বিজ্ঞাপন

খুলনায় ‘বড় ফ্যাক্টর’ ছয় আসনের দেড় লাখ নতুন ভোটার

December 13, 2018 | 8:31 am

।। মো. জামাল হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

খুলনা: সারাদেশে বইছে নির্বাচনি হাওয়া। নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট সারাদেশের নির্বাচনি এলাকাগুলো। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ার পরে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে নিশ্চুপ দলগুলোও হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দলীয় এবং জোট প্রার্থীদের বিজয়ী করতে এসব দলের কর্মী এবং সমর্থকরা মাঠেও নামছেন। বিভাগীয় শহর খুলনায় ছয় আসনে নানা হিসাবের মধ্যে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা ‍দিয়েছে নতুন ভোটার। মোট ছয়টি আসনে ১০ বছরের ব্যবধানে নতুন ভোটার বেড়েছে দেড় লাখের বেশি।

খুলনায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন স্বতন্ত্র এবং জোটের ৩৫ প্রার্থী। এবার প্রত্যেক প্রার্থীর জন্যই চ্যালেঞ্জ নতুন ভোটাদের সমর্থন পাওয়া।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৬২ জন। এবার মোট ভোটার ১৮ লাখ ৮৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ২ হাজার ৮৩৫ জন এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬ জন।

বিজ্ঞাপন

খুলনা-১ আসনের মধ্যে রয়েছে দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা। এবার এখান থেকে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন পঞ্চানন বিশ্বাস। এই আসনের সংসদ সদস্য তিনি। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন বিএনপি প্রার্থী আমীর এজাজ খান, লাঙ্গল প্রতীকে রয়েছেন সুনীল শুভ রায়, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী মাওলানা আবু সাইদ এবং কাস্তে প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত প্রার্থী অশোক কুমার সরকার।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ননী গোপাল মণ্ডল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপি নেতা আমীর এজাজ খান পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৪২০ ভোট।

মহানগরের সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে খুলনা-২ আসন। এখান থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মিজানুর রহমান মিজান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সেবার ১ হাজার ৬৭০ ভোটের ব্যবধানে মিজানুর রহমান মিজান পরাজিত হন। নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ৯০ হাজার ৯৫০ ভোট আর মিজানুর রহমান পেয়েছিলেন ৮৯ হাজার ২৮০ ভোট।

বিজ্ঞাপন

এই আসনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, ভোটের মাঠে মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের প্রার্থী মনিরা বেগম, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টির প্রার্থী কে এম ইদ্রিস আলী বিল্টু, কাস্তে প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী এইচ এম শাহাদত এবং বিএনএফ প্রার্থী এস এম সোহাগ টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা নিয়ে খুলনা-৩ আসন। বর্তমান সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান এবারও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এই আসনে। তবে কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম নয় এবার বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রকিবুল ইসলাম বকুল। হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়বেন অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মিল হক, জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রার্থী জনার্দন দত্ত। তার প্রতীক মই।

খুলনা-৪ আসনের মধ্যে রয়েছে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা। এই আসন থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ শাহ কামাল তাজকে ১১ হাজার ৬৬৯ ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোল্লা জালাল উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ ৯ হাজার ২১৬ ভোট। আর শরীফ শাহ কামাল তাজ পেয়েছিলেন ৯৭ হাজার ৫৪৭ ভোট।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার খুলনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিএনপি প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী কেএম আলী দাদ। তার প্রতীক কোদাল। বিএনএফ থেকে দাঁড়িয়েছেন মেজর (অব.) শেখ হাবিবুর রহমান। তার প্রতীক টেলিভিশন। ইসলামী আন্দোলন-এর প্রার্থী ইউনুস আহমেদ শেখ, জাকের পার্টির প্রার্থী আনসার আলী।

বিজ্ঞাপন

ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা নিয়ে খুলনা-৫ আসন। ২০০৮ সালে এই আসনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছে ৩৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ৪ হাজার ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন পরওয়ার।

এবার খুলনা-৫ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ধানের শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সিপিবি থেকে কাস্তে প্রতীকে লড়বেন চিত্তরঞ্জন গোলদার, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহীদ আলম।

২০০৮ সালে খুলনা-৬ (পাইকগাছা- কয়রা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা নির্বাচত হয়েছিলেন। শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ১ লাখ ১৬ হাজার ১৬১ ভোট পেয়েও পরাজিত হন। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী অ্যাড. নুরুল হক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আখতারুজ্জামান বাবু, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন জামায়াত প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী নূর আহমেদ, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়েছেন জাকের পার্টির প্রার্থী শেখ মর্তুজা আল মামুন, সিপিবি’র প্রার্থী সুবাস চন্দ্র সাহা এবং টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির মির্জা গোলাম আজম।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’র খুলনা জেলা সম্পাদক অ্যাড. কুদরত-ই খুদা সারাবাংলাকে বলেন, খুলনার প্রায় দেড় লাখ নতুন ভোটারের অধিকাংশই সুশিক্ষিত। তাই ধারণা করা যায়, তারা দলীয় প্রভাবের বাইরে থেকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ভোট দেবেন। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়টিও ভাববেন তারা।

সারাবাংলা/এটি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন