August 20, 2018 | 2:17 pm
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুই দিন। এক সপ্তাহ আগ থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে পশু উঠলেও হাট পুরোদমে জমে উঠেছে আজ। প্রতি হাটেই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়, সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রিও। তবে ফেরি ও যাতায়াত সমস্যায় এখনও পুরোপুরি পশু হাটে আসতে পারেনি বলে জানালেন ব্যাপারি ও ইজারাদাররা। এ কারণে পশুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
সকাল থেকে রাজধানীর শনির আখড়া, গোলাপবাগ ও সাদেক হোসেন খেলার মাঠ ও ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকার পশুর হাটগুলো ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শনির আখড়া পশুর হাটে সকাল থেকেই ছিল ক্রেতাদের ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সে ভিড়। একই অবস্থা সায়েদাবাগ গোলাপবাগ মাঠ এলাকার হাটে। বেপারিদের সঙ্গে দরদাম চলছে ক্রেতাদের। দরদামে পছন্দ হলেই গরু কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে অনেককে। আবার কেউ কেউ দর দাম দেখে ফিরে যাচ্ছেন, আরও পশু এলে দাম কিছুটা কমবে এমন আশায়।
ধোলাইখাল হাটে মাঝারি সাইজের ১৫টি পশু নিয়ে শরীয়তপুর থেকে এসেছে মালেক সরদার। তিনি সারাংলাকে বলেন, ‘আমার আরও ৯টা পশু এখনও পথে। সেগুলো আসতে আসতে বিকাল বা রাত হবে। যে পনেরটি এনেছি সেগুলো এ হাটে আনতে তিনদিন লেগেছিল। ৭টা বিক্রি করেছি। গতকাল ৫টা আজ ২টা বিক্রি করেছি। এখনও দুইটা আছে। সেগুলোরও দরদাম চলছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ফেরির কাছে আসতেই লেগে গেছে দুদিন। আবার রাস্তায় জ্যাম তো আছেই। সব মিলিয়ে খুব সমস্যায় আছি। পথের গরুগুলো হাটে এলে চিন্তামুক্ত হতে পারব।’ তার মতে, এখন গরুর যে দাম তাতে কিছুটা লাভবান হচ্ছেন ব্যাপারিরা। তার কথায় বুঝা গেলো তিনি নিজেরও লাভবান হয়েছেন।
একই হাটের অপর এক ব্যাপারি সাঈদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাতায়াত সমস্যার কারণে এখনও অনেক গরু হাটে আসেনি। হাটের অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। কিন্তু আর বাকি আছে দুদিন। এর মধ্যে যারা কোরবানি দিবেন তারা দাম যায় হোক গরু তো অবশ্যই কিনবেন। সে কারণে হয়তো ব্যাপারিরা দাম বেশি চাইছে।’ তবে দাম যাচাইবাছাই করে গরু কিনতে ক্রেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চুন্নু ব্যাপারির গরু দেখাশুনা করতে গ্রাম থেকে এসেছেন রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘তিন-চারদিন রাস্তায় থাকতে থাকতে পশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গত পরশু গরু মারাও গেছে ১টা। আরেকটা মরার আগেই জবাই করে দিয়েছে ব্যাপারীরা। যে কারণে অনেকেই সীমিত লাভে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে পথে যেসব গরু আছে সেগুলো এলে কাল গরুর দাম আরও কমবে।’
গোলাপবাগ মাঠে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রেজাউল সিদ্দিক জামান এসেছেন গরু কিনতে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এতোদিন অফিসের কারণে আসতে পারিনি। আজ এসে অনেক্ষণ ধরে হাটে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। দু-একটা পছন্দ হলেও দাম চাচ্ছে বেশি। একারণে আরও ঘুরে দেখতেছি। এর মধ্যে দরদামে পছন্দ হলে আজই কিনে নিবো। না হলেও কালও সময় আছে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি কি হয়। হাটে তো এখনও অনেক পশুই আসেনি মনে হচ্ছে।’
ভেদরগঞ্চ থেকে ১৭টি পশু নিয়ে ১৬ আগস্ট শনির আখড়ায় এসেছেন রসূল ব্যাপারি। তিনি সারাবাংলাকে জানান, দুদিনে ৯টি পশু বিক্রি করেছেন। তার বিক্রিত গরুগুলো মাঝারি সাইজের হওয়ায় এবং দাম ১ লাখের ভেতরে হওয়া দ্রুত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বাকিগুলো একটু সাইজে বড় হওয়ায় দাম দেড় থেকে আড়াই লাখ হওয়ায় ক্রেতারা তেমন সাড়া দিচ্ছে না। তার মতে, ওই হাটে ছোট ও মাঝারি পশুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শনির আখড়া হাটের ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হাটে পশুর দাম তুলনামূলক কম। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই খুশি। কিন্তু হাটে এখনও পর্যন্ত অর্ধেক গরু আসতে পারেনি ফেরি ও রাস্তায় জ্যামের কারনে। সেগুলো এলে দাম হয়তো আরও কমতে পারে।’
ব্যাপারিরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে সেটি আমাদের নাগালের বাহিরে হবে। আমরা যদি এমনটা জানতে পারি তবে তো অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। তারা তো আমাদের কাছ থেকে দাদন নিয়েছে। সেক্ষেত্রে এমন করার কথা নয়। তবে কৃত্রিম সংকট ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে তৎপর হতে হবে।’
সারাবাংলা/এসএইচ/এমও