বিজ্ঞাপন

তিস্তা-রোহিঙ্গায় ভারত আশ্বাস দিলেও যৌথ বিবৃতিতে নেই

February 9, 2019 | 9:37 pm

।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নয়াদিল্লি সফর শেষে ঢাকায় ফিরেই শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘তিস্তা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত আশ্বস্ত করেছে। আমরা অনেক দূর পর্যন্ত সমাধান করে ফেলেছি। এখন সময় যাচ্ছে কিন্তু সমাধান হয়ে যাবে। এগুলো নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।’

অন্যদিকে, ঢাকা-নয়াদিল্লি বৈঠক শেষে শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, দুই দেশের নদী নিয়ে কথা হয়েছে বলা হলেও তিস্তা বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এছাড়া, ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি এড়িয়ে রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি সফর শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বিমানবন্দরে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার মূল কারণ শেখ হাসিনা। আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এমন উষ্ণ সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে তৈরি করেছেন, যে কারণে আমার সঙ্গে আলাপটা ভালো হয়েছে। আমরা অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা নিয়ে কী আলাপ হয়েছে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রস্তাব দিয়েছি রোহিঙ্গা সংকট যেন তাড়াতাড়ি কেটে যায়। এই বিষয়ে ভারতের কাছে সহায়তা চেয়েছি। তাদের রেসপন্সটা খুব ইতিবাচক ছিল। তারা সাহায্য করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।’

ভারত এই বিষয়ে কী ধরনের সহায়তা করবে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছে সাহায্য চেয়েছি, তারা কীভাবে আমাদের সাহায্য দেবে, তার পথ বের করবে।’

আরও পড়ুন: তিস্তায় আশাবাদী ঢাকা, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আশ্বাস নয়াদিল্লির

বিজ্ঞাপন

এই সময় গণমাধ্যমকর্মীরা বলেন, মিয়ানমার যেমন রোহিঙ্গা শব্দে বিশ্বাসী নয়, তেমনি ভারতসহ অনেক দেশই রোহিঙ্গায় বিশ্বাসী নয়। ঢাকা-নয়াদিল্লি বৈঠক শেষে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতিতেও দেখা দেছে, সেখানে রোহিঙ্গা শব্দটি এড়িয়ে রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে রোহিঙ্গা শব্দেই ভারত বিশ্বাস করে না, সেখানে তারা এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে কতটুকু আন্তরিক থাকবে?

জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবেই বলুক, তারা চলে গেলে আমাদের জন্য অনেক ভালো।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে বলছে। অথচ একই সময়ে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে। বিষয়টি কী?

এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সরকার তাদের বাংলাদেশে পাঠায়নি। কিছু ফড়িয়া এই রোহিঙ্গাদের প্ররোচনা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা যদি হয় আর তারা যদি বাংলাদেশের নাগরিক না হয়, তবে ভারত সরকার কখনোই তাদের বাংলাদেশে পাঠাবে না। তাদের কান্ট্রি অব অরিজিনে পাঠাবে, নট টু বাংলাদেশ।’

বিজ্ঞাপন

‘যদি ২০১১ সালে ১৫ বছরের জন্য তিস্তাচুক্তি হতো, তবে এতদিনে চুক্তির অর্ধেক সময় পার হয়ে যেতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিস্তা ইস্যুতে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। এখন তিস্তা ইস্যুতে ভারত আবার আশ্বাস দিয়েছে। এই আশ্বাসের ওপর আপনি কতটুকু আস্থাশীল?’ গণমাধ্যমকর্মীদের এমনই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় আশাবাদী। বাংলাদেশ-ভারত বড় বড় সমস্যার সমাধান করেছে। এই আশার ওপর থেকেই ইউ হেভ ডেভেলপ এ সেন্স অব কনফিডেন্ট, সেন্স অব মিউচুয়াল ট্রাস্ট, আমি সেটাতে বিশ্বাস করি। তারা আশ্বাস দিয়েছে, সেটার ওপর আমি যথেষ্ট বিশ্বাসী।’

ঢাকা-নয়াদিল্লি বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে তিস্তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা সব নদী নিয়েই কথা বলেছি, যেন সমাধান হয়। তিস্তা নিয়েও আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা আশাবাদী।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তিস্তা নয়, অনেক নদীই তো আমাদের আছে। শুধু একা তিস্তা নিয়ে বলছেন কেন? ৫৪টা নদী আমাদের আলোচনায় আছে। আমরা সব নদীরই আস্তে আস্তে সমাধান করবো। ’

কবে নাগাদ তিস্তা নিয়ে সমাধান আসতে পারে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো দিন-তারিখ দিতে পারবো না। আমরা শুধু আশাতেই আছি।’

এদিকে, ভারতের অন্যতম গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত, ‘জিইয়ে রাখতে তিস্তা প্রসঙ্গ তুলল ঢাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলছে, ‘ঘটনা হলো, সরকারের এই মেয়াদে তিস্তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপের সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু বাংলাদেশ চাইছে ভারতের সঙ্গে তিস্তা প্রসঙ্গটিকে জীবন্ত রাখতে। যেন পরবর্তী সরকারের গোড়া থেকেই এই নিয়ে চাপ বাড়ানো যায়। তা ছাড়া নিজের ইনিংসের গোড়াতেই তিস্তা প্রসঙ্গটিকে ফের আলোচনার টেবিলে এনে বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বার্তা দিতে চাইল হাসিনা সরকার।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারতের পঞ্চম যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দিতে বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লি যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

এর আগে, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সর্বশেষ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমএনএইচ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন