বিজ্ঞাপন

নোমানের আসনে চোখ খসরু-শাহজাহানের

November 16, 2018 | 9:12 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বন্দরনগরীর হালিশহর-পাহাড়তলী ও খুলশী থানা এলাকা নিয়ে গঠন করা হয় নতুন একটি আসন চট্টগ্রাম-১০। দলের সিদ্ধান্তে নিজের দীর্ঘসময়ের নির্বাচনি এলাকা কোতোয়ালি-বাকলিয়া পরিবর্তন করে পুনর্গঠিত আসন থেকে ভোটে লড়েন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। সেই নির্বাচনে হারলেও গত ১০ বছর ধরে তিনি ওই আসনে নির্বাচনকেন্দ্রিক দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন।

কিন্তু নির্বাচনের ডামাডোল শুরুর পর ওই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একই আসন থেকে ভোটে লড়তে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো জামায়াত দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীও। ফলে চট্টগ্রাম-১০ আসন নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরাই।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নির্বাচনী আসন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)। তিনি তিন বার এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৮ সালে পুনর্গঠিত চট্টগ্রাম-১০ আসনের অধিকাংশ নির্বাচনী এলাকা মূলত ওই আসন থেকেই নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আমির খসরুর জন্য চট্টগ্রাম-১০ ও ১১ উভয় আসন থেকেই দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। আর নোমান দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন শুধুমাত্র চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে।

আবদুল্লাহ আল নোমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি শুধু একটি আসন থেকেই মনোনয়ন চাইবেন। এই আসনে মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী। মনোনয়ন না পেলে তিনি নির্বাচন করবেন না।

‘২০০৮ সালে ১১৩টি ভোটকেন্দ্রের একশটিতে আমি এগিয়ে ছিলাম। ১৩টি কেন্দ্রে ভোট কেড়ে নিয়ে আমাকে মাত্র ৮ হাজার ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি অসুস্থ ছিলাম। মাত্র দুই দিন গণসংযোগ করেই আমি এত ভোট পেয়েছিলাম। এরপর থেকে আমি নিয়মিত এই আসনে কাজ করে গেছি। মনোনয়ন পেলে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসনে আমি অবশ্যই জিতব,’— বলেন নোমান।

বিজ্ঞাপন

আবদুল্লাহ আল নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আজিম হিরু সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে স্যার নিয়মিত চট্টগ্রাম-১০ আসনে দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এই আসনের ভোটারদের সঙ্গে স্যারের একটি নিবিড় যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এলাকায় প্রার্থী হিসেবে স্যার অনেক জনপ্রিয়। এরপরও দল যদি মনোনয়ন না দেয় তাহলে সেখানে নির্বাচন করবেন না।’

নোমানের আসন হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১০ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তার ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনে যেসব সিনিয়র নেতারা আছেন, উনারা স্যারের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। স্যার নিজে করেননি বা স্যারের নির্দেশে করেননি। নেতারা ভাবছেন, স্যার এই আসনে প্রার্থী হলে ভালো হবে।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জন্য চট্টগ্রাম-১০ আসনের  দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহসভাপতি শামসুল আলম। তিনি বলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ি ওই এলাকায়। ১৯৯১ সালের পর সেখানে তিনি তিন বার এমপি হয়েছেন। এলাকার মানুষের চাহিদার কারণে আমরা মনোনয়নপত্র নিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-১০ আসনে জামায়াত দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর জন্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র নেওয়া হয়। শাহজাহান চৌধুরী ২০০১ সালে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এই আসনে শাহজাহান চৌধুরী কখনোই দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন না। হঠাৎ করে শাহজাহান চৌধুরীর এই আসন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।

তবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে নির্বাচন করতে শাহজাহান চৌধুরী ও তার অনুসারী জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আগ্রহী নন বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় শাহজাহান চৌধুরী ২০০৮ সালের নির্বাচন করতে পারেননি। এসময় তার আসন চট্টগ্রাম-১৫ থেকে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের তৎকালীন আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে দুই নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের মধ্যেই শামসুলকে আবারও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নির্বাচন করতে বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। আর শাহজাহানকে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম-১০ থেকে নির্বাচন করতে।

দুই নেতাই এখন কারাবন্দি। এ অবস্থায় শাহজাহানের অনুসারীরা কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আর কেন্দ্রের নির্দেশে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে শাহজাহান চৌধুরীর জন্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে শাহজাহান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা এনামুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রকে বলেছি, যদি শাহজাহান চৌধুরীকে ২০ দলের সমর্থন এনে দিতে পারেন, তাহলে তিনি চট্টগ্রাম-১০ থেকে নির্বাচন করবেন। কিন্তু সেটা হবে না। কারণ নোমান সাহেব কিংবা খসরু সাহেবের মতো জাতীয় নেতা থাকতে বিএনপি সেই আসন ছাড়বে কেন? তাহলে শাহজাহান সাহেবেরও সেই আসন থেকে নির্বাচন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে হারিয়ে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম  নগর পর্যায়ের নেতা ডা. আফছারুল আমিন। এবারও আফছারুল আমিন সেই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।

সেই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে এবার আরও লড়তে চান বিএনপির সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু ও ফরিদ মাহমুদও আছেন আলোচনায়।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন