বিজ্ঞাপন

চুয়েটের সামনে ফের সড়ক অবরোধ, সাবেক শিক্ষার্থীদের সংহতি

April 24, 2024 | 3:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই ও রাঙ্গামাটির একাংশে সড়ক যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন চুয়েটের ১৩৭ জন সাবেক শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাউজান উপজেলায় চুয়েটের মূল ফটকের সামনে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক’শ শিক্ষার্থী। তারা রাস্তায় গাছ ফেলে, ব্যারিকেড দিয়ে ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেলে আরোহী হিসেবে চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের ছাত্র। একই ঘটনায় জাকারিয়া হিমু আরেকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।

দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুর খবরে সোমবার বিকেলেই চুয়েট ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। রাতে ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুনও দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এরপর মঙ্গলবার দিনভর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন চুয়েটের উপাচার্য রফিকুল আলম। দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

বিজ্ঞাপন

চুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদ পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় চুয়েট কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসেছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেয়াসহ শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি সেগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তীতে প্রত্যেকটি দাবি নিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে।’

‘এতে তারা আশ্বস্ত হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু সকালে আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের নতুন করে কোনো দাবিদাওয়া আছে কি না, এসব বিষয়ে কিছু প্রশাসনকে অবহিত করেননি,’- বলেন রাশেদ পারভেজ।

বিজ্ঞাপন

চলমান আন্দোলনের মধ্যে দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা সড়কে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা করা হয়েছে বলা হয়েছে। কিন্তু কার নামে মামলা, কেউ গ্রেফতার হয়েছে কি না এ বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ বক্তব্য আমরা পাইনি। কর্তৃপক্ষ বলছে, কাপ্তাই সড়কে এবি ট্রাভেলস এবং শাহ আমানত পরিবহনের বাস চলবে কি না সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা এ ধরনের বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি। আমাদের দাবি হচ্ছে, এ দুটি বাস কাপ্তাই সড়ক দিয়ে চলতে পারবে না। এদের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে।’

‘একইসঙ্গে সকল প্রকার লোকাল বাস চুয়েটের সামনে দিয়ে চলাচল বন্ধ করতে হবে। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার চুয়েট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫টি বাস ও ৪টি অ্যাম্বুলেন্সের দাবি জানালেও তারা আমাদের ১টি বাস ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের বিষয়ে জানিয়েছে। আমরা এতে সম্মত নয়।’

আশিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাস মালিক নিহত দুই ভাইয়ের জন্য দুই লাখ টাকা করে দেবে বলেছে। এটা লজ্জাজনক। চুয়েট প্রশাসন এটা কিভাবে মানলেন, আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের ভাইদের জীবনের দাম কি দুই লাখ টাকা ?’

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলন থেকে সন্ধ্যার মধ্যে চুয়েট প্রশাসনকে বিক্ষোভস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, চুয়েটের নিহত দুই শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই লাখ করে মোট চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

এদিকে চুয়েটের সাবেক ১৩৭ শিক্ষার্থী যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা সাবেক শিক্ষার্থীরা শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ। সড়কে মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল, এখন আর এগুলোকে দুর্ঘটনা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা এসব মৃত্যুকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করি। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়ক হাটহাজারী, দক্ষিণ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং কাপ্তাই উপজেলার দশ লাখ মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত এবং অর্থনীতি ও পর্যটনের লাইফলাইন। চুয়েট, বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে এখানে। কিন্তু সড়কটির দুরবস্থা আমাদের বঞ্চিত, ব্যথিত ও হতাশ করে তোলে।’

২০১৬ সালে চুয়েট ছাত্র মোহাইমিন সিয়াম ও তাহমিদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘সিয়ামের মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তখনও কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই নৈরাজ্য ফিরে আসে এবং ক্রমাগত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীই নয় বরং অনেক এলাকাবাসীও এই হত্যাকাণ্ডের শিকার। এই নৈরাজ্যের পেছনে আছে সরু রাস্তা, ফিটনেস ওলাইসেন্সবিহীন যানবাহন, সড়কে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি এবং পরিবহন সংকট।’

সাবেক শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘দুইজন শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নেমে এলে একজন শিক্ষকের বিতর্কিত মন্তব্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা প্রশমনের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা অবিলম্বে তার প্রকাশ্য ক্ষমাপ্রার্থনার দৃষ্টান্ত দেখতে চাই। এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসবাণী শোনানো হয়েছিলো, কিন্তু দাবি শতভাগ কখনোই পূরণ হয়নি। চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা কোনো আশ্বাসকে আর বিশ্বাস করি না। এবারের যে সংগ্রাম, সেটি হোক শতভাগ দাবি আদায়ের সংগ্রাম। সাবেক শিক্ষার্থীরা চলমান আন্দোলন পূর্ণ সংহতি জানাই।’

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন– জোবায়ের জ্যোতি, অটল ভৌমিক, সোহানুর রহমান সৈকত, সুজিত রঞ্জন দাশ, অনিরুদ্ধ দাশ, মনীষী রায়, মিনহাজুল ইসলাম রিয়াম, ওমর ফারুক, শেখ নাহিয়ান, মাহবুব সোবহান চৌধুরি, মাউল কাজিম আখতার, কৌশিক চন্দ্র, আহসান হাবিব আকাশ, মীর তাইমুর জুবায়ের, মুয়িদ উদ্দীন চৌধুরী, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, শিশির কুমার দাস, সুনান মাশরুর মিকদাত, রাহাত ইকবাল, ফাতেমা ইসলাম তানিয়া, সৌরেন পাল, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, মিঠুন চন্দ্র নাথ, অনিন্দ্য নন্দী, আশেকুল ইসলাম, পিয়াল দাশ গুপ্ত, এস এ সুজন, সেলিম আহমেদ, সঞ্জয় হালদার, আসিফ ইফতি, ফাহমিদা লিজা পিয়া, তুর্জয় ধর দীপ্ত, সিরাজুল ইসলাম সৈকত, আতিকুজ্জামান উল্লাস, পাভেল আহমেদ, কেফায়েত ইসলাম, মোহাম্মদ জাহেদ মুরাদ সানি, মোহাম্মদ ফাহিম শাহরিয়ার সাকিব, শহীদুল ইসলাম, সীমান্ত পাল, মোহাম্মদ আহসানুল ইউসূফ ইমন, শিবলি নোমান, মাহির ফয়সাল রাহাত, সুদীপ্ত ভৌমিক, পারিজাত দেবনাথ, মোহাম্মদ ওয়াসাফ সাদাত, আল আমীন, শারাহ মেহজাবীন, প্রবাল সিংহ, নাওমি সুবায়ের, মিনহাজুল আবেদীন, আরিফুল ইসলাম, সালেহা ফাতেমা, রাফিউল্লাহ আরিফিন।

এছাড়াও আছেন – অংকুর দাশ অভি, রিকু মোহর, প্রীতক কুণ্ডু, রিয়াদ হাসান লিখন, ঐশি সরকার দিবা, দীপ্তনীল রায়, আরিফুল ইসলাম, মোস্তাকিম মুকিত, ইমরান কবির, কামরুল আনাম জয়, জাহিন দিয়ান কাব্য, জেড এম মাহিন, এস এম রিয়াজুল আলম, রাকিবুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় কর পিয়াল, মোহাম্মদ সাঈদ আনোয়ার, মির্জা আসিফ হায়দার, অংথাইচিং মারমা, আরিফ মাহমুদ শিকদার, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল উদয়, আননূর আফসীন সিদ্দিকী, এস এম রাকিবুল ইসলাম, জয়ন্ত দাশ, রিজভী আহমেদ, মাহবুব সানি, তাসনিম আলম নিশাত, পীযূষ বিশ্বাস, সুবির সরকার, মুহতাসীন রিয়াসাদ, মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ, মঞ্জুরুল আলম প্রান্ত, আবিদ উর রহমান, ঋত্বিক চৌধুরী, রাফিউল হোসেন, ইফতিখার আজিম, ফারহান শাহরিয়ার, রায়হান আল মারুফ চৌধুরী, রিফাত আমীন, দেবজ্যোতি দাস, নয়ন চৌধুরী, তৌহিদুল ইসলাম নাঈম, নাজমুল হাসান হৃদয়, মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল্লাহ শিকদার, তানভীর মাহমুদ, তৌহিদ ধ্রুব, জনি নাথ, মোঃ আরিফুল হক, আকিব বিন নাসিম, বায়েজিদ-বিন-ইসলাম, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, দীপন মুখার্জি, অপু দেবনাথ, মোহাইমিন শোভন, অর্ঘ্য বিশ্বাস, সাদমান সৌমিক ইভান, সাজিদ উজ্জামান জিশান, ফাইরুজ হুমায়রা ফারিন, শারদ চৌধুরী, রেদোয়ান হোসেন, সাজ্জাদ উল ইসলাম, আসিফ ইকবাল, ফাহাদ বিন ফারুক, মুহাইমিনুল ইসলাম সার্থক, রোমান শেখ, মোহাম্মদ আশিকুল আলম, রাফাত হোসেন, রাতুল ইসলাম, জেবিন ফৌজিয়া, মঈনুদ্দীন শিপন, শেখ ফারাহ আদৃতা, আবরার আহমেদ চৌধুরী, তানজিদ নাহিয়ান, হাসিবুল হাসান, দাউদ ইব্রাহীম, জিসান হায়াত, ধ্রুব নাগ, জামিলুর রেজা মজুমদার, কিশোর রায়, মঈন উদ্দীন আহমেদ বাবর এবং জারীন তাসনিম বিদিতা।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন