বিজ্ঞাপন

রেকর্ড তাপমাত্রায় হাসপাতালেও চাপ, ৬ দিনে রোগী ভর্তি আড়াই হাজার

April 24, 2024 | 5:20 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে তীব্র তাপদাহ। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমেও শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। একটানা কয়েক দিন তীব্র দাবদাহে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন তিন থেকে চারগুণ রোগী। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় দিনে ১০০ শয্যার বিপরীতে দুই হাজার ৩২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) হাসপাতলে ভর্তি ছিল ৩৪৭ জন রোগী, এর মধ্যে পাঁচ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৮ জন ও ২৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ৫২ জন রোগী ভর্তি ছিল।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৬১ জন রোগী, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৭ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৪৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। শনিবার (২০ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩৮২ জন, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৫ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৫১ জন রোগী ভর্তি ছিল।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২১ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪১৪ জন রোগী, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৮৪ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৬২ জন রোগী ভর্তি ছিল। সোমবার (২২ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪১৯ জন, এর মধ্যে একই শয্যায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯৩ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৫৬ জন রোগী ভর্তি ছিল।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৪০৩ জন, এর মধ্যে একই শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৯১ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ৬০ জন রোগী ভর্তি ছিল।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাপপ্রবাহে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় তাদেরকে হাসপাতাল থেকেই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ায় এর অধিক ভর্তি রোগীদের খাদ্য চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ১০০ শয্যার জন্য তৈরি করা খাবার ওয়ার্ডের রোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে।

২৯ দিন বয়সের শিশু মুরসালিনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন বাবা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, গরমের কারণে আমার সন্তান বমি করছিল। চারদিন আগে আমি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। এখনও স্যালাইন চলছে। কোনো কাজ হয়নি। সন্তানকে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছি। এখন কিছুটা ভাল।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার চিলাভালকি গ্রামের নয় মাস বয়সী ওসমানের বাবা খন্দকার সাইদুর বলেন, বাচ্চাটার ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কয়েকদিন খুব খারাপ অবস্থা ছিল এখন অনেকটাই ভালো। প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চাটা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

জ্বরে আক্রান্ত চার দিন বয়সী কন্যাসন্তান ফারজানার মা ফিরোজা বলেন, প্রচণ্ড জ্বর ও কাশির কারণে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছে। এখন চিকিৎসা চলছে।

বিজ্ঞাপন

জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সালাম মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ি। জ্বর ও ডায়ারিয়া না কমায় বাধ্য হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হই। এখানে অনেক রোগী তাই চিকিৎসাসেবায় সমস্যা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে ছোট-বড় সবাই অসুস্থ হচ্ছেন। তবে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। তাদের বেশিরভাগই জ্বর, কাশি ও ডায়ারিয়ার আক্রান্ত।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড এই গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। ছয় মাস বয়সের নিচে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের অধিক বয়সের শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের জ্বর হচ্ছে সে কারণে তাদের খোলামেলা ও পাখার নিচে রাখতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. উম্মে ফারহানা জানান, ১০০ শয্যার হাসাপাতাল হলেও জনবল আছে ৫০ শয্যার। এখানে শয্যার বিপরীতে তিন থেকে চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, হাসপাতালে যে পরিমাণ জনবল আছে, সেটা দিয়েই আমরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখানে জনবল যদি আরও বাড়ানো যেত তাহলে সুবিধা হতো। হাসপাতালে পর্যপ্ত পরিমাণ স্যালাইন ও ওষুধ আছে। রোগীদের সেগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এনইউ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন