বিজ্ঞাপন

২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ

April 24, 2018 | 7:46 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশের ২১তম এবং দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ। তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনীতিতে আসা ৭৪ বছর বয়সী মো. আবদুল হামিদ নতুন ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে এ শপথ নিলেন।

মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর স্পিকার আবদুল হামিদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে শুরু করেন। এরপর ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মিঠামইন থেকে বেড়ে ওঠা প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আব্দুল হামিদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত ১৯ মেয়াদে ১৬ জন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আবদুল হামিদ এই পদে ১৭তম ব্যক্তি হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে শপথ নিলেন। সাংবিধানিক বিধিতে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগের কারণে এটাই হবে তার শেষ মেয়াদ।

বিজ্ঞাপন

কুরআন তিলওয়াতের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে দুটি চেয়ারে বসেন আবদুল হামিদ ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ বাক্য পাঠ করার পর হাত তুলে সবাইকে সালাম জানান আবদুল হামিদ। এরপর তিনি মঞ্চ থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।

এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। শপথ গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে একে একে কুশল বিনিময় করেন। পক্ষান্তরে আগত অতিথিরাও দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়া রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানান।

শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ফুলের সমাহারসহ ও রঙ্গিন আলোয় আলোকিত করা হয়েছিল বঙ্গভবন। দরবার হলের পাশে বঙ্গভবনের বিশাল মাঠ সংলগ্ন বারান্দায় অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল।

বিজ্ঞাপন

আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতা তমিজা বেগম। গুরুদয়াল কলেজ থেকে মানবিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্মাতক ডিগ্রি লাভ করেন আবদুল হামিদ। ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করার পর কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পরপর্যন্ত পাঁচবার জেলা বার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৬১ সালে কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই যোগ দেন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে। আন্দোলন সংগ্রামের পথে কয়েকবার কারাবরণও করেন আবদুল হামিদ। গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাব ডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব নেন। ১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি।

এরপর ১৯৬৯ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। এরপর ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে ১৯৯৬ সালের  ১৩ জুলাই থেকে ২০০১-এর ১০ জুলাই পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০১ এর ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেন। আর নবম সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো স্পিকার হন। বিবাহিত জীবনে তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন দাখিলের সময় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একমাত্র আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। সে কারণে ঘোষিত তফসিল অনুসারে ১৮ ফেব্রুয়ারি আর কেউ ওই পদের নির্বাচনে আগ্রহী না হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।

বিজ্ঞাপন

২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত আবদুল হামিদ। এর দুইদিনের মাথায় তার শপথ অনুষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন