বিজ্ঞাপন

জোড়া সাঁকো; যার প্রতিটি দেয়ালে শুনি কবিগুরুর বাণী

May 8, 2019 | 4:23 pm

এলমা খন্দকার এষা

‘একটুকু ছোয়া লাগে

বিজ্ঞাপন

একটুকু কথা শুনি’

জোড়া সাঁকো ঠাকুর বাড়ি, যার প্রতিটি দেয়াল ছুঁয়ে আছে কবিগুরুর স্মৃতি। সেখানেই যেন মিশে আছে রবীন্দ্রপ্রেমীদের ভাললাগার যত অনুভূতি।

জোড়া সাঁকোর অপর নাম রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। অল্প সময়ের কলকাতা ভ্রমণের সময় একবেলা জোড়া সাঁকো না গেলেই নয়। সেখানে গেলেই যে ছুঁয়ে দেখা যাবে কবিগুরুর স্মৃতি।

বিজ্ঞাপন

মারকুইজ স্ট্রিট থেকে উবার নিয়ে চলে গেলাম জোড়া সাঁকোর উদ্দেশ্যে। টিকেট কেটে ঢুকতে হয় এখানকার জাদুঘরে। মেইন গেটে নেমে কয়েক পা আগালে জোড়া সাঁকো ঢোকার মুল ফটক। এই ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের বামে একটা বিশাল কাঠগোলাপ গাছ। ঘাসের ওপর দুধ সাদা কাঠগোলাপে যেন ছেয়ে আছে।

পঁচিশে বৈশাখ

প্রধান ফটক থেকে ডান দিকে তাকাতেই একটা গ্যারেজে রাখা কবিগুরুর ব্যবহৃত একখানা বড় গাড়ি। গাড়ি দেখা হয়ে গেলে প্রধান ভবনের দিকে কয়েক পা হাঁটলে ঠাকুরবাড়ির বিশাল অন্দরমহল। এই অন্দরমহলে দাঁড়ালেই অনুভব করা যায় সেইসব পূরনো দিনের স্মৃতি। আসলে ঠাকুর বাড়ি বলতে আমাদের চিন্তায় যেমন ছবি ভাসে ঠিক তেমনটাই এই অন্দরমহল। মনে পড়ে গেল এই অন্দরমহলে একসময় দোল আর দূর্গ উৎসব হোত। দোতলার পূর্ব বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা অন্দরমহলের সেই দৃশ্য এক অপূর্ব অনুভূতি এনে দিল মনে।

বিজ্ঞাপন

দোতলায় যেয়ে মিউজিয়াম দেখা শুরু। কবিগুরুর কত স্মৃতি দেখছি। ঘরজুড়ে মৃদু লয়ে বাজছে স্নিগ্ধ রবীন্দ্রসংগীত। এক ঘর থেকে আরেক ঘরে কবির পূর্বপুরুষদের বর্ণনা সহ ছবি আর কবি গুরুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা। ঘুরে দেখতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। পর্যটকদের জন্য দুঃখের বিষয় সেখানে কোন ছবি তুলতে দেয়া হয় না। বিশেষ কারণেই তা মানা হয়। আর সেখানে যারা ঘুরতে যায় তারা ছবি না তোলার বিষয়টাকে সম্মান করে ছবি তোলে না।

অত্যন্ত যত্ন ও পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা মিউজিয়ামের প্রতিটি ঘর ঘুরে এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহলের একটা ছোট্ট উঠান দেখা যাবে। এ যেন উনবিংশ শতককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একের পর এক একটি রোমাঞ্চকর নমুনা।

পঁচিশে বৈশাখ

তিনতলা এই ভবনের প্রতিটি কোনায় ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন স্মৃতির সাথে কবিগুরুর জীবন বৃত্তান্ত রাখা আছে। কবিগুরুর ঘরে রয়েছে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র। কাচের আলমারিতে সাজানো কবিগুরুর ব্যবহৃত কিছু পোশাক। সেসময় ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা যে পোশাক পরতেন, কবিগুরু তার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি জোব্বার মতো দেখতে একধরনের লম্বা পোশাক পরতেন। একটা আলমারিতে ফাল্গুনী নাটকে ব্যবহৃত কালচে খয়েরী জোব্বাটা সাজিয়ে রাখা।

বিজ্ঞাপন

কবিগুরুর সেই দক্ষিনের বারান্দা এখনো দাঁড়িয়ে আছে শত বছরের হাজার স্মৃতি নিয়ে। এই বারান্দাটি কবিগুরুর ভীষণ পছন্দের ছিল। এই বারান্দায় কত গুণীজনের পদভারে জমজমাট থাকতো এই দক্ষিণে বারান্দা, ভেবে রোমাঞ্চিত হচ্ছিলাম আমি।

তবে যৌবনকালের পর এই বাড়িতে মহিয়ষী রবীন্দ্রনাথ আর থাকেননি। তিনি শান্তিনিকেতনেই বাকি জীবনটা কাটিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শেষ সময়ে তিনি লিখে গিয়েছেন (তিনি বলেছিলেন আর রানিচন্দ্র লিখেছিলেন),

‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি

বিচিত্র ছলনাজালে,

হে ছলনাময়ী।

মিথ্যা বিশ্বাসের ফাঁদ পেতেছে নিপুণ হাতে

সরল জীবনে…’

জোড়া সাকো ঘুরে ডুব দিতে হয়েছে কবিগুরুর রেখে যাওয়া সারাবিশ্বের জন্য, বাঙালির জন্য নিপুণ সৃষ্টিতে।

তাই যেতে যেতে বলতে হয়, ‘তুমি রবে নিরবে, হৃদয়ে মম’।

 

ছবি- লেখক

 

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন