বিজ্ঞাপন

ঈদের আনন্দ নেই সিরাজগঞ্জের বানভাসিদের

July 24, 2020 | 10:41 am

রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সিরাজগঞ্জ: আর কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা। প্রতিবছর এইসময় মানুষ কোরবানির প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। উৎসবের কোন ‘আমেজ’ নেই সিরাজগঞ্জের বানভাসি মানুষের। জেলার পাঁচটি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ আরও বেশি। ভিজিএফ, ভিজিডি ও বয়স্ক ভাতার অনুদান অনেকের ‘সম্বল’ হলেও এই ভাতা ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে না। তাই ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বানভাসিদের।

বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে দেড় লক্ষাধিক মানুষ। চরে বসবাসকারী প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের সবাই বেঁচে আছে সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিভিন্ন এনজিও’র দেওয়া ত্রাণের উপর নির্ভর করে।

বন্যায় বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন এমন একজন ব্যক্তি বলেন,  ‘দু’বেলা ভাতই জোগাড় করতে পারি না, সেখানে ঈদের আনন্দ করবো কীভাবে। বাড়ি মেরামত নিয়েও চিন্তায় আছি। কাজ না থাকায় হাতে টাকা নেই। এই বন্যা আমাদের সর্বসান্ত করেছে। কোরবানি তো দূরের কথা, ঈদের দিন পরিবারের সবার মুখে একটু সেমাই তুলে দিতে পারবো কিনা জানিনা।’

শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, ‘চরের অভাবী মানুষের কাছে ঈদ যেন শুধুই স্বপ্ন। ভয়াবহ বন্যা তাদের ঘরবাড়ি, ফসল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কৈজুরি ইউনিয়নে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। মৌসুমী ক্ষেতেও ভালো ফসল হয়। এলাকার মানুষ স্বচ্ছল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এ বছর বন্যার পানি ওঠায় মানুষের ঘরে রাখা ধান-চালও নষ্ট হয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার বলেন, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উঁচু স্থান ও স্কুল ঘরে আশ্রয় নেয়া বানভাসি মানুষ এবং বন্যা কবলিত এলাকার বসতবাড়িতে থাকা পানিবন্দী মানুষের এবার ঈদের আনন্দ নেই। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানি কিছুটা কমলেও ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষ।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যায় সিরাজগঞ্জে পাঁচ উপজেলার ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং পাঁচটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২২০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১০৬০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬৮৪ পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুল হক জানান, সিরাজগঞ্জে চরে বসবাসকারী মানুষের একমাত্র সম্বল চাষাবাদ। বন্যার কারণে চরে চাষাবাদ হচ্ছে না। বন্যার কারণে এবার মানুষের মনে নেই ঈদের আনন্দ। সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা কবলিত পাঁচটি উপজেলার ১১ হাজার ১৭ হেক্টর জমির পাট, তিল ও আখ পানিতে ডুবে গেছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিসি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন