নিরাপদ পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পারিবারিক অবহেলা, নিঃসঙ্গতাসহ নানা জটিল অবস্থার ভিতর দিয়ে দিনযাপন করে। এটা কেবল যে বাংলাদেশেই হচ্ছে তা নয়। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৬ জন প্রবীণ ব্যক্তির মধ্যে একজন নীপিড়নের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের এর সংখ্যা দ্বিগুনের কম নয়। বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন ঘটনায় বৃদ্ধদের প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও অবহেলা বৃদ্ধির চিত্র ক্রমাগত পরিলক্ষিত হচ্ছে।

কেউই নেই যে বৃদ্ধদের অবস্থাটা একটু বুঝবে। একটু আশার বাণী শোনাবে। পরম মমতায় তাদের মাথায় হাত রাখবে এমন কেউ নেই। অথচ এই মানুষটিই এক সময় নিজের কর্মজীবন, সন্তানদের বড় করে তোলা এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেছেন কতইনা সতর্কতার সাথে। কেউ যেন কষ্টে না থাকে, কেউ যেন একটু কষ্ট না পায় তার চেষ্টা করেছেন। ‘বাবা-মা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করেন, ফ্যামিলিকে সারাক্ষন দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফ্যামিলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। আর সেই মানুষটিকেই আমরা শেষ বয়সে এসে কষ্ট দেই।’

আত্মহত্যার আগে মহসিন খান লাইভে এসে বলেন- ‘আসলে আরেকটা জিনিস দেখলাম যে, পৃথিবীতে আপনিই আপনার। ছেলে বলেন, মেয়ে বলেন, স্ত্রী বলেন কেউই আপনার না। কারণ আজকে আপনি যেভাবে হয়তো আপনার ফ্যামিলিকে মেইন্টেন করছেন। কাল যদি আপনি মেইন্টেন করতে না পারেন তখনই দেখা যাবে আপনার ওয়াইফের সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্ব হবে। আপনার ছেলে বা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করছে না। এগুলো কেন করে? ফ্যামিলির লোকজন কেন বুঝতে চায় না? আগে ওয়াইফের বুঝতে হবে।’ মহসিন বলেন, ‘যখন বিয়ে হয় ২৪, ২৫ বা ৩০ বছরের একটা ছেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে পারে, উপার্জন করতে পারে পরবর্তীতে তো সে সেটা পারে না। তার বয়স হয়। সে পরিশ্রম কম করতে পারে। উপার্জন কমে যায়। এগুলো সব মিলিয়ে আসলে অনেকদিন ধরেই আমি মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত। আসলে নিজের উপর নিজের এতোটাই বিতৃষ্ণা হয়ে গেছে পৃথিবীতে এখন আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আমি জানি আমি যদি এখন সুইসাইড করি বা মরে পড়েও থাকি আমি যদি ফেসবুক লাইভে না যাই তাহলে কেউ জানবেও না।’

মহসিন খানের কষ্টটা অনুধাবন করার মতো। তিনি লাইভে বলেছেন- ‘সন্তানদের বোঝা উচিত যে তার বাবা যতক্ষণ পর্যন্ত এফোর্ড করতে পারে…প্রকৃত বাবারা চেষ্টা করে সন্তানদের সেভাবে মানুষ করার জন্য। বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে। পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিবার অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে চায় না। কেন বুঝতে চায় না, কেন বুঝে না এগুলো আসলে… নিজেকে আর মানায় নিতে পারলাম না।’ প্রতিটি মানুষের পৃথিবীর মুখ দেখার সৌভাগ্য হয় পিতা-মাতার কল্যাণে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, এই স্বর্গতুল্য পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে আমাদের কাছে বোঝা মনে হয়। ঝামেলা মনে হয়। ফল হিসেবে অনেক পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে জীবন কাটাতে হয়। অনেককেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটাতে হয়। মহসিন খানের মতো অনেককেই একাকী জীবন কাটাতে হয়। সন্তানেরা নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ একক বা ক্ষুদ্র পরিবার গড়তে পিতা-মাতাকে দূরে ঠেলে দেন। পিতা-মাতার খোঁজ নেওয়ার ফুরসতটুকু কারও কারও হয় না।

বিজ্ঞাপন

বার্ধক্য মানুষের জীবন চক্রের একটি অপরিহার্য অংশ। আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। বাড়ছে প্রবীনদের প্রতি অবহেলা। প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে গৃহীত সরকারি ব্যবস্থাইবা কতটুকু আছে এদেশে। লেখার শুরুতেই তা উল্লেখ করেছি। যা খুব যৎসামান্য।

বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতাকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য ‘পিতামাতা ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতামাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে, পিতামাতার একই সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে, পিতামাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে কোনো বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করবে না, পিতা-মাতার চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করবে। পিতামাতার অবর্তমানে বৃদ্ধ দাদা-দাদী, নানা-নানীর ভরন-পোষণ করবে। তা পালন হচ্ছে কতটা?

সন্তানদের প্রতি পিতামাতার অফুরন্ত ভালোবাসা থাকে। তাদের নিয়ে থাকে শত স্বপ্ন। তাদের মুখে হাসি ফোটানোই হয়ে থাকে তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য। সন্তানদের সুখে রাখার জন্য পিতামাতা কত ত্যাগ শিকার করেন, তা বলা নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সম্পর্ক বদলে যায়। জন্মদাতা পিতামাতাই হয়ে যায় সন্তানদের বোঝা, অবহেলার পাত্র।

বর্তমানে অনেক পরিবারেই বৃদ্ধ পিতামাতাকে চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা করা হয়। অনেকে তাদের বৃদ্ধ পিতামাতাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আবার অনেক তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদের মালিকানা নিজের নামে লিখে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধ পিতামাতারা নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছেন। অকথ্য লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য না করতে পেরে অনেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালেই ভেসে উঠে এমন সংবাদ। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এর কারণ কি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি আমরা! এর প্রধান কারণ সন্তানের ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব এবং বাস্তবতার অত্যুজ্জ্বল ঝলকানির মোহে শৈশবের স্মৃতিগুলো ভুলে যাওয়া। বৃদ্ধ বয়সে সবাই সন্তানদের কাছ থেকে সদাচরণ প্রত্যাশা করে। এটা সন্তান হিসাবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। মহসীন খান আত্মহত্যা করে কোনো ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করে যেতে পারেননি এটা সত্য। কিন্তু আর কোনো মহসীন খান যেন এই পথে পা না বাড়ান; আর কোনো মহসীন খানের করুণ এই মৃত্যুদৃশ্য যেন দেখতে না হয়- সেটা নিশ্চিত করাটাও কিন্তু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন