বিজ্ঞাপন

জীবন-শাহজালালের হলো ‘সারা’, শরীফ-রাশেদের ‘শুরু’

April 25, 2024 | 8:15 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

লালদিঘী থেকে: মাথার ওপর তপ্ত রোদ। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও তাপপ্রবাহ চলছে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ ভিড় জমিয়েছে চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে। সেখানে বসেছে ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলিখেলার আসর। হাজারো দর্শকের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মধ্যে লড়ছেন দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা বলীরা।

বিজ্ঞাপন

চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি কুমিল্লার দুই বলি- বাঘা শরীফ ও রাশেদ বলি। প্রায় ১০ মিনিট ধরে একে অন্যকে পরাস্ত করার নানা কসরত। সূচনার দিকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে’ এই অবস্থা। তবে শেষদিকে হাল ছেড়ে দেন রাশেদ। নিজেই বাঘা শরীফকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।

তবে বলিখেলার মাঠের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কক্সবাজারের চকরিয়ার তারিকুল ইসলাম জীবন এবং কুমিল্লার হোমনার শাহজালাল এবার খেলায় অংশ নেননি। তবে বিজয়ী বাঘা শরীফ ও রানার্স আপ রাশেদ- উভয়ই শাহজালালের শিষ্য।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ৫টা ২৯ মিনিটে বলিখেলার চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয়। ৫ টা ৩৯ মিনিটে খেলা শেষ হয়। রাশেদ যখন পরাস্ত হন এবং প্রধান রেফারি হাফিজুর রহমান যখন বাঘা শরীফের হাত উঁচিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, তখন দর্শকরা হাততালি দিয়ে ঢোল, বাঁশি ও ভুভুজেলা বাজিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সাল থেকে জীবন ও শাহজালাল বারবার চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে আসছিলেন। ওইবছর জীবনকে পরাস্ত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন শাহজালাল। ২০১৯ সালে অবশ্য জীবন এর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন শাহজালালকে হারিয়ে। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বলিখেলা হয়নি। ২০২২ সালে শাহজালালকে হারিয়ে বিজয়মাল্য পরেছিলেন জীবন। ২০২৩ সালে জীবন পরাস্ত করেছিলেন শাহজালাল।

২০ ফুট উঁচু ও ২০ বর্গফুটের বালির মঞ্চে এবারের খেলার প্রথম রাউন্ডে ৮৪ জন বলি অংশ নেন। সেখান থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় সরাসরি ১৬ জন। প্রথম সেমিফাইনালে সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন কুমিলার বাঘা শরীফ। অন্যদিকে, আরেক সেমিফাইনালে সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন কুমিল্লার আরেক সন্তান রাশেদ বলী। তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারান খাগড়াছড়ির সৃজন বলী।

বিজ্ঞাপন

বিকেল ৪টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গরমের কারণে ২৫ মিনিট দেরি হয়। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে জানান, এবার বলিখেলায় অংশ নিতে মোট ১২০ জন তাদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩৬ জনকে বাদ দেওয়া হয়। মোট ৮৪ জন প্রতিযোগী এবারের বলিখেলায় অংশ নেন। এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।

এর আগে, বিকেলে বলিখেলার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়াসংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বলি খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকা ও ট্রফি। রানার্স আপ রাশেদ বলি ২০ হাজার টাকা। এছাড়া তৃতীয় স্থানে থাকা সৃজন চাকমা পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা।

বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে জাগাতে ১৯০৯ সালে শুরু হওয়া এই আব্দুল জব্বারের বলীখেলার এবার ১১৫তম আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরের আগেই বলিখেলা দেখতে লালদিঘী ময়দান কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

হাটহাজারী থেকে বন্ধুদের নিয়ে জব্বারের বলিখেলা দেখতে আসেন প্রতাপ দাশ। গরমে এক বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে সবাই ঘিরে ছিলেন। পরে একটু সুস্থ হলে আবারও মঞ্চের কাছাকাছি চলে যান তারা।

প্রতাপ দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ১১ টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি। দুপুর ১২টায় এখানে পৌঁছায়। মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করেছি। আগে এসেছি কারণ, শেষে এলে মঞ্চের পাশ থেকে খেলা দেখা আর সম্ভব হবে না।’

আরেক বন্ধু প্রসেনজিৎ বৈদ্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন আগে বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জব্বারের বলিখেলা দেখব। তাই এখানে এসেছি। যেভাবে গরম পড়ছে, দাঁড়িয়ে থেকে খেলা দেখা খুব কষ্ট হবে। তবুও আগে এসে একদম মঞ্চের কাছে দাঁড়াতে পেরেছি এতেই ভালো লাগছে।’

পতেঙ্গা থেকে আসা মধ্যবয়সী মোতাহের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বলিখেলার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করি। এটা আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। আমি দুপুর একটার দিকে এসেছি।’

বলিখেলা উপলক্ষ্যে বুধবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের বৈশাখী মেলা দ্বিতীয় দিন আরও জমে উঠেছে। দিনভর ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন