বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে নিরাপত্তার ভয় নেই: জাপানি পর্যটক দল

February 6, 2018 | 11:46 am

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে আসা কমিয়ে দেয় জাপানিরা। এরপরেও যারা এ দেশে আসেন তারাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন আসার আগে। কিন্তু সব শঙ্কা পেছনে ফেলে যে সকল জাপানি বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন তারা খুব খুশি।

সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা এক জাপানি পর্যটক দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আসার আগে নানা রকম ভয় কাজ করলেও আসলে ভীতির কারণ নেই।

জাপানি ওই পর্যটক দল ‘দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে বাংলাদেশে সাত দিন ঘোরার পর সোমবার রাতে গুলশানের একটি হোটেলে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

দ্য বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৩০ জানুয়ারি জাপানের ১৮ জন সিনিয়র নাগরিকের একটি পর্যটক দল বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন। তারা মুন্সীগঞ্জে কৃষক পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেছেন, খুলনার সুন্দরবন দেখেছেন ও মানিকগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন।’

জাপানি দলের সদস্যরা জানান, বাংলাদেশের উদ্যোমী ও স্বপ্নবাজ তরুণদের দেখে আকৃষ্ট হয়েছেন তারা। তারা অভিভূত হয়েছেন। এই সকল স্বপ্নবাজ তরুণদের জাপানে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

১৮ সদস্যর ওই দলের নেতৃত্বে থাকা ইয়াতসুসি আইওয়াসিতার বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলার পর জাপানি অনেকেই মনে করেন, এই দেশে সন্ত্রাসীরা জাপানিদের মেরে ফেলে। আসলে তা সত্য নয়। এ দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। তাই বাংলাদেশে আসা জাপানিদের জন্য এখন অধিক নিরাপদ।’

তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রশংসা করে বলেন, ‘দেশে ফিরে গিয়ে বলব, জাপানিরা বাংলাদেশে বেশি বেশি বেড়াতে যাও। ওই দেশের নৌকার মাঝি থেকে শুরু করে তাঁতী, কামার, মুচি পর্যন্ত সবাই খুব আন্তরিক।’

বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ষাটোর্ধ্ব বয়সী নারী পর্যটক কেইকো আইওয়াসিটা বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলাদেশের তরুণদের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় চোখ। স্বপ্নবাজ চোখগুলো আমাকে আকৃষ্ট করেছে। এ দেশে অনেক কর্মক্ষম লোকজন রয়েছে। অন্যদিকে জাপানের জন্মহার দিন দিন কমছে। তাই কিছু তরুণকে জাপানের ভাষা শিখিয়ে জাপানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ জন্য দুই দেশকে উদ্যোগ নিতে হবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে।’

বিজ্ঞাপন

নাইকো ইশিওয়াকু নামের আরেক পর্যটক বলেন, “বাংলাদেশে আসার আগে বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘ওখানে কী আছে? বাংলাদেশে কী এমন দেখার আছে? বরং ওখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে।’ অথচ আমি বাংলাদেশে না আসলে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হতাম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। অনেক লোক তারপরেও শান্তি আছে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি কিন্তু বাংলাদেশের তরুণদের স্বপ্ন দেখা ভালো  লেগেছে। এই তরুণদের জন্যই বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি এশিয়ার মধ্যে অর্থনীতিতে জায়গা  করে নেবে।”

বাংলাদেশের তরুণদের কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আশা প্রকাশ করলেও সাত দিন বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে বাংলদেশে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা নোংরা আবর্জনা ও পানি সমস্যা নিয়ে আক্ষেপ করেন তারা।

মারিয়া টেরেসা উসুই বলেন, ‘এই দেশে দুইটা বড় সমস্যা হলো অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পানির অব্যবস্থাপনা ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আবর্জনা। তারপরও এ দেশের মানুষের উজ্জ্বল কৌতূহলী চোখ খুব ভাল লেগেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সাথে কাজ করেছি। স্কুলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয় না। আমরা তাদের সাথে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশ নিয়েছি। ছোট থেকেই এসব কাজ শেখা উচিত ছেলে-মেয়েদের।

আসামী ট্যুজি নামের আরেক নারী পর্যটক বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু বয়স্ক লোক আছে যাদের মধ্যে কিছু না পাওয়ার বেদনা রয়েছে। এরপরও তারা সুখী ও সবাইকে নিয়ে দিনশেষে খুশি থাকার চেষ্টা করে।  প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চল আছে যেখানে বাস করা খুব কঠিন। তারপরও লোকজন খুশি মনে বাস করছে। এটা ভালো লেগেছে।’

ইয়াসুকু কিটাতাওয়া নামের একজন বলেন, ‘এ দেশে রাস্তায় আবর্জনা পড়ে থাকে। কিন্তু এটা তো হবার কথা নয়। দেশকে বিশ্বের কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হলে উদ্যোমী তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।’

কেইম নামে আরেক পর্যটক বলেন, ‘অপরিকল্পিত নগরায়ন হয়েছে তাই ট্রাফিক জ্যাম কিছুটা বেশি। আমরা বয়স্করা বাংলাদেশ দেখলাম। জাপানে ফিরে গিয়ে আমার দেশের তরুণদের বলব যাতে জাপানি তরুণরা বাংলাদেশ ঘুরতে আসে। জাপানি তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশীদের উদ্যোগ নিতে হবে। জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসে আকৃষ্ট করার মতো তথ্য নেই। তথ্য-ভাণ্ডারে বেশি বেশি তথ্য রাখতে হবে। সেগুলির প্রচার প্রচারণাও করতে হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন