বিজ্ঞাপন

পুলিশ হত্যার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে নব্য জেএমবি, গ্রেফতার ৩

May 4, 2020 | 4:42 pm

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। তিনজনের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং আরেকজন বেসরকারি একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সদস্য। তিন জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ট্রাফিক বক্সে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ইম্প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। চট্টগ্রামে প্রাথমিকভাবে সংগঠিত হওয়া নব্য জেএমবির মূল টার্গেট হচ্ছে পুলিশ।

রোববার (০৩ মে) বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বাকলিয়া থানার ডিসি রোডে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হাসান মো. শওকত আলী।

গ্রেফতার তিনজন হল- মো. সাইফুল্লাহ (২৪), মো. এমরান (২৫) ও মো. আবু ছালেহ (২৫)।

বিজ্ঞাপন

কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের ডিসি হাসান মো. শওকত আলী সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গ্রেফতার সাইফুল্লাহ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ ঢেমশা গ্রামের মো. ইছহাক মিয়ার ছেলে। সে নগরীর চকবাজারে নুরা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি কম্পিউটারের দোকানে চাকরি করে। এমরান সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ মরফলা গ্রামের মনির আহমেদের ছেলে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্র। আবু ছালেহ সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর ঢেমশা মাইজপাড়া গ্রামের মহরম আলীর ছেলে। সে ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেক্সটাইল বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। এরা হলেন, সার্জেন্ট আরাফাত হোসেন ও এএসআই মো. আতাউদ্দিন। এছাড়া ১০ বছরের এক শিশু এবং আরও দুজন যুবক আহত হন। ঘটনার পরদিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম নজরদারি সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ জানিয়েছিল- জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

তবে তিনজনকে গ্রেফতারের পর কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ বলছে, এই হামলার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন সবই নব্য জেএমবির। এর সঙ্গে আইএস-এর সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) পলাশ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে জানান, পলাতক সেলিম, জহির ও আকিবের মাধ্যমে এমরান ও সাইফুল্লাহ নব্য জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আর আবু ছালেহকে সংগঠনে আনে সাইফুল্লাহ।

ঘটনার দিন সকালে সেলিম ও সাদেকের সঙ্গে আরও তিনজন নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদের আপন নিবাসে এমরানের বাসায় আসে। তারা সঙ্গে করে হোমমেড আইইডি নিয়ে যায়। সেলিম কিভাবে আইইডি’র বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে সেটি শিখিয়ে দেয় এমরানকে। জুমার নামাজের পর তারা নগরীর বিভিন্ন এলাকা রেকি করে দুই নম্বর গেইটে ট্রাফিক বক্স বিস্ফোরণের জন্য নির্ধারণ করে।

বিকেলে নব্য জেএমবির সদস্য পলাতক আবু ছাদেক ট্রাফিক বক্সের ভেতরে টেবিলের নিচে আইইডি রেখে আসে। এমরানের হাতে রিমোট কন্ট্রোলার দিয়ে তাকে আইইডি বিস্ফোরণের নির্দেশ দিয়েছিল সেলিম। কিন্তু এমরান বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে সেটি নাসিরাবাদের আপন নিবাসের সামনে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। পরে সাইফুল্লাহ গিয়ে এমরানের দেখানোমতে ডাস্টবিন থেকে রিমোট কন্ট্রোলার উদ্ধার করে। সাইফুল্লাহ ট্রাফিক বক্সের দক্ষিণে যাত্রী ছাউনির পাশে দাঁড়িয়ে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

এ ঘটনায় ট্রাফিক পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক মো. আফতাব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নব্য জেএমবির প্রায় ১০ জন সদস্যের নাম-পরিচয় আমরা পেয়েছি। ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের সবার সম্পৃক্ততা ছিল।’

বিজ্ঞাপন

এডিসি পলাশ কান্তি নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে নব্য জেএমবির সদস্যরা সংগঠিত হতে শুরু করেছিল। পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ ছিল তাদের প্রথম হামলা। এরপর করোনা পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। না হলে হয়তো তাদের আরও কোনো পরিকল্পনা ছিল। সব বিষয় এখন আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বের করব। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিনজন জানিয়েছে, স্বপ্রণোদিতভাবে সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়ন এবং শরিয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা তাদের লক্ষ্য। দেশের প্রচলিত আই তাগুতের আইন এবং বাংলাদেশ পুলিশকে তাগুত বলে তারা মনে করে। এজন্য পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে বোমা হামলার মাধ্যমে তাদের হত্যার পরিকল্পনা আছে নব্য জেএমবির।’

তিনি জানান, অনলাইনে পাওয়া অপ্রচলিত মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে তারা সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কার্যক্রম চালায়। সেখানে ভিডিও আদানপ্রদানের মাধ্যমে তারা স্থানীয়ভাবে মালামাল সংগ্রহ করে বোমা ও আইইডি তৈরি করে। গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে আইইডি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক আফতাব হোসেন সারাবাংলাকে জানান, বিস্ফোরণের পর নব্য জেএমবির সব সদস্য নাসিরাবাদের আপন নিবাসের গিরি ভবনে এমরানের বাসায় মিলিত হয়। পরে এমরান ছাড়া সবাই সেখান থেকে চলে যায়। কয়েকদিন পর সাইফুল্লাহ পশ্চিম বাকলিয়ার ডিসি রোডে গণি কলোনির মুখে লতিফ বিল্ডিংয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয়। নভেল করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের জন্য সাধারণ ছুটি শুরু হলে সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু জহির তাদের ফোন করে এলাকা ছেড়ে যেতে বলে। এমরান ও আবু ছালেহ সাইফুল্লাহর বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জবানবন্দি গ্রহণের জন্য তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক আফতাব হোসেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন