বিজ্ঞাপন

দুর্গাপূজার প্রতিমা ভাঙচুর: ৫ আসামির কারাদণ্ড

March 3, 2024 | 4:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আপিল মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে দুই বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। দেশে প্রতিমা ভাঙচুরের অভিযোগে এই প্রথম একসঙ্গে এত আসামির সাজা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ মার্চ) চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল আউয়ালের আপিল আদেশ প্রচার হয়েছে, যদিও বিচারক ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হরিরঞ্জন নাথ।

দণ্ডিতরা হল- নুরুল আমিন, বেদার মিয়া, কামাল উদ্দিন, নেজাম উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন। তারা সবাই পলাতক আছেন। এছাড়া মো. রুবেল ও মহিউদ্দিন মুন্না নামে দুজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় জানা গেছে, রাউজান উপজেলার পশ্চিম রাউজান ইউনিয়নের কেউটিয়া গ্রামে ২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বণিকপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু বণিক বাদী হয়ে ১ অক্টোবর রাউজান থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে সাতজনকে আসামি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারা পূর্বপুরুষের আমল থেকে কেউটিয়া গ্রামের বণিকপাড়ায় রাধাকৃঞ্চ মাধবানন্দ সেবাশ্রম মন্দিরের পাশে সার্বজনীনভাবে দুর্গোৎসব করে আসছিলেন। আসামিরা ২০০৫ সাল থেকে তাদের বণিকপাড়া থেকে পরিকল্পিতভাবে উচ্ছেদের জন্য বাড়িভিটা দখলের উদ্দেশে বিভিন্নভাবে জ্বালাতন করে আসছিল। বেদার মিয়া ও নুরুল আমিনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে আসামিরা বণিকপাড়ার পুকুরে নারীরা গোসল করার সময় পাড়ে বসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি মোবাইলে স্নানের দৃশ্য ভিডিও করত।

২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে বণিকপাড়া পুকুরপাড়ে গিয়ে দুর্গাপূজা না করার জন্য হুমকি দেন। বিকেলে অমলেন্দু বণিক ও তার ছেলে রানাপ্রতাপ পূজার বাজার করে ফেরার পথে তাদের রিকশা আটকে গালিগালাজ করে। ওই রাতেই আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে দুর্গাপূজা কমিটির সভাপতি ডাক্তার অরুণ ধরের বাড়ির বারান্দা রাখা পূজার জন্য বানানো দুর্গা, লক্ষ্মী-স্বরস্বতীসহ একাধিক প্রতিমা ভাঙচুরের করে।

জেলার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হরিরঞ্জন নাথ সারাবাংলাকে জানান, অমলেন্দু বণিকের দায়ের করা মামলা সিআইডি তদন্ত করে ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই দণ্ডবিধির ২৯৫, ২৯৫ (ক) ও ৩৪ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষে ছয়জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের প্রথম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের সবাইকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

বিজ্ঞাপন

এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতে আপিল দায়ের করে। ২০১৬ সালে অমলেন্দু বণিক মারা যান। তার ভাষ্যে যেহেতু ছেলে রানাপ্রতাপ মামলার এজাহার লিখেছিলেন, আদালতের নির্দেশে তিনি বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

আপিল আদালত ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে পাঁচজনকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। দুই আসামির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছিলেন সেটি বহাল রাখেন প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রবিউল আউয়াল।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় রানাপ্রতাপ বণিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমাদের এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটির কিছু লোকের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার বাবা ছয় কানি সম্পত্তি মন্দিরে দান করে দেন। যার বাড়ির সামনে প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে, তিনি বাড়িভিটা ফেলে রেখে দেশান্তরী হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে আমার বাবা মারা যান। তিনি রায় দেখে যেতে পারেননি। আজ বাবা বেঁচে থাকলে মনে কিছুটা শান্তি পেতেন। আমরা চাই, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন