বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনে দিনে ক্লাস, রাতে ঘুমায় বস্তিবাসী

August 30, 2019 | 9:45 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রূপনগর চলন্তিকা ও ঝিলপাড় বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঘরহারা মানুষদের আশ্রয় দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

কোরবানি ঈদের পর গত ২০ আগস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কথা থাকলেও বস্তিবাসীরা আশ্রয় নেওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। মেয়রের অনুরোধ রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে ২৪ আগস্ট স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেটিও সম্ভব না হওয়ায় একেবারই বিপাকে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে বস্তিবাসীরা বাকি স্কুলগুলো থেকে চলে গেলেও এখনো বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতন থেকে তারা সবাই চলে যাননি!

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরপুর বাংলা স্কুল, ইসলামীয়া স্কুল, বিজিএমইএ স্কুল, পল্লবী শিশু নিকেতন ও আরামবাগ স্কুলে পুরোদমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) থেকে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বস্তিবাসীরাও অন্য কোথাও চলে গেছে। বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনেও ক্লাস শুরু হয়েছে, তবে পুরোদমে নয়। তাছাড়া দিনের বেলা ক্লাস চললেও বস্তিবাসীরা এখনো সেই স্কুলে থাকছেন রাতের বেলা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের অধ্যক্ষ শাহে আলম সারাবাংলাকে বলেন, মানবিক কারণে আমরা বস্তিবাসীদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। এখন দেখছি আমরাই বিপদে পড়ে গেছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। সামনে পিইসি (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিটিং করেছি। সবাই মিলে একমত হয়েছি, দিনের বেলায় নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চলবে। আর রাতের বেলায় বস্তিবাসীরা থাকবেন। বস্তিবাসীরা অন্য কোথাও ঘর ভাড়ার জন্য চেষ্টা করছেন, এরপর তারা চলে গেলে পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে।

বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের এই অধ্যক্ষ বলেন, বুধবার (২৮ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের অনেকেই উপস্থিত হয়েছিল। শিক্ষকরাও এসেছিলেন। কয়েকটা ক্লাস হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ উপস্থিতি ছিল না। অনেকেই উপস্থিত থাকায় শিক্ষার পরিবেশ একেবারই ফেরেনি। আশা করছি, আগামী রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে স্কুল পরিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

রাতে বস্তিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, একেবারই যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, শুধু তাদেরই মানবিক কারণে রাতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা তাদের বলেছি, খুব দ্রুত যেন তারা ঘর ভাড়া নিয়ে চলে যান। তাছাড়া অনেকেই বস্তির আগের জায়গাতে অস্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছেন। তারা সেখানেও থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

স্কুলের পাঠ কার্যক্রম পূর্ণোদ্যমে শুরু করাটা জরুরি উল্লেখ করে শাহে আলম আরও বলেন, শিক্ষার্থী সবারই আছে। বস্তিবাসীরও অনেক ছেলে-মেয়ে এই স্কুলের শিক্ষার্থী। সবার ভালোর জন্যই স্কুল পুরোপুরি খোলাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বস্তিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া অন্য স্কুলগুলো খুলে গেছে। আমরাই শুধু এখনো স্কুল পুরোপুরি খুলতে পারিনি।

বুধবার কথা হয় বঙ্গবন্ধু বিদ্যা নিকেতনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলামের সঙ্গে। সে বলে, সব জায়গায় ক্লাস চলছে, শুধুমাত্র আমরাই স্কুলে যেতে পারছি না। শুনেছি আজ দিনে স্কুলে ক্লাস হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে আমিও স্কুলে যাব। অন্যান্য সহপাঠীরাও স্কুলে আসবে বলে কথা হয়েছে। এরপরও আমাদের পড়াশুনার কিছুটা ক্ষতি তো হয়েছেই।

পূর্ণ মাত্রায় ক্লাস চলা ইসলামীয়া স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামির আল নাহিয়ান জানায়, স্কুল খোলা নিয়ে শিক্ষকরা অভিভাবকদের সঙ্গে মিটিং করেছিলেন। বস্তিবাসীরাও তাদের স্কুল ছেড়ে চলে গেছে। এরপর মঙ্গলবার থেকে তাদের স্কুলে ক্লাস হচ্ছে। নাহিয়ান বলে, ‘স্কুল খোলায় আমরা খুব খুশি। স্কুল খুলতে দেরি হওয়ায় এই কয়দিন পড়ালেখা ঠিকমতো হয়নি। তাই স্কুলে মনে হয় বাড়তি ক্লাস নেবে।’

এর আগে, গত ১৯ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঝিলপাড় বস্তিতে গিয়ে ঘরহারাদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরই বস্তিবাসীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। মেয়রও চেষ্টা করছেন। অল্প সময়ের মধ্যে বস্তিবাসীদের নতুন করে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ সময় পেরিয়ে গেলেও বস্তিবাসীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এরই মধ্যে কেউ কেউ অন্য কোথাও বেশি টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ আবার এখনো সেই পোড়া বস্তিতেই রাত কাটাচ্ছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে খিচুড়ি বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

বস্তিবাসীদের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আগুন সব পুড়ে যাওয়ার পর আমরাই বস্তিবাসীদের পাশে সবার আগে সবকিছু নিয়ে হাজির হয়েছে। অথচ পত্রিকাগুলো আমাদের বিরুদ্ধেই নানা রকম বানোয়াট নিউজ করল। আমরা খুবই মর্মাহত। এরপরও আমরা মানবিক জায়গা থেকে এখনো বস্তিবাসীদের পাশেই রয়েছি। পুড়ে যাওয়া বস্তির খালি জায়গায় ঘর করার অনুমতির প্রক্রিয়া চলছে। কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব ঘর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগে যাতায়াতের জায়গা খুবই সংকীর্ণ ছিল। এখন রাস্তাঘাট একটু প্রশস্ত করা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বুধবার বলেন, বস্তিবাসীদের জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করা হচ্ছে। খাবার দেওয়া হচ্ছে, বাসস্থানের সাময়িক ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাউনিয়াবাদে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থার কাজ এগিয়ে চলেছে। আবার কেউ কেউ আগের জায়গাতেই অস্থায়ী ঘর করে থাকছেন। সেখানেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

গেল ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে গত ১৬ আগস্ট রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায় রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর ঝিলপাড় বস্তি। আগুনে প্রায় ২৫ হাজারের মতো ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ২১ ইউনিটের চেষ্টায় প্রায় তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস ছিল ওই বস্তিতে। স্থানীয়রা বলছেন, ঈদের ছুটির কারণে বস্তিবাসীদের বেশিরভাগই ছিলেন নিজ গ্রামে, কেউ কেউ সেদিনই ফিরছিলেন ঢাকায়। সে কারণেই আগুনে পুড়ে বস্তি ছাই হয়ে গেলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন