বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতু: অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

December 10, 2020 | 3:28 pm

সফিউল আযম

বাংলাদেশ এখন অনন্য উচ্চতায়। স্বপ্নের সেতু আর নয়। এখন বাস্তব। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে খরস্রোতা উত্তাল পদ্মায় আজ বাংলাদেশের গর্ব। প্রমত্ত পদ্মায় ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু গড়েছে বাংলাদেশের নতুন এক দিগন্ত। বিজয়ের কেতন উড়ছে উত্তাল পদ্মার বাতাসে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ছিল একটি আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবে রূপদানে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৎ ও মহৎ উদ্দেশ্যই পারে যে কোনো প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সাফল্যের শিখরে আরোহণের, তার প্রমাণ দেখিয়েছে বর্তমান সরকার। বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা পদ্মার সাথে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ এবং নানামুখী সমালোচনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে— বাংলাদেশ উঁচু করে কথা বলতে শিখেছে— এই দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ। এই দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ কাজ ছিল এটি। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ সেতু এখন বাংলাদেশের বড় সেতু। এই সেতু প্রমাণ করেছে বাঙালি জাতি আর পিছিয়ে নেই। নিজস্ব অর্থায়নে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখে।

দেশের ১৯ টি জেলার সরাসরি ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজতর হলো। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে ১ শতাংশের বেশি । দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই একটি সেতুর। কোটি মানুষের স্বপ্নের এই সেতুর কাজ সহজ ছিল না। আন্তর্জাতিক ও দেশিয় নানামুখী তৎপরতায় যখন এই সেতুটি বন্ধ হবার উপক্রম, যখন একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হতে চলেছিল, ঠিক তখনই সময়ের সাহসী উচ্চারণ আসে বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ হাসিনার কাছ থেকে। ঘোষণা দেন নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতোই সাহসী এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায় বাংলার জনগণ। ২০১৪ সালেই শুরু করা হয় এই সেতু নির্মাণযজ্ঞ।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় তিন কোটি মানুষের ঢাকাসহ সমগ্র দেশে যাতায়াত যেমন সহজ হবে— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায় ও প্রযুক্তি সহ সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এই সেতু। এই সেতু শুধু যাতায়াতেরই সুবিধাই দেবে না— বরং জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষি-শিল্প-অর্থনীতি-শিক্ষা-বাণিজ্য—সব ক্ষেত্রেই এই সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে। এই সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, সারা বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারাই বদলে দিতে পারে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৯ সালে পদ্মাসেতু তৈরির প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করেছিল। তখন থেকেই মূলত স্বপ্ন বুনতে থাকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের মানুষ। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন করার প্রাক্কালেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের সুবিধার জন্য পদ্মায় সেতু নির্মাণের বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে।

এখন প্রেক্ষাপটে আসি, প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই হয় ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালে। পরবর্তীতে জাপানের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয় ২০০১ সালে। ২০০৪ সালে জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। শত জল্পনা আর কল্পনা অবসান ঘটিয়ে আজ দৃশ্যমান পদ্মাসেতু।

বিজ্ঞাপন

কল্পনাতীত এই সেতু এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। যা কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে দ্বিতলবিশিষ্ট। সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি ও নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সেতুর ওপরের তলায় চার লেনের মহাসড়ক। নিচতলায় স্থাপিত রেললাইন, যা হবে ১৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। এছাড়া রেলপথে ৩টি ফ্লাইওভার, ৪০টি লেভেল ক্রসিং ও আন্ডারপাস থাকবে। সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

আজ বাংলাদেশের মানুষের অন্যরকম দিন। আনন্দের দিন। আজ বুক ফুলিয়ে বলার দিন— বাংলার মানুষ মাথা নোয়াবার নয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। পদ্মাসেতু এখন স্বপ্ন নয়। এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তে দাঁড়িয়ে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষক

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন