বিজ্ঞাপন

‘সরবরাহ লাইনে লিকেজ থেকে নির্গত গ্যাস জমে বিস্ফোরণ’

November 24, 2019 | 7:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটায় বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সরবরাহ লাইনে লিকেজ বা ফুটোর কারণে গ্যাস আবদ্ধ হয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। আর গ্যাস আবদ্ধ হয়ে যাবার জন্য বাড়ির মালিকের নকশা বর্হিভূতভাবে একটি বদ্ধ বারান্দা তৈরিকে দায়ী করেছে কমিটি।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের সামনে এসব বিষয় তুলে ধরেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফুল ইসলাম। এসময় কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন।

শরীফুল বলেন, ‘মূলত গ্যাসের লাইনে লিকেজ ছিল। সেই লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। মূলত গ্যাস লাইনে লিকেজের কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছে।’

‘আমরা গ্যাসের রাইজারটি পরীক্ষা করেছি। সেটিতে অনেক পুরনো ট্যাপ মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। রাইজারের ওপরের আবরণটিও ছিল অনেক পাতলা। রাইজারটির ভেতরের অংশ ভাঙ্গা অবস্থায় পাওয়া গেছে। রাইজার থেকে গ্যাসের যে সার্ভিস লাইনটি ঘরের ভেতরে গেছে, সেটাতে মূলত লিকেজ ছিল। সেখান থেকেই গ্যাস বের হয়।’

বিজ্ঞাপন

বাড়ির মালিককে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের রাইজারটি আগে মুক্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিক নকশা অমান্য করে সীমানা দেওয়ালের সঙ্গে লাগোয়া ২ থেকে আড়াই ফুট উঁচু ছাদ দিয়ে একটি বারান্দা তৈরি করেন। ঘরটিতে সামনে ২টি কক্ষ এবং পেছনে আরেকটি কক্ষ ছিল। এরপর ২০ ফুট বাই ৫ ফুট একটি শূন্যস্থান ছিল যেখানে রাইজারটি ছিল। বারান্দা তৈরির পর সেটি আবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাইজারটি এবং সংলগ্ন গ্যাসের লাইনের সঙ্গে আলো-বাতাসের সংযোগ ছিল না। বদ্ধ অবস্থায় নির্গত গ্যাস বের হতে না পেরে সেখানে জমে যায়। সেই গ্যাস যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়েছে, এর দুই নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে এবং সেখানে জমে যায়।’

‘আমরা ওই ঘরের বাসিন্দা যিনি আহত হয়েছেন সন্ধ্যা রাণী, তার সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, দুই নম্বর কক্ষে অর্থাৎ পূজার ঘরে ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়েছে।’ বলেন শরীফুল

বিজ্ঞাপন

বাড়ির মালিকদের বিষয়ে তিনি আরও জানান, প্রথমে পাঁচতলা ভবনটির মালিক ছিলেন শশাঙ্ক বিশ্বাস। তিনি মারা যাবার পর ৪ ছেলে বাড়ির মালিক হন। ১৯৯৭ সালে তারা বাড়িটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করেন। তিনিও মারা গেলে এখন তার দুই ছেলে অমল বড়ুয়া ও টিটু বড়ুয়া বাড়ির মালিক হিসেবে আছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্য কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নকশা অমান্য করে ভবনটির বর্ধিত অংশ করা হয়েছিল। এর ফলে গ্যাস লাইনে যে সমস্যা হতে পারে, সেটা ভবন মালিকদের বিবেচনায় ছিল না। তারা কখনো সেগুলো পরীক্ষাও করেননি কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও জানাননি। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে নিহত একজনের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আমরা এই রিপোর্টটিকে গুরুত্ব সহকারে নেব। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করব।’

প্রতিবেদনে পাঁচ দফা সুপারিশও করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- গ্যাস সংক্রান্ত সমস্যার জন্য হটলাইন চালু করা, ভবন মালিকদের বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করা, সিডিএ’র নকশা বহির্ভূত ভবন দ্রুত অপসারণ, কেজিডিসিএল’র গ্যাস লাইন ও রাইজার নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং গ্যাস লাইন নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গ্যাসের লাইনে লিকেজ পেলেও কেজিডিসিএল এর আগে তাদের তদন্তে গ্যাস লাইনে কোনো ত্রুটি না পাবার কথা জানিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

গত ১৭ নভেম্বর সকালে নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডে বড়ুয়া ভবন নামে একটি পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণে দেওয়াল বিধ্বস্ত হয়। আশপাশের আরও কয়েকটি বাসা এবং দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে নারী ও কিশোরসহ সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন কমপক্ষে ১০ জন।

সকালে দুর্ঘটনার পর সন্ধ্যায় কেজিডিসিএল’র গঠিত চার সদস্যের কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভিসেস) প্রকৌশলী সারোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, তদন্তে গ্যাস লাইনে কোনো ত্রুটি তারা পাননি। বরং সেফটিক ট্যাংকের গ্যাস নির্গত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করেছিলেন।

বিস্ফোরণ তদন্তে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছিল। পরে বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দু’জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন