বিজ্ঞাপন

এমপি-চেয়ারম্যানের দখলে উপকূলের খাসজমি

February 19, 2019 | 10:37 pm

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ভাঙা-গড়ার মধ্যেই চলছে উপকূলীয় অঞ্চল। দিন দিন বাড়ছে বাস্তুহারার সংখ্যা। আশ্রয়ের খোঁজে দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে ভিটিমাটি হারা হাজারো মানুষ। অথচ নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে ভূমি চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের দখলে। এমন চিত্র নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে। সম্প্রতি এলাকাটি ঘুরে এসেছেন সারাবাংলার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাদ্দাম হোসাইন। এ নিয়ে আজ থাকছে পাঁচ পর্বে তৈরি ধারাবাহিক প্রতিবেদনটির শেষ পর্ব।

নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের খাসজমি চলে গেছে সাবেক ও বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার ও প্রভাবশালীদের দখলে। এসব দখলদারের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামও রয়েছে। সম্প্রতি সরকারের একটি জরিপেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।

হাতিয়া উপজেলা ভূমিহীন পুনর্বাসন সমবায় সমিতির তথ্য অনুযায়ী, নিঝুমদ্বীপ ও দমারচরের ১০০ একরেরও বেশি বন্দোবস্ত দেওয়া খাস জমিতে বর্তমান চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিনের দখলে। এসব ভূমিতে তার বাড়ি, হোটেল, দোকান, গবাদি পশুর খামার রয়েছে।  দমারচরে ২০০ একরের মতো খাস জমি স্বনামে-বেনামে দখলে রেখেছেন হাতিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন আহমেদ। হাতিয়া কৃষক লীগের সভাপতি হেলাল খলিফার দখলে প্রায় ২০ একর। জাহাজমারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনের দখলে প্রায় ১৫ একর। বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম বিল্লাহর দখলে আছে প্রায় ২০ একর। জাহাজমারা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আমান মিয়ার দখলে ৪০ একর। একই এলাকার জাফর কোম্পানির দখলে প্রায় ৭০ একর। হাতিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি কালা রাশেদের দখলে আছে ৫০ একর। আব্দুল হাইয়ের দখলে আছে প্রায় ১২০ একর। চরচেঙ্গা বাজারের রুহুল আমিন কোম্পানির দখলে ৪০ একর ভূমি রয়েছে বলে উপজেলা ভূমিহীন পুনর্বাসন সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় নিঝুমদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিনের সঙ্গে।  তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যখন ভূমিহীন ছিলাম, তখন কিছু জমি নিজেই তৈরি করেছি। এরপর কিছু জমি ভূমিহীনদের কাছ থেকে কিনেছি। এখন সব মিলিয়ে বর্তমানে আমার আওতায় ১০০ একরের মতো জমি আছে। এরমধ্যে অনেক জমি ওঁছখালী ওয়ালাদের (উপজেলা সদরের বিত্তবানদের)। আমি সেগুলো বর্গা হিসেবে চাষাবাদ করি।

ভূমিদস্যুদের দখলে বিস্তীর্ণ ভূমি

এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস স্বামী, সন্তান, ভাই ও পূত্রবধূর নামে দ্বীপের হাতিয়া বাজারে ভূমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে এরই মধ্যে ওই জমিতে পাঁচতলা ভবন তুলে হোটেল ব্যবসা করছেন। নিজের একমাত্র মেয়ের নামে হোটেলের নাম দিয়েছেন ঈশিতা আবাসিক হোটেল।

হাতিয়া উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভূমি বন্দোবস্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে মোট ১০টি নথি পাস করিয়ে দ্বীপের হাতিয়া বাজারের মূল্যবান ভূমি বন্দোবস্ত করে নেয় এমপি পরিবার।  উপজেলা পরিষদের রেজ্যুলেশন নম্বর অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমপি আয়েশা ফেরদৌসীর নামে বন্দোবস্ত দেওয়া নথি নম্বর ১৮৬।  তার স্বামী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর নথি নম্বর ১৯৩। ছোট ছেলে মাহতাব আলীর বন্দোবস্ত নথি নম্বর ১৮১।  বড় ছেলে আশিক আলীর নথি নম্বর ১৮২।  মেয়ে সুমাইয়া আলীর নামে বরাদ্দকৃত নথি নম্বর ১৮৩।  পুত্রবধূ নাঈমা সুলতানার নথি নম্বর ১৯৪।

বিজ্ঞাপন

এমপি ও তার পরিবারের লোকজন নিজেদের উপজেলা সদরের ঠিকানার পরিবর্তে চরের একটি নির্জন এলাকা কাজিরটেকের নাম ব্যবহার করেছেন। আবার এমপি আয়েশা ফেরদাউস স্বামীর (সাবেক সংসদ সদস্য উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী) নাম ব্যবহার না করে নিজের বাবার নাম ফজলুর রহমান চৌধুরী, আর পুত্রবধূ নাইমা সুলতানা নিজের স্বামীর নাম ব্যবহার না করে তার বাবার নাম রফিকুল ইসলাম ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে ভূমিহীনদের জমি নিজের দখলে রাখার অভিযোগের বিষয়ে এমপি আয়েশা ফেরদৌসের মন্তব্য জানতে তার বাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাসার কেয়ারটেকার জানান তিনি ঢাকায় আছেন। এরপর মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মোবাইলফোনে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভূমিহীনদের অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, তা ভূমি অফিসই ভালো বলতে পারবে।  তাদের কাছ থেকেই জেনে নিন।’

এই প্রসঙ্গে হাতিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এমপি আয়েশা ফেরদৌসের দখলে কোনো খাস জমি আছে কি না, আমার জানা নেই। তবে, ভূমিহীন বাজারের দিকে তিনি একটি হোটেল তৈরি করেছেন।  ওই হোটেলের জায়গাটি একসনা লিজের ভূমি। একবছরের জন্য লিজ নেওয়া ভূমিতে কীভাবে পাকা-স্থায়ী ভবন তৈরি করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্তের ব্যাপার।’

দমারচরের মানচিত্র

ভূমিহীনদের ভূমি দখলে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাতিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন আহাম্মদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার দখলে কোনো ভূমিহীনের জমি নেই। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমার দখলে কোনো খাস জমি আছে, তাহলে সেটা তাকে দিয়ে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দমারচর কী জিনিস, দেখতে কেমন, আজ পর্যন্ত তাও দেখতে গেলাম না। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হচ্ছে! বরং আমি আমার দলের ত্যাগী নেতাদের সেসব জমি বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছি। যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, তাদের কাউকে কাউকে নিজের পকেটের টাকা দিয়েও জমির বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

একই কথা বললেন জাহাজমারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিনেরও।  তিনি বলেন, ‘আমার সেখানে কোনো জমি নেই।  শুনেছি, কে বা কারা আমার নাম বলে ভূমিহীনদের কাছ থেকে জমি দখল নিতে চেয়েছিল। পরে আমি এ সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি।’

ভূমিহীনদের জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম বিল্লাহও। তিনি বলেন, ‘আমার নামে জমি আছে, তা আমি নিজেও জানি না।  অথচ আপনি বললেন জমি আছে। এসব রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম বলেন, ‘এগুলো আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ঘটেছে।  এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।  কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলা প্রশাসক যদি নির্দেশ দেন, তবে অভিযোগ ছাড়াও তদন্ত করা যায়। আমার আগে অনেকেই তো দায়িত্ব পালন করেছে। তারাও চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি।  এখানে অনেক বিষয় আছে, যা চাইলে করা যায় না।’

শুধু হাতিয়া নয়, জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরলক্ষ্মী, চরনোমান, চরবায়েজিদের প্রায় ৩০ হাজার একর খাস জমির মধ্যে সাড়ে ১১ হাজারেরও বেশি জমি রয়েছে প্রভাশালীদের দখলে। এই দখলদারদের মধ্যে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন, নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং সরকারদলীয় বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ।  এরমধ্যে বুলুর দাবি, তার মালিকানাধীন সলজিত ডেইরি অ্যান্ড মৎস্য খামারের নামে ১০০ একর।  আর কিরণের গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের নামে রয়েছে ২০০ একর।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপি সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এবং পরে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকার সময় বরকত উল্লাহ বুলু তার এই সলজিত ডেইরি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রভাবশালীদের দখলে থাকা চরাঞ্চলের খাস জমি

এমন অভিযোগের পর তৎকালীন সরকারের সময় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।  ভূমি সংস্কার বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. মর্তুজা হোসেন মুন্সীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৫ সালের অক্টোবরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মামুনুর রশিদ কিরণের গ্লোব ফিশারিজের দখলে ৪০০ একর এবং নোয়াখালীর শিল্পপতি আনোয়ার মীর্জার আল আমীন গ্রুপের দখলে ৫০০ একর জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ এবং ফলদ ও বনজ বৃক্ষসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।  প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আনোয়ার মীর্জার ভাই শামীম মীর্জার আল-বারাকা অ্যাগ্রো ফিশারিজের দখলেও রয়েছে শতাধিক একর জমি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই জমি তারা ১৯৭২ ও ১৯৮৬ সালে বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ভূমিহীনদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে অর্জন করেছেন। তাদের দখলে রাখা এ বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ ৯৮/৭২ এবং ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ ৮৪ অনুযায়ী জমির সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন। কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী—শুধু ভূমিহীন পরিবারই খাসজমি বরাদ্দ পাওয়ার অধিকারী। এছাড়া,  বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ভূমি কেনাবেচা কিংবা হস্তান্তর করা যাবে না বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ। তিনি মোবাইলফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মালিকানাধীন বেশিরভাগ জমিই কিনেছি।  কিছু আগে থেকেই কিছু জমির মালিক আমি।’কিন্তু সে ভূমি আগে থেকে কীভাবে পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি লাইনটি কেটে দেন।  এরপর অন্তত দশবার তাকে কল দেওয়ার পরও কল রিসিভ করেননি এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি এমএলএম কোম্পানির নজর পড়েছে সরকারের এসব খাস জমিতে।  প্রতারণার দায়ে আদালতে বিচারাধীন ডেসটিনি গ্রুপের সহযোগী পরিচালক আল ফরিদের মালিকানাধীন লক্ষ্মী অ্যাগ্রো ফিশারিজের দখলে রয়েছে ৪৬২ একর জমি। বর্তমানে তিনি ডেসটিনির অর্থআত্মসাৎ মামলার পলাতক আসামি।  এছাড়া তারেক রহমানের এক সময়ের ব্যবসায়িক সহযোগী আমিন আহমেদ ভূঞা ওরফে ডলার আমিনের দখলে রয়েছে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরআলাউদ্দিন এলাকার ৩০০ একর জমি। এই এলাকার প্রভাবশালী মহিউদ্দিন চৌধুরী চরআক্রাম উদ্দিনে ৪০০ একর জমি দখলে রয়েছে।  এই বিষয়ে তার দাবি—‘আমি ক্রয় সূত্রে এসব জমির মালিক। ’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রভাবশালীদের দখলে বিপুল পরিমাণ খাসজমি চলে যায়। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার  আমলে অবৈধ দখলদার হিসেবে ৫৮টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। ওই সময় অনেকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও আদায় করা হয়েছে।

এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর ২০০৯ সালের দিকে অবৈধ দখলদার হিসেবে ৪৩ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু ওইসব দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রভাবশালী সাধারণ ভূমিহীন, আত্মীয়-স্বজনের নামে এবং স্বনামে-বেনামে ভূমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।  পরে সময়-সুযোগ বুঝে  নামমাত্র মূল্যে ওই ভূমি কিনে নিজেদের দখলে নিয়ে নেন।  আর যারা জমি বিক্রি করতে রাজি হননি, তাদের বিভিন্ন মামলা জড়িয়ে ভিটেবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে।

এই অভিযোগ বিষয়ে অস্বীকার করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্যাহ বুলু। তার দাবি, ‘সুবর্ণচরে আমার ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের যে জায়গা আছে, তার পরিমাণ মাত্র ১০০ একরের মতো।  তবে এগুলো খাস জমি নয়। এগুলো আমি যাদের থেকে কিনেছি, তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ছিল।’

উপকূলের খাস জমি

উপজেলা ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী এসব ভূমিকে খাস জমি বলা হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবানে বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, ‘সেটা আমার নয়। বর্তমান এমপি কিরণ সাহেবের। ওই জমিগুলো ২০০৯ সালের জরিপে খাস জমি হিসেবে পাওয়া গেছে।  আমার ভূমিগুলো প্রকৃত মালিকানার জমি।’

খাস জমি বন্দোবস্তে অনিয়মনের বিষয়ে ট্রান্সপারেসি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘খাস জমি দ্ররিদ্র ও ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা।  প্রভাবশালী ও বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যোগসাজশের মাধ্যমে নিজেদের সম্পদের বিকাশ করছে, এটা শুধু দুর্নীতি বা ক্ষমতার প্রভাব সেটা নয়, এটা একটা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক চর্চা, সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য  বিষয়ও। ‘ এই ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, ‘লিজ নেওয়া জমি নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি খাস জমিও কেউ স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। এমন অবস্থায় কেউ স্থায়ীভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে ভবন তোলার তো প্রশ্নেই আসে না।’ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ভূমিহীনদের জমি যদি কেউ বেদখল করে রাখে, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’ এক্ষেত্রে অপরাধী এমপি-চেয়াররম্যান কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি, যেই হোক—কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

চতুর্থ পর্ব: মামলার জালে দিশেহারা ভূমিহীনরা  
তৃতীয় পর্ব: খাস জমি বন্দোবস্তে নিয়মের তোয়াক্কা করছে না হাতিয়া ভূমি অফিস!
দ্বিতীয় পর্ব: জমি বনের, বন্দোবস্ত দেয় ভূমি অফিস!
প্রথম পর্ব: দুর্গম চরেও ঠাঁই মিলছে না ভূমিহীনদের

সারাবাংলা/এসএইচ/এমএনএইচ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন