বিজ্ঞাপন

চিরবিদায়ের পথে সুবীর নন্দী, চলছে শেষকৃত্য

May 8, 2019 | 4:47 pm

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ। এবার মহাজাগতিক সফরে রওনা হলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। বুধবার (৮ মে) বিকাল চারটায় রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে শুরু হয়েছে তার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া চলবে চার ঘণ্টাব্যাপী। তথ্যটি জানিয়েছেন, সুবীর নন্দীর চিকিৎসার সমন্বয়ক এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে সুবীর নন্দীকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুধবার বেলা ১১টায় শহীদ মিনারে নেয়া হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) নেয়া হয়। তারপর দুপুর দেড়টার দিকে চ্যানেল আই কার্যালয়ে নেয়া হয় সুবীর নন্দীকে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রামকৃষ্ণ মিশনে নেয়া হয় সুবীর নন্দীর মরদেহ। সেখান থেকে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে আনা হয় শেষকৃত্যের জন্য।

সবুজবাগের বরদেশ্বরী শ্মশানে বাবা সুবীর নন্দীকে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন মেয়ে ফাল্গুনী নন্দী

সুবীর নন্দী মঙ্গলবার (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বুধবার (৮ মে) সকাল পৌনে ৭টার দিকে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছে সুবীর নন্দীর মরদেহ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। ৩-৪ মিনিটের চেষ্টার পরে হৃদযন্ত্র সচল হলে নন্দিত এই সংগীতশিল্পীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৩০ এপ্রিল সুবীর নন্দীকে নেয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেদিন থেকেই শুরু হয় তার চিকিৎসা।

বিজ্ঞাপন

গত রোববার (৫ মে) আবারও তার হার্ট অ্যাটাক হয়। তারপর হার্টে পরানো হয় চারটি স্টেন্ট। সোমবার (৬ মে) সকালেও আরেক দফা হার্ট অ্যাটাক হলে তার মাল্টিপাল অরগান অকার্যকর হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।

জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগে ভুগছিলেন। রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানো হতো।

দীর্ঘ চার দশক ধরে রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান করেছেন সুবীর নন্দী। উপহার দিয়েছেন হাজারও জনপ্রিয় গান। তার কণ্ঠে ‘আমার এ দু’টি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছ’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’, ‘কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়’, একটা ছিল সোনার কইন্যা’ গানগুলো চিরসবুজ হয়ে রয়েছে কোটি কোটি শ্রোতার মনের কুঠুরীতে।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্র দিয়ে প্লেব্যাক ক্যারিয়ার শুরু সুবীর নন্দীর। পরে সহস্রাধিক চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’। পরে ‘প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘ভালোবাসা কখনো মরে না’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘গানের সুরে আমায় পাবে’, ‘প্রণামাঞ্জলী’ শিরোনামে তার একক অ্যালবাম বাজারে আসে, শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। তবে সুবীর নন্দীর প্রথম গান রেডিওতে, সিলেট বেতারে ১৯৬৭ সালে। ঢাকা বেতারে তার প্রথম গান ১৯৭০ সালে— ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’।

সুবীর নন্দী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন চার বার। বাচসাস পুরস্কারও পেয়েছেন চার বার। গানে অবদান রাখায় এ বছর তাকে ভূষিত করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে।

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় সুবীর নন্দীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর। বাবা চাকরি করতেন চা বাগানে। ছোটবেলা কেটেছে সেখানেই। ছোটবেলাতেই মা পুতুল রানীর কাছে গানে হাতেখড়ি। পরে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএসও/পিএ

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন