বিজ্ঞাপন

বন্যা সহনশীল বিনা-১১ ধানে আশায় বুক বেঁধেছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা

October 18, 2018 | 8:46 am

।। জাহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে পতিত জমিতে বন্যা সহনশীল বিনা ধান-১১ চাষাবাদ করে হাসি ফুটেছে চরাঞ্চলের কৃষকদের মুখে। এই দুই উপজেলার বিভিন্ন চরের পতিত জমিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক বিনা ধান-১১ চাষ করেছেন প্রায় আড়াইশ একর জমিতে। এবারের বন্যায় অন্যান্য ধান নষ্ট হয়ে গেলেও বন্যার প্রভাব এড়িয়ে ক্ষেতে দাঁড়িয়ে আছে বিনা ধান-১১।

জানা গেছে, রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের চরসাজাই মন্ডলপাড়া গ্রামের এরশাদুল হক মাস্টার এই এলাকায় বিনা ধান-১১ চাষের অন্যতম পথিকৃৎ। গত মৌসুমে তিনি একাই পরীক্ষামূলকভাবে চরের এক একর পতিত জমিতে বিনা ধান-১১ চাষ করে ভালো ফলন পান। পরে সেই ধানের বীজ চলতি মৌসুমে তিনি এই দুই উপজেলায় চরাঞ্চলের পাঁচ শতাধিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহ করেছেন। এই ধান রোপনের নিয়মকানুনও তিনিই শিখিয়ে দেন কৃষকদের।

বিজ্ঞাপন

এরশাদুল হক মাস্টার জানান, গত মৌসুমে বিনা ধান-১১ চাষে সাফল্যের পর তিনি চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলের কৃষকদের একত্রিত করে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন পতিত জমিতে বন্যা সহনশীল বিনা ধান-১১ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তার অনুপ্রেরণায় বিনা ধান-১১ আবাদ করা চাষিরা আশায় বুক বাঁধেছেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, এ জাতের ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ফলন বেশি হয়। তাছাড়া, বন্যার পানির কোনো প্রভাবও এই ধানে পড়ে না। সে কারণেই এই এলাকার জন্য এই জাতের ধান উপযোগী।

রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে অন্যন্য জাতের ধানক্ষেত নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বন্যা সহনশীল বিনা-১১ ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এই বন্যা সহনশীল ধানের আবাদ চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে চরের মানুষের আর অভাব থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ছক্কু জানান, এই এলাকার কৃষকদের কাছে এরশাদ নতুন জাতের ধানের আবাদের পথিকৃৎ হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিষান-কিষাণীরা তার বাড়িতে ভিড় জমান পরামর্শ নেওয়ার জন্য।

এ বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রনয় বিষন দাস বলেন, বন্যা সহনশীল বিনা ধান-১১ আবাদ করে এরশাদুল হক এই চরাঞ্চলে আলোড়ন তৈরি করেছেন। তার দেখানো পথেই এখন নতুন এই জাতের ধান আবাদে আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা। আশা করছি, এই বিনা-১১ জাতের ধান বন্যাপ্রবণ এই অঞ্চলের আবাদে পরির্ব্তন নিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (বিভাগীয় প্রধান উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ) ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এরশাদুল হককে আমরা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল আমিন জানান, এরশাদ রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার পাঁচ শতাধিক কৃষককে বিনামূল্যে বন্যা সহনশীল জাত বিনা ধান-১১ এর বীজ দিয়েছে। আমি তার অনেক ফসলি জমি পরিদর্শন করেছি। আমি মনে করি, এরশাদ  শুধু একজন কৃষক বা কৃষি উদ্যোক্তা নন, তিনি একজন কৃষি গবেষকও বটে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন